হোটেল-রেস্তোরাঁয় মাংসের নামে কী খাচ্ছেন?
ভারত থেকে আমদানি করা মাংস নানা মাধ্যম হয়ে পৌঁছে যায় রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয়। গরুর নামে খাওয়ানো হয় মহিষের এসব মাংস। খাওয়ার অনুপযোগী এ ধরনের মাংস খেলে খাদ্যবাহিত নানা রোগ ছাড়াও বিভিন্ন সংক্রমণ হতে পারে। এ বিষয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম পর্ব প্রকাশের পর আজ থাকছে দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর তেজগাঁওয়ে রয়েছে ফ্রিজিং করা ভারতীয় মহিষের মাংসের ডিপো। ডিপো থেকে ফ্রিজিং ভ্যানের মাধ্যমে মাংসগুলো চলে যায় কারওয়ান বাজার, নিউ মার্কেট, হাজারীবাগ, লালবাগ, নবাবগঞ্জ, জুরাইন, মোহাম্মদপুর, কামরাঙ্গীরচরসহ বিভিন্ন এলাকায় তাদের এজেন্টদের কাছে। মাংসগুলো কাটার পর সেখান থেকে ভ্যান-সিএনজিযোগে পৌঁছে যায় বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয়। কোনো-কোনো হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিক এসব দোকানে এসে নিজেই নিয়ে যান মাংস। মহিষের এসব মাংসই খাওয়ানো হয় গরুর মাংস বলে।
বিজ্ঞাপন
মাংসের নমুনা পরীক্ষা
গত ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় রাজধানীর পশ্চিম জুরাইনের তুলা বাগিচায় আল্লাহর দান গোস্ত বিতান থেকে পরিচয় গোপন করে ৬০০ টাকা কেজি দরে কেনা হয় এক কেজি মহিষের মাংস। এরপর জুরাইন বালুর মাঠ বাজারের আল্লাহর দান গোস্ত বিতান নামের আরেকটি দোকান থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে কেনা হয় আরেক কেজি মহিষের মাংস। এসব মাংসই হোটেল-রেস্তোরাঁয় ওঠে ভোক্তার প্লেটে।
দুই নমুনার প্রতিটির মোট তিনটি বিষয়ে (প্যারামিটার) পরীক্ষা করে দেখা হয়। এগুলো হল- সালমোনেলা পরীক্ষা, মোট অ্যারোবিক প্লেট গণনা ও এন্টেরোব্যাকটেরিয়াসি পরীক্ষা। গত ৬ অক্টোবর পরীক্ষার ফল দেয় কিউসি ল্যাব। ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সালমোনেলা শনাক্ত না হলেও মোট অ্যারোবিক প্লেট সংখ্যা ও এন্টেরোব্যাকটেরিয়াসি অনেক বেশি, যা গাইডলাইন অনুযায়ী খাওয়ার অযোগ্য
দুই দোকান থেকে দুই কেজি মাংস নিয়ে ওইদিন দুপুর একটায় যাওয়া হয় সাভারে অবস্থিত প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রাণিসম্পদ উৎপাদন উপকরণ ও প্রাণিজাত খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ গবেষণাগারে (কিউসি ল্যাব)। পশ্চিম জুরাইনের তুলা বাগিচায় আল্লাহর দান গোস্ত বিতান থেকে কেনা মাংস প্রথম এবং জুরাইন বালুর মাঠ বাজারের আল্লাহর দান গোস্ত বিতান থেকে কেনা মাংস দ্বিতীয় নমুনা হিসেবে জমা নেয় কিউসি ল্যাব।
গাইডলাইন অনুযায়ী এসব মাংস খাওয়ার অযোগ্য
দুই নমুনার প্রতিটির মোট তিনটি বিষয়ে (প্যারামিটার) পরীক্ষা করে দেখা হয়। এগুলো হল- সালমোনেলা পরীক্ষা, মোট অ্যারোবিক প্লেট গণনা ও এন্টেরোব্যাকটেরিয়াসি পরীক্ষা। গত ৬ অক্টোবর পরীক্ষার ফল দেয় কিউসি ল্যাব। ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সালমোনেলা শনাক্ত না হলেও মোট অ্যারোবিক প্লেট সংখ্যা ও এন্টেরোব্যাকটেরিয়াসি অনেক বেশি, যা গাইডলাইন অনুযায়ী খাওয়ার অযোগ্য।
এ বিষয়ে মান নিয়ন্ত্রণ গবেষণাগারের সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার (মাইক্রোবিয়াল ফুড সেফটি শাখা) ড. মো. আল-আমীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নমুনা দুটির তিনটি করে পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি করে খারাপ ফল এসেছে। সবমিলিয়ে এই মাংসগুলো খাওয়ার অনুপযোগী। এ ধরনের মাংস খেলে পেটে নানারকম সমস্যা হতে পারে। এটা হচ্ছে ইউরোপীয় কমিশনের বা ইসি গাইডলাইন অনুযায়ী। বাংলাদেশে এই ধরনের কোনো গাইডলাইন নেই। আমরা এই গাইডলাইন অনুসরণ করেই ফল দিয়ে থাকি। এগুলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
আরও পড়ুন : গরু বলে মানহীন মহিষের মাংস খাওয়ানো হয় হোটেল-রেস্তোরাঁয়
তিনি বলেন, এ বিষয়ে ইসি গাইডলাইন ছাড়াও এফডিএ গাইডলাইন রয়েছে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের গাইডলাইনও রয়েছে। তবে সব গাইডলাইন প্রায় একই।
পাওয়া গেল মাত্রাতিরিক্ত এন্টেরোব্যাকটেরিয়াসি
নমুনা পরীক্ষার ফল ব্যাখ্যা করে ড. মো. আল-আমীন বলেন, ইউরোপীয় কমিশনের গাইডলাইন অনুযায়ী মোট অ্যারোবিক প্লেট যদি কোনো মাংসের প্রতি গ্রামে ১০ লাখের বেশি পাওয়া যায় সেটা খাওয়ার অনুপযোগী। মাংসগুলোর প্রথম নমুনায় আমরা প্রতি গ্রামে ৫৫ লাখ (মোট অ্যারোবিক প্লেট) পেয়েছি, যা সহনীয় মাত্রার চেয়ে সাড়ে চার গুণ বেশি। এ ছাড়া দ্বিতীয় নমুনায় পেয়েছি ৬০ লাখ, যা সহনীয় মাত্রার চেয়ে ৫ গুণ বেশি।
অন্যদিকে, ইউরোপীয় কমিশনের গাইডলাইন অনুযায়ী যদি কোনো মাংসের প্রতি গ্রামে এন্টেরোব্যাকটেরিয়াসি ১ হাজার পাওয়া যায়, তাহলে তা খাওয়ার অনুপযোগী বলেও জানান মান নিয়ন্ত্রণ গবেষণাগারের সিনিয়র এই সায়েন্টিফিক অফিসার।
তিনি বলেন, প্রথম নমুনায় আমরা প্রতি গ্রামে পেয়েছি ১ হাজার ৬০০ এবং দ্বিতীয় নমুনায় পেয়েছি সাড়ে ৭ হাজার এন্টেরোব্যাকটেরিয়াসি। প্রথম নমুনায় সহনীয় মাত্রার চেয়ে অর্ধেক বেশি হলেও দ্বিতীয় নমুনায় সাড়ে ৬ গুণ বেশি পেয়েছি।
ড. মোঃ আল-আমীন বলেন, মোট কথা দুটি করে প্যারামিটারের ফল ভালো আসেনি। ইউরোপীয় কমিশনের গাইডলাইন অনুযায়ী এসব মাংস খাওয়ার অনুপযোগী। এখানে ব্যাকটেরিয়ার লোডটা অত্যধিক বেশি। মাইক্রোবায়োলজিক্যাল দৃষ্টিতে দেখলেও এসব মাংস খাওয়ার অনুপযোগী।
অনেকগুলো ব্যাকটেরিয়ার সম্মিলিত নাম এন্টেরোব্যাকটেরিয়াসি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এ কে লুৎফুল কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, এন্টেরোব্যাকটেরিয়াসি হলো ব্যাকটেরিয়ার একটি বড় পরিবার। এন্টারোব্যাকটার, ই. কোলাই, শিগেলা, প্রোটিয়াস- এ রকম অনেকগুলো ব্যাকটেরিয়ার সম্মিলিত নাম হল এন্টেরোব্যাকটেরিয়াসি। এটি সবমিলিয়ে শ্রেণি বা পরিবারের নাম। আমি যে নাম বললাম এর বাইরেও এখানে আরও অনেক প্রজাতি থাকতে পারে।
কিউসি ল্যাবের সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার ড. মো. আল-আমীন বলেন, এন্টেরোব্যাকটেরিয়াসি মানে অনেকগুলো ব্যাকটেরিয়ার সমন্বয়। এগুলো বেশি থাকা মানে মানবদেহের জন্য ক্ষতি হতে পারে। এ ধরনের মাংস খেলে পেটের নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে।
আরও পড়ুন >> অর্ধেক গরুর মাংসও বিক্রি করতে পারছেন না সাজেদুর
তিনি বলেন, মোট অ্যারোবিক প্লেট বলতে বুঝায়, এই মাংস অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রসেস করা হয়েছে। যেখানে প্রসেস করা হয়েছে সেখানে হয়তো ময়লা ছিল বা যারা প্রসেস করেছে তাদের হাতে ময়লা ছিল। সহজ কথা হলো— এগুলো নোংরা বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রসেস করা হয়েছে। এই ধরনের মাংস ইউরোপ বা অন্য কোন দেশে খায় না। এসব মাংস খাওয়ার অনুপযোগী, কারণ এগুলো অস্বাস্থ্যকর।
হতে পারে খাদ্যবাহিত বিভিন্ন রোগ
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান শামছুন্নাহার নাহিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এসব মাংস ভোক্তা খেলে কী হতে পারে তা-ই মূলকথা। এসব মাংস খেলে ফুড-বর্ন ডিজিজ (খাদ্যবাহিত রোগ) হয়। ডায়রিয়া হতে পারে। ডায়রিয়া মারাত্মক পর্যায়ে চলে যেতে পারে। এটি কয়েকদিন পর্যন্তও থাকতে পারে। এটি ব্যক্তিভেদে নির্ভর করে। এমনকি হাসপাতালেও ভর্তি হতে পারে।
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান বলেন, আর যদি ডায়রিয়া না হয় তাহলে যেটা হবে সেটা হচ্ছে পেটে ব্যথা এবং বদহজম। এরপর বমি হতে পারে। পরে সেখান থেকে যেকোনো রকমের ফুড-বর্ন ডিজিজ হতে পারে। এক্ষেত্রে এলার্জি সবচেয়ে কমন বিষয়। ত্বকের এলার্জি হয়। এই এলার্জি জটিল পর্যায় পর্যন্ত যেতে পারে। এটিই মূল সমস্যা হবে।
তিনি বলেন, আপনি কিন্তু কোরবানির মাংস যত্ন করে কাটেন। এক্ষেত্রে পশু জবাই করার পর যে রক্তটি বের হয় সেটি আপনি মাংসের সাথে মেশান না। আমদানির ক্ষেত্রে মাংসগুলো রক্তসহ চলে আসতে পারে। এত বড় চালানে কেউ তো আপনাকে পরিষ্কার করে পাঠাবে না। শুধু জবাই করে পিস-পিস করে পাঠিয়ে দেবে।
আরও পড়ুন >> কাটা মুরগিতে আগ্রহ বেড়েছে ক্রেতাদের
এ ছাড়া মাংস কাটার বা রান্না করার সময় ব্যাকটেরিয়া হাতের মাধ্যমে অন্য খাবারে ছড়িয়ে যেতে পারে বলেও জানান শামছুন্নাহার নাহিদ।
তিনি বলেন, অনেকে আছে রান্না করার সময় চুলা অনেক বেশি জ্বালাতে থাকে। এ ছাড়া অনেক দিন আগের মাংস অনেক মসলা দিয়ে চুলায় অনেক বেশি আগুন দিয়ে কালাভুনা করে ফেলে। এক্ষেত্রে তখন অনেকগুলো পুষ্টিগুণ ঠিক থাকে না।
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান বলেন, সব কাঁচা মাংসে কিন্তু ব্যাকটেরিয়া থাকে। তবে পরিমাণ সহনীয় কি না, সেটিই হচ্ছে বিষয়। ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
বিভিন্ন সংক্রমণের জন্য জন্য দায়ী এসব ব্যাকটেরিয়া, হতে পারে মৃত্যুও
খাদ্য ও পথ্য বিশেষজ্ঞ আলমগীর আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, খোলাবাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে টেস্টের যে রিপোর্ট এসেছে, তা আমাদের জন্য ভয়ঙ্কর। পচা মাংস খাওয়ার ফলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে আক্রান্ত বেশিরভাগ লোকেরই ডায়রিয়া, জ্বর ও পেটে ব্যথা হয়। লক্ষণগুলো সাধারণত সংক্রমণের ছয় ঘণ্টা থেকে ছয় দিন পরে শুরু হয় এবং চার থেকে সাত দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। আর এই প্রজাতির ব্যাকটেরিয়াগুলো মূত্রনালির সংক্রমণ (ইউটিআই), শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, নরম টিস্যু সংক্রমণ, অস্টিওমাইলাইটিস এবং এন্ডোকার্ডাইটিসসহ অনেক নসোকোমিয়াল সংক্রমণের জন্য দায়ী।
তিনি আরও বলেন, এসব পচা মাংস খাওয়ার ফলে অনেকের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা হতে পারে। যেমন বমি, ক্রমাগত ডায়রিয়া, ক্র্যাম্প, সংক্রমণ ও মারাত্মক ডিহাইড্রেশন হতে পারে, যার ফলে মৃত্যুও হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এ কে লুৎফুল কবির বলেন, এই ব্যাকটেরিয়াগুলো শরীরে প্রবেশের ফলে মূত্রনালির সংক্রমণ ও শ্বাসনালির সংক্রমণসহ বিভিন্ন সংক্রমণ হতে পারে। এর মাধ্যমে অন্য রোগগুলোর চিকিৎসাও ব্যাহত হবে।
ভোক্তার সচেতনতা এবং কর্তৃপক্ষের কঠোরতা জরুরি
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান শামছুন্নাহার নাহিদ বলেন, প্রত্যেকটি জিনিসের নির্দিষ্ট মেয়াদ আছে। পশুর মাংস আপনি অনেকদিন ধরেও ফ্রিজে রেখে খেতে পারবেন। তবে এর সঠিক নিয়ম আছে। যারা এটা ব্যবসায়িকভাবে করছেন, তারা এত বেশি নিয়ম মানেন না। তারা অল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে পুঁজি দিয়ে ক্রেতাদের থেকে টাকা পাবেন, সেই চিন্তা করেন। যার কারণে এই সমস্যাগুলো হয়। হোটেল-রেস্তোরাঁর এসব ক্ষেত্রে মূল বিষয়টি হলো মানুষকে সচেতন করতে হবে যে, আপনারা হোটেলের এই খাবারগুলো খাবেন না। যখন হোটেলের এসব খাবার মানুষ পরিহার করতে থাকবে তখন হোটেল মালিকদের এই ব্যস্ততা কমবে। এ ছাড়া নীতি নির্ধারকরা যদি আরেকটু কঠোর বা আরেকটু শক্ত হন তাহলে এক্ষেত্রে খুব ভালো হয়।
খাদ্য ও পথ্য বিশেষজ্ঞ আলমগীর আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমদানি করা এসব পচা মাংস বিক্রি করা বন্ধ করতে হবে। যারা এটার দায়িত্বে তাদের প্রতি আমাদের ভালো কিছু আশা করা যায় না। তাই আমাদেরকেই এর বিরুদ্ধে সচেতন হতে হবে। হোটেলে গরুর নামে এই পচা মাংস খাওয়া সম্পূর্ণরূপে বাদ দিতে হবে। এ ছাড়া সরকারের উচিত হবে পচা মাংস আমদানি নিষিদ্ধ করা।
দেশে বর্তমানে ১ কেজি গরুর মাংস কিনতে গুনতে হয় ৬৮৪ টাকা, যা দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চলে সর্বোচ্চ। তা ছাড়া, বিশ্বব্যাপী গরুর মাংসের গড় দামের (৫৪৯ টাকা) চেয়েও বেশি
মাংসের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনা প্রয়োজন
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর একটি প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১ কেজি গরুর মাংস কিনতে গুনতে হয় ৬৮৪ টাকা, যা দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চলে সর্বোচ্চ। তা ছাড়া, বিশ্বব্যাপী গরুর মাংসের গড় দামের (৫৪৯ টাকা) চেয়েও বেশি।
আরও পড়ুন >> ডিমের দাম আবারও ঊর্ধ্বমুখী
সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে এক কেজি গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ৩৭৫ টাকা, যা বাংলাদেশের ৬৮৪ টাকার প্রায় অর্ধেক। অন্যদিকে, ভারতে গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ৫৮০ টাকা, নেপালে প্রতি কেজি ৪৬৫ টাকা এবং শ্রীলঙ্কায় প্রতি কেজি ৫৪৫ টাকা।
রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁর বেশ কয়েকজন শেফের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদক। চাকরি হারানোর ভয়ে নাম প্রকাশ করতে সম্মত হননি তারা।
বাজারে দেশি গরু-মহিষের মাংসের দাম আমদানি করা মাংসের চেয়ে তুলনামূলক বেশি। এজন্য খাওয়ার অযোগ্য এসব মাংস কেনেন হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকরা। দেশি গরু-মহিষের মাংসের দাম সহনীয় হলে এসব মাংস কিনতেন না মালিকরা
তারা জানান, বাজারে দেশি গরু-মহিষের মাংসের দাম আমদানি করা মাংসের চেয়ে তুলনামূলক বেশি। এজন্য খাওয়ার অযোগ্য এসব মাংস কেনেন হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকরা। দেশি গরু-মহিষের মাংসের দাম সহনীয় হলে এসব মাংস কিনতেন না মালিকরা।
উৎপাদন আরও বাড়িয়ে কমানো যেতে পারে দাম
যেকোনো জিনিসের উৎপাদন বেশি হলে খরচ কম হয়। আর উৎপাদন ব্যয় কম হলে ভোক্তা পর্যায়েও দাম কমে আসে। এক্ষেত্রে গরু-মহিষের উৎপাদন আরও বাড়িয়ে দাম কমিয়ে আনা যেতে পারে বলে মত সংশ্লিষ্টদের৷
জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) চিফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. মো. গোলাম রাব্বানী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা প্রকল্পের মাধ্যমে এ খাতের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি এবং বাস্তবায়ন করছি। মাংসের উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে এই প্রকল্প। এছাড়া জনসচেতনতা তৈরির বিষয়টিও এখানে আছে। মাংসের দাম বাজার থেকে নির্ধারিত হয়। তবে বাজার মূল্যের ওপর উৎপাদনের একটি প্রভাব আছে।
বিষয়টি দেখবে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ : খাদ্যমন্ত্রী
জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি কিন্তু আমার নয়। এ বিষয় নিয়ে বক্তব্য নিতে হবে প্রাণিসম্পদের (মন্ত্রণালয়) কাছ থেকে৷ সেখান থেকে বক্তব্য নিয়ে আসুন। তারপরে আমাদের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে বলতে পারেন, আপনারা চেক করে দেখুন। তবে এটি আমার বিষয়ই না।
মন্ত্রী আরও বলেন, এই মাংস অনিরাপদ কি না, সেটা দেখবে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আর প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এটি আমাদের বিষয় নয়।
অভিযানে নামবে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ
মহিষের মাংসের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বিষয়ে আমরা শিগগিরই অভিযানে নামবো।
খতিয়ে দেখবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় : প্রাণিসম্পদমন্ত্রী
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ঢাকা পোস্টকে জানান, এ বিষয়ে আগে খোঁজ-খবর নিই৷ এর আগে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে বিষয়টি আমরা অবশ্যই খতিয়ে দেখবো।
এসএইচআর/আরএইচ/এনএফ