রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার শ্যামলী পিসিকালচার এলাকায় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে মো. মোক্তার হোসেন (৬০) নামে এক রিকশাচালকের মৃত্যুর ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তাররা হলেন- মানিক (৫০), ইলিয়াস কাঞ্চন (৩৭) ও দেলোয়ার (৩০)।

শনিবার (১২ নভেম্বর) সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) এ কে এম হাফিজ আক্তার।
 
তিনি বলেন, ২ নভেম্বর রাত আনুমানিক ১০টার সময় মোহাম্মদপুর থানাধীন শ্যামলী পিসিকালচার এলাকার হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াক্ফ) বাংলাদেশ নামক চিকিৎসা ও বিক্রয় কেন্দ্রের সামনে ফুটপাতের ওপর অচেতন অবস্থায় মোক্তার হোসেনকে পড়ে থাকতে দেখেন পথচারীরা। পরে তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান বিষ বা চেতনানাশক জাতীয় কিছু খাওয়ানোর ফলে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

এই ঘটনায় নিহতের ছেলে মো. হাবিব হোসেন বাদী হয়ে গত ৯ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা (মামলা নং-৭০) দায়ের করেন। পরে ঘটনাটি তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করে। এরপর ঘটনাস্থল ও এর আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় জড়িত এক আসামির অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে অভিযান পরিচালনা করে মানিক নামে এক আসামিকে মোহাম্মদপুর থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় মানিকের হেফাজত থেকে ঘটনায় ব্যবহৃত একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং ভিকটিমের চুরি যাওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। মানিকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনায় জড়িত অন্য আসামি দেলোয়ার ও ইলিয়াস কাঞ্চনকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিদের দেওয়া তথ্যে ভিকটিমের চুরি যাওয়া ব্যাটারিচালিত রিকশাটি কামরাঙ্গীরচর থানা এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় এবং চোরাইমাল সন্দেহে আরো ১৮টি অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি আসামি দেলোয়ারের কাছ থেকে ২ পাতা চেতনানাশক ট্যাবলেট এবং ইলিয়াস কাঞ্চনের কাছ থেকে ৪ পাতা চেতনানাশক ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।

হাফিজ আক্তার আরো বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয়। তারা জানায় তাদের একজন সর্দার রয়েছে যার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে তারা ব্যাটারিচালিত রিকশা চুরির কাজে জড়িত। যার নেতৃত্বে ১০/১২টিম ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় রিকশা চুরি করে। প্রতি টিমে ৩/৪ জন সদস্য সিএনজিতে করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের টার্গেট করে। এরপর রিকশা ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ানোর এক পর্যায়ে চালকের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে তাকে নির্জন কোনো স্থানে নিয়ে যায়। আলাপ আলোচনার এক পর্যায়ে চালককে জুস/কোমল পানীয়ের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করিয়ে অচেতন করে রিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়। তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে রিকশা চুরি করে সেই রিকশা কামরাঙ্গীরচর এলাকায় বিক্রি করে দেয়। প্রতিটি ব্যাটারিচালিত রিকশা ১৫-২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। তারা দুই শতাধিক রিকশা চুরি করেছে বলে স্বীকার করেছে।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক, সহকারী পুলিশ কমিশনার দেবাশীষ, মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল কালাম আজাদ, পরিদর্শক (অপারেশন) মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন।

এসএএ/জেডএস