পাচার করা অর্থ ফেরাতে ৮ দেশের সঙ্গে চুক্তি চায় দুদক
বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে পারস্পরিক আইনি সহায়তার জন্য ৮টি দেশের সঙ্গে চুক্তি করার উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটি আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে খসড়া চুক্তি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে দাখিল করবে।
বিজ্ঞাপন
যেসব দেশের সঙ্গে দুদক চুক্তি করতে চায় সেগুলো হলো, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও থাইল্যান্ড।
আরও পড়ুন : অর্থপাচারকারী ‘স্বনামধন্য’ অনেকের তথ্য আছে, প্রকাশ করা হবে
মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
দুদক সচিব বলেন, এ আট দেশ থেকে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ, রেকর্ডপত্র সংগ্রহ, পাচার করা অর্থ পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি (মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স ট্রিটি) করার জন্য গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর দুদক থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অনুরোধ করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরিত পত্রের ভিত্তিতে বিএফআইইউ থেকে একটি জবাবসহ অনুরোধপত্র আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে প্রেরণ করা হয়। এরপর গত ১ নভেম্বর এ বিষয়ে একটি সভা হয়। যেখানে দুদকসহ অন্যান্য দপ্তর অংশগ্রহণ করে।
তিনি আরও বলেন, ওই সভায় চুক্তির খসড়া তৈরির করতে বিএফআইইউয়ের নেতৃত্বে এবং অন্যান্য সংস্থার কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কমিটি আগামী ৩ সপ্তাহের মধ্যে একটি খসড়া চুক্তি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে দাখিল করবে। পরবর্তীতে ওয়ার্কিং কমিটি/ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেশন কমিটির সভায় উপস্থাপন করার বিষয়ে আলোচনা হয় ।
চুক্তি হলে পাচার করা অর্থ ফেরার প্রক্রিয়া সহজ হবে কী-না এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, যদি মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিটেন্স ট্রিটির আওতায় ওই দেশগুলো একমত হয়, তাহলে সাক্ষ্য-প্রমাণ ও রেকর্ডপত্র সংগ্রহের প্রক্রিয়া সহজ হবে। এর মাধ্যমে পাচার করা অর্থ ফেরানোর পথ আগের তুলনায় সহজ হবে।
এর আগে গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছিল, বিদেশে অর্থ ও সম্পদ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান ও মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে ইউনাইটেড নেশনস এগাইনেস্ট করাপশনের (আনকাক) আওতাধীন কেস টু কেস ভিত্তিতে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এমএলএআর প্রেরণের মাধ্যমে বিদেশ থেকে তথ্য ও রেকর্ডপত্র সংগ্রহের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। দুদকের অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায়, বিভিন্ন দেশে প্রেরিত এমএলএআরের বিপরীতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র প্রাপ্তির বিষয়টি অনিশ্চিত অবস্থায় ঝুলে থাকে। এমএলএআরের বিষয় কোনো কোনো রাষ্ট্র প্রাথমিক রেসপন্স করার বিষয়েও অনীহা দেখায়। আবার প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র প্রয়োজনীয় আলামতের তুলনায় অপ্রতুল হয়।
এসব কারণে অধিকাংশ অভিযোগের বিপরীতে দ্রুত এবং কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন করা সম্ভব হয় না। যেসব ক্ষেত্রে মামলা রুজু করা হয় তা প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় আলামতের অভাবের কারণে মামলার তদন্ত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে দীর্ঘ বিলম্ব ঘটে থাকে। ফলে বিদেশে পাচারকৃত অর্থ/সম্পদ পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। আশা করা যায়, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এ সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করা হলে এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা অনেকাংশে দূর হবে।
উল্লেখ্য, আনকাক-এর ৪৬ নং অনুচ্ছেদের ৩০ নং দফায় রাষ্ট্রপক্ষসমূহ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পারস্পরিক আইনি সহায়তার বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক চুক্তি বা ব্যবস্থার সম্ভাবনা বিবেচনা করবে মর্মে বর্ণিত আছে।
আরএম/এসকেডি