২০১৩-’১৫ সালের পেট্রোল বোমা হামলায় কেউ হারিয়েছেন স্বামী, কেউ সন্তান। আবার কেউ হামলার শিকার হয়ে হয়েছেন নিঃস্ব। কেউবা হামলার শিকার হয়ে হারিয়েছেন চাকরিও।

রোববার (৬ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় জাদুঘরের মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদ : বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের খণ্ডচিত্র’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে পেট্রোল বোমা হামলায় আহত ও নিহতদের স্বজনরা তাদের এমনই দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরেন।

বিএনপি-জামায়াতের পেট্রোল বোমা, অগ্নিসন্ত্রাসে হামলায় শিকার হয়ে আহত হন সালাউদ্দিন ভূইয়া। সে দিনের স্মৃতি স্মরণ করে তিনি বলেন, আমি ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে একটি দোকানে কাজ করতাম। কাজ শেষে বাসা যাওয়ার জন্য রওয়ানা দেই। সেদিন আমাদের গাড়ি যাত্রাবাড়ীতে পৌঁছালে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। সেই পেট্রোল বোমা হামলায় আমার মুখ ও হাত পুড়ে যায়।

সালাউদ্দিন বলেন, আমি খুব সুন্দর ছিলাম, যেখানে চাকরি জন্য যেতাম চাকরি হতো। এখন আমাকে দেখে কেউ কাজ দেয় না। আমার কাজ করার শক্তি আছে, কিন্তু কেউ কাজ দেয় না। আমার দুইটা ছেলে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে, তাদের একটা কিছুর ব্যবস্থা করুন। আমি আপনার সঙ্গে থাকতে চাই। আমাকে একটু কাজ দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।

পুলিশ কনস্টেবল জাকারিয়াকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তার জাকারিয়ার স্ত্রী মায়া বেগম বলেন, আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আমার দুইটা ছেলে আছে, তাদের একটা ব্যবস্থা করবেন। আমার সুস্থতার ব্যবস্থা করবেন।

আরও পড়ুন : ডিসেম্বরে রাজপথে বিএনপিকে কোনো ছাড় নয় : কাদের

ফটো সাংবাদিক আবু সাঈদ তামান্না সে দিনের স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, সে দিন আমি মৃত্যুর মুখে পড়ে যাই। আমার কাছে একটা ফোন আসে যে তারা পেট্রোল বোমা বিতরণ করছে। তারা আমার উপস্থিতি টের পেয়ে তাড়া করে ছুরিকাঘাত করে। আমরা কাজের সুন্দর পরিবেশ চাই। বিএনপি-জামায়াত এখন আবার শুরু করেছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

ট্রাক চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ দিতে পারি না, গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গিয়েছিলাম। সাতক্ষীরা যাওয়ার পথে আমার গাড়িতে পেট্রোল বোমা হামলা করা হয়। জামায়াত-বিএনপির বিচার চাই। মা-বোনদের যারা জ্বালাই পোড়াইছে তাদের বিচার চাই।

সেই সময়ে সন্তানকে হারিয়েছেন রমজান আলী। তিনি বলেন, আমার ছেলে কি অপরাধ করেছিল। আমার ছেলে শরীয়তপুর থেকে ঢাকা আসে। আমার চোখের সামনেই ছেলেকে জ্বালিয়ে মেরে ফেলা হয়। আমি তো রাজনীতি করি না, আমার ছেলে তো রাজনীতি করেনি। বিএনপি-জামায়াত আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। প্রধানমন্ত্রী কাছে আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।

স্বামীহারা নাসরিন আরা বলেন, আমি স্বামী বিজিবি সদস্য ছিলেন। তাকে কর্মরত অবস্থায় বিএনপি-জামায়াতের লোকজন পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমার সন্তানেরা তাদের বাবা হারানোর যন্ত্রণা ভুলা যাবে না। আমার স্বামী কোনো রাজনীতি করেনি। সে তো দেশের কাজে নিয়োজিত ছিল। আমি চাই আমার স্বামীর মতো আর কাউকে যেন সন্ত্রাসীরা হত্যা করতে না পারে। আমি বেঁচে থাকতেই আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।

স্বামীহারা বিনা সুলতানা বলেন, ২০১৩ সালে ৪ নভেম্বর পেট্রোল বোমা হামলায় আমার স্বামী মারা যায়। আমার দুইটা সন্তান আছে। আমার সন্তানদের বাঁচাতে গার্মেন্টে কাজ শুরু করি। আমি ১৪-১৫ ঘণ্টা ডিউটি করে সন্তানদের বাঁচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমার সন্তানরা কি অপরাধ করেছে? আমার সন্তানরা স্কুলে গিয়েছিল, বাড়িতে ফেরার আগে আমার স্বামীর লাশ চলে আসে।

তিনি বলেন, গার্মেন্ট মালিকরা আমাকে কাজের সুযোগ করে দিয়েছে। যারা আমার মতো অসহায়কে কাজের সুযোগ দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার মনোবল দিয়ে আমার সন্তানদের মানুষ করব। যারা এই বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য খোদেজা নাসরিন আক্তার বলেন, ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর সন্ধ্যা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর মুহূর্ত। আমি হাইকোর্ট থেকে বাসায় যাওয়ার সময় বাসটি যখন শাহবাগের শিশুপার্ক এলাকায় এলো তখন বিএনপি-জামায়াতের লোকজন পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। আমার হাত মাকড়সার জালের মতো পুড়ে যায়। আমাকে একজন রিকশাচালক ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যান। আমি এখনও সেই যন্ত্রণা নিয়ে চলছি। আমাদের সবার আকুতি, জামায়াত-বিএনপির নৈরাজ্যের বিচার চাই। প্রয়োজনে আমি সাক্ষী দেব।

এসএসএইচ