দেয়ালে সচেতনতা, মাঠে প্রতারণা
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) মিরপুর কার্যালয়। প্রতিটি ভবনের দেয়ালে দেয়ালে লেখা, ‘দালালমুক্ত সেবা নিন’, ‘দালাল টাউট ও প্রতারক হইতে সাবধান থাকুন’ ইত্যাদি সচেতনতামূলক বাণী।
কিন্তু দেয়ালে লেখা বাণী আর বাস্তবের মাঝে কতটা তফাৎ, এর প্রমাণ মিলল সরেজমিনে। বিআরটিএ-এর আনাচে-কানাচে দালালের আনাগোনা। কোনো কাজই দালাল ছাড়া হয় না বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। বিশেষ করে ড্রাইভিং লাইন্সেস পেতে দালালের দ্বারস্থ না হলে এক বছরেও মেলে না এ সোনার হরিণ।
বিজ্ঞাপন
রাজধানীর মিরপুরে বিআরটিএ কার্যালয়ে সরেজমিনে ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। কয়েকজন ভুক্তভোগী ঢাকা পোস্ট-কে জানান, এক বছর ঘুরেও লাইসেন্স না পেয়ে দালালের শরণাপন্ন হচ্ছেন। এতে দুই মাসের মধ্যে লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছেন অনেকে। অন্যদিকে, দালাল না ধরায় কেউ কেউ আবেদনের ৮-৯ মাস পরও পরীক্ষার জন্য ডাক পাচ্ছেন না।
মো. শামীম (ছদ্মনাম) দুবাই যাবেন। দ্রুত লাইসেন্স করতে মিরপুর বিআরটিএ-তে এসেছেন। গত বছর জুন মাসে আবেদন করলেও এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তার পরীক্ষার ডাক আসেনি। বাধ্য হয়ে লাইসেন্সের খোঁজ নিতে এসে মিরপুর বিআরটিএ-তে এক দালালের সঙ্গে কথা হয়।
সে দুই মাসের মধ্যে লাইসেন্স করিয়ে দেবে এমন শর্তে আট হাজার টাকায় চুক্তি করে শামীমের সঙ্গে। চুক্তি অনুযায়ী অর্ধেক টাকা দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই পরীক্ষার তারিখ পান শামীম। ঠিক এক মাস পরেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট (আঙুলের ছাপ) দিতে এসেছেন শামীম। অনেক খুশি তিনি। কারণ ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়ার পর তার আর কোনো প্রক্রিয়া বাকি নেই।
তিনি ঢাকা পোস্ট-কে জানান, সোজা পথে যে কাজ সাত মাসে হয়নি, দালাল ধরায় এক মাসের মধ্যে তা হয়েছে।
মিরপুর বিআরটিএ-তে লাইসেন্সের আবেদন জমা, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ডেলিভারি নিতে আসা বেশিরভাগ মানুষের দাবি, এখানে দালাল ছাড়া কোনো কাজ হয় না। বিশেষ করে লাইসেন্স পেতে হলে দালাল লাগবেই।
লাইসেন্সের ডেলিভারি নিতে এসেছেন আশিক (ছদ্মনাম)। লাইনে দাঁড়িয়ে তিনি ঢাকা পোস্ট-কে বলেন, ‘গত ২০ ফেব্রুয়ারি ডেলিভারির তারিখ ছিল। কিন্তু আসতে পারিনি।’
সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে জানতে চাইলাম, ‘আমি লাইসেন্স করলে কত দিন লাগবে?’ প্রশ্ন শুনে হেসে আশিক বলেন, ‘ভাই এভাবে হাঁটলে লাইসেন্স পাবেন না। আমি শুধু পাসপোর্ট দিয়ে লাইসেন্স করেছি। যেটা সম্ভব ছিল না। কিন্তু দালাল সব করে দিয়েছে। কারণ লাইসেন্স পাওয়ার যে বয়স প্রয়োজন, তা আমার ছিল না। তারপরও দালাল ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে সেখানে বয়স বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই আজ আমি লাইসেন্স পেতে যাচ্ছি। এজন্য আমার টাকাও বেশি লেগেছে। অন্যদের ৮-৯ হাজার লাগলেও আমার লেগেছে ১৩ হাজার।’
দালাল কি আপনার পরিচিত? তিনি বলেন, ‘না আমার মামার পরিচিত এক দালালের মাধ্যমে কাজ করেছি। কাজটা খুব জেনুইন হয়েছে। আমার এখন দুইটা জাতীয় পরিচয়পত্র।’
এতে সমস্যা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুলিশ আমার জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট দেখবে না। আমার লাইসেন্স দেখবে।’
প্রয়োজনে মামার মাধ্যমে ওই দালালের সঙ্গে এই প্রতিবেদককে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কথাও বলেন আশিক।
বিআরটিএ-তে দায়িত্ব পালনরত আনসার সদস্যরা জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিআরটিএ-তে বিশেষ সেবা সপ্তাহ চলছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত এ বিশেষ সেবা উপলক্ষে দালালমুক্ত বিআরটিএ ঘোষণা করা হলেও নানা কৌশলে দালালরা ভেতরে ঢুকেছেন। তবে মন্ত্রণালয় ও বিআরটিএ-এর লোকজন নিয়মিত টহল দেওয়া শুরু করলেই তারা গা ঢাকা দিয়ে দেন।
আরও পড়ুন: ড্রাইভিং লাইসেন্স করবেন যেভাবে
এনএম/এফআর/এমএমজে