অভিজাত পাড়ায় হোম সার্ভিসে নিষিদ্ধ ‘আইস’ বিক্রি করেন তিনি
অভিজাত এলাকার মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য চন্দন রায়কে (২৬) ৫০০ গ্রাম আইসসহ (ক্রিস্টাল মেথ) আটক করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)।
মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) রাতে অভিযান পরিচালনা করে ওয়ারী থানার হাটখোলা রোড এলাকার গ্রিন জোন টাওয়ার থেকে তাকে আটক করে ডিএনসির লালবাগ সার্কেলের একটি দল।
বিজ্ঞাপন
আটক চন্দন রায় মুন্সিগঞ্জ টংগীবাড়ির কুকুরাদী মাস্টারবাড়ির জিতেন রায়ের ছেলে। তিনি ওয়ারীর হাটখোলা রোডের ১/১, গ্রিন জোন টাওয়ারে বসবাস করতেন।
ডিএনসির দাবি, চন্দন মালয়েশিয়া থেকে সোনা ব্যবসার আড়ালে কৌশলে দেশে আইস নিয়ে আসতো। ২০২০ সালের নভেম্বরে ডিবি রমনা জোনের সদস্যদের হাতে ৬০০ গ্রাম আইস ও পাঁচ সহযোগীসহ গ্রেপ্তারও হয়েছিল। পরে জামিনে বেরিয়ে পুনরায় একই ব্যবসায় জড়ায়। চন্দন এতোদিন অভিজাত এলাকায় ‘পার্সেল হোম সার্ভিসের মাধ্যমে উচ্চমূল্যে আইস বিক্রি করে আসছিল।
বুধবার (২ নভেম্বর) দুপুরে গেন্ডারিয়ায় ঢাকা মেট্রো কার্যালয়ে (দক্ষিণ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএনসির বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্লাহ কাজল।
তিনি বলেন, ঢাকা মেট্রো কার্যালয় (দক্ষিণ) সম্প্রতি অভিজাত এলাকায় ব্যবহৃত বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের উৎস অনুসন্ধানে তৎপর হয়। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ইতোপূর্বে এলএসডি-আইসসহ বিভিন্ন মাদক জব্দ করা হয়েছে।
গত অক্টোবরে এমন একটি সিন্ডিকেটের তথ্য জানার পর বনানী-বারিধারা-গুলশান এলাকায় অভিযান চালানো হয়। সেই অভিযানে ৬১ গ্রাম আইসসহ এ চক্রের সাত জনকে আটক করে আইনের আওতায় আনা হয়।
পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এবং তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে এ মাদক পাচার চক্রের অন্যতম সদস্য চন্দন রায়ের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর অভিযান পরিচালনা করে রাজধানীর ওয়ারী থেকে তাকে আটক করা হয়।
কে এই চন্দন রায়?
ডিএনসির বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্লাহ কাজল জানান, চন্দন ডিগ্রি পাস করে কেমিক্যাল কোম্পানিতে চাকরি করার সময় অবস্থায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়েছিল। পরে চাকরি ছেড়ে লাগেজ পার্টির সদস্য হয়ে বিদেশ থেকে স্বর্ণ ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী পাচারের কাজে জড়ায়।
করোনা মহামারির সময় তিনি মালয়েশিয়ায় থাকা তার আত্মীয় শংকর বিশ্বাস এবং নোয়াখালী এলাকার হাবিব নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে আইস পাচার চক্র গড়ে তোলে।
তিনি ২০২০ সালের নভেম্বরে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) রমনা বিভাগের হাতে ৬০০ গ্রাম আইস ও পাঁচ সহযোগীসহ আটক হয়। পরে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জামিনে বের হয়ে পুনরায় আইস কারবারে জড়িয়ে পড়ে।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার চন্দন জানিয়েছে, অত্যন্ত উচ্চমূল্যের মাদক আইস বাংলাদেশে সহজলভ্য না হওয়ায় অভিজাত এলাকার তরুণ-তরুণীদের কাছে হোম সার্ভিসের মাধ্যমে নিয়মিত বিক্রি করতো। এসব এলাকার বিভিন্ন পার্টিতে নিয়মিত আইস সরবরাহ করতো।
অত্যন্ত উচ্চমূল্যের মাদক আইসের প্রতি গ্রাম পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। আর টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে প্রতি কেজির মূল্য দাঁড়ায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা।
আটক চন্দন রায়ের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ওয়ারী থানায় নিয়মিত মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে চক্রের অন্যদের আটক করতে অভিযান চলমান রয়েছে।
আইস সেবনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্লাহ কাজল জানান, আইসের সাইকোঅ্যাকটিভ প্রভাব মারাত্মক। ইয়াবাতে সাধারণত ২০ ভাগ অ্যামফিটামিন থাকে। তবে নতুন এই মাদকে শতভাগ অ্যামফিটামিন থাকে। এ জন্য বিশ্বজুড়ে এটি ভয়ংকর মাদক হিসেবে চিহ্নিত। এটি সেবনের পর মানবদেহে অল্প সময়ে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করে। দীর্ঘদিন এই মাদক সেবনে মস্তিষ্কের রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ থেকে রক্তক্ষরণও হতে পারে।
এটি হৃদযন্ত্র, কিডনি ও লিভারেরও ভয়াবহ ক্ষতি করে। তারা বিকৃত যৌনাচারে আগ্রহী হয়ে ওঠে। স্বভাব হয়ে যায় হিংস্র। বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় দ্রুত ওজন কমে যায় এবং অল্প সময়ের মধ্যে বার্ধক্য ভর করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেবনকারী কয়েক মাসের মধ্যেই আত্মহত্যার দিকে প্ররোচিত হতে পারে, এমনকি মৃত্যুর দিকেও ধাবিত হতে পারে।
জেইউ/কেএ