প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ৩ বিলিয়নেরও বেশি ভোক্তার একটি বড় বাজারের কেন্দ্র হতে পারে।

তিনি বলেন, এর নিজস্ব বাজার রয়েছে ১৬ কোটি ৫০ লাখ মানুষের। এর পূর্বে আধা বিলিয়ন এবং উত্তরে ১ বিলিয়নের বেশি বাজার রয়েছে। এছাড়া, পশ্চিমে ১ বিলিয়ন ভোক্তার বাজার রয়েছে।

রোববার শেষ হওয়া তৃতীয় দুই দিনের ওয়ার্ল্ড মার্কেটিং সামিট ২০২২-এ প্রধানমন্ত্রীর একটি পূর্ব-ধারণকৃত ভাষণ প্রচারিত হয়। ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য একটি আদর্শ স্থান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি, যেখানে সমস্ত সুযোগ সুবিধা রয়েছে। বিশ্বের অনেক বিখ্যাত কোম্পানি এই অঞ্চলগুলোতে তাদের কারখানা স্থাপন করছে।

তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া, বাংলাদেশ দেশের অভ্যন্তরে এবং আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ উন্নত করছে। এই বছরের জুনে আমরা দেশের দীর্ঘতম সেতু ‘পদ্মা সেতু’ উদ্বোধন করেছি, যা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ১৯টি জেলাকে সরাসরি রাজধানী ঢাকা এবং দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিপণন এমন একটি শৃঙ্খলা যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং পণ্য সহজলভ্য করার ক্ষেত্রে বিশ্ব পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, শীর্ষ সম্মেলনের আলোচনা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত বিশ্ব গঠনে সহায়তা করবে।

তিনি ওয়ার্ল্ড মার্কেটিং সামিট ২০২২-এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ফিলিপ কোটলারকে সামিটে তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ধন্যবাদ জানান।

শেখ হাসিনা স্মরণ করে বলেন, তিনি ২০১২ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্ব বিপণন সামিটের উদ্বোধন করেছিলেন।

তিনি বলেন, আমি আশা করি, ৩য় শীর্ষ সম্মেলন কোভিড -১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞার পরে বিপণনের ক্ষেত্রে চলমান চ্যালেঞ্জগুলোর ওপর দৃষ্টিপাত করবে।

শেখ হাসিনা বলেন, এই বছরের শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘স্থায়িত্বের লক্ষ্য পূরণে বিপণনে পরিবর্তন’ আমি মনে করি  যথাযথভাবে নির্বাচিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বজুড়ে পণ্যের বাজারকে অস্থির করে তুলেছে। খাদ্য এবং তেলের দাম বেড়ে কল্পনার বাইরে চলে গেছে এবং সরবরাহ চেইন ব্যাহত হয়েছে। এর ফলে আমাদের মতো আমদানিনির্ভর দেশগুলো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা মেটাতে কঠিন কাজের সম্মুখীন হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর পাশাপাশি মুদ্রার মান পড়ে যাওয়া, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক খাতে আকর্ষণীয় অগ্রগতি করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। শতভাগ পরিবারকে বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। মাথাপিছু আয় ২০০৬ সালে মাত্র ৫৪০ মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ৪১ শতাংশের বেশির পর্যায় থেকে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ এলডিসি স্ট্যাটাস থেকে স্নাতক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে বাংলাদেশ কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলা করেছে। 

তিনি আরও বলেন, নিক্কেই কোভিড-১৯ পুনরুদ্ধার সূচকে ১২১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৫ম স্থানে রয়েছে এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দেশটি শীর্ষস্থান অর্জন করেছে। প্রায় সব যোগ্য ব্যক্তিকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। 

এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানীয় দেশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু, কয়েক বছর ধরে আমরা যা অর্জন করেছি, তা মহামারি এবং যুদ্ধের প্রভাব তা গ্রাস করে ফেলছে।

মানবতাকে বিপর্যয়কর পরিণতি থেকে রক্ষার স্বার্থে বিশ্বকে অবিলম্বে চলমান সংকটের সমাধান করতে হবে বলে মত দেন তিনি।

আরএইচ