উৎসব, ছুটির দিন টার্গেট করে এক এনআইডির বিপরীতে অনলাইনে চার টিকিট ক্রয়, কখনো কাউন্টার থেকে ট্রেনের অতিরিক্ত টিকিট ক্রয় করে চক্রটি। এরপর টিকিট প্রত্যাশীদের কাছে দ্বিগুণ থেকে চারগুণ দামে টিকিট বিক্রি করে হাতিয়ে নিতো বড় অংকের টাকা। 

টিকিট কালোবাজারি চক্রের মূল হোতা মো. সেলিম। কিছুদিন আগেই টিকিট কালোবাজারি করে জেলে যান তিনি। জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে ফের একই অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন সেলিম।

রাজধানীর কমলাপুর এবং বিমানবন্দর রেলস্টেশনসহ সারা দেশে অধিক মূল্যে রেলের টিকিট কালোবাজারি করছিল চক্রটি। আর এ কাজে রেলওয়ে স্টেশনের কর্মকর্তারাও জড়িত থাকতে পারেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর টিকাটুলিতে র‌্যাব-৩ এর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত র‍্যাব-৩ এর পৃথক অভিযানে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের মূল হোতা মো. সেলিমসহ (৪৮) ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

গ্রেপ্তার বাকিরা হলেন, মো. শাহ আলম (৩৪), মো. লিটন (৩৫), মো. আব্দুর রশিদ ফকির (৩০) এবং খোকন মিয়া (৫৮)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ট্রেনের ৮৮টি টিকিট, চারটি মোবাইল ফোন এবং ১৮ হাজার ৪৪৭ টাকা উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, কমলাপুর রেলস্টেশনে এ কালোবাজারি চক্রটির মূল হোতা সেলিম এবং অন্যান্য সদস্যরা মিলে রেলস্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়ে এক একটি এনআইডি দিয়ে ৪টি করে টিকিট সংগ্রহ করে।

এছাড়াও অনলাইনে বিভিন্ন পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও সেলফোন নম্বর ব্যবহার করেও টিকিট সংগ্রহ করে তারা। এরপর সেলিমের নেতৃত্বে এক একটি ট্রেন ছাড়ার দুই ঘণ্টা আগে থেকে তারা অধিক মূল্যে টিকিট বিক্রির তৎপরতা শুরু করে। ফেসবুক গ্রুপ খুলে দেয় টিকিট বিক্রির বিজ্ঞাপন।

চক্রটি ট্রেন ছাড়ার সময় ঘনিয়ে আসলে তাদের মজুত করা কালোবাজারি টিকিটের দাম তত বাড়াতে থাকে। তারা সাধারণত দ্বিগুণ মূল্যে টিকিট বিক্রি করে থাকে। সুযোগ এবং সময় বুঝে অনেক ক্ষেত্রে তারা টিকিটের দাম আরও বাড়িয়ে দেয়। এই চক্রটি মূলত তিস্তা এক্সপ্রেস, এগারো সিন্দুর প্রভাতী, মহানগর প্রভাতী, চট্টলা এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা‌ এক্সপ্রেস, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস এবং পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে থাকে।

চক্রটির আরও সদস্য ও ইউনিট রয়েছে। প্রতিটি ইউনিটে ৫-৭ জন করে সক্রিয় সদস্য রয়েছে, যারা তাদের টার্গেট করা ট্রেনসমূহের টিকিট কালোবাজারি করে সাধারণ যাত্রীদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করে। 

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারদের দেওয়া তথ্যের বরাতে তিনি বলেন, এই সংঘবদ্ধ চক্রটি গত ৭ বছর ধরে সেলিমের নেতৃত্বে কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় বিভিন্ন ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির মাধ্যমে সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বিভিন্ন জেলার রেলস্টেশনগুলোতেও তাদের এজেন্টদের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারি কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। 

তিনি বলেন, রেলস্টেশনে যে পরিমাণ টিকিট বরাদ্দ থাকে তার মধ্যে ৫০ শতাংশ বিক্রি হয় অনলাইনে। যার ফলে কাউন্টারে এসে অনেকে টিকিট না পেয়ে ফিরে যান। আর এই সুযোগটিই গ্রহণ করে টিকিট কালোবাজারি চক্রের সদস্যরা। কমলাপুর রেলস্টেশনে এই কালোবাজারি চক্রটির মূল হোতা সেলিম এবং অন্য সদস্যরা মিলে রেলস্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়ে এক একটি এনআইডি দিয়ে চারটি করে টিকিট সংগ্রহ করে। এমনকি অনেক সময় তারা রিকশাওয়ালা, কুলি, দিনমজুরদের অল্প টাকার বিনিময়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে তাদের মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করে। এছাড়াও অনলাইনে বিভিন্ন পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্যবহার করেও টিকিট সংগ্রহ করে থাকে। 

ঈদের সময় তাদের দৌরাত্ম আরও বেড়ে যায় উল্লেখ করে লে. কর্নেল আরিফ বলেন, ঈদসহ বিভিন্ন ছুটি এবং উৎসবকে কেন্দ্র করে তারা এক একটি টিকিট ৩-৪ গুণ বেশি মূল্যে বিক্রয় করে। তারা গত কোরবানির ঈদের সময় ৫০০ টাকার টিকিট সর্বোচ্চ ২০০০ টাকায়ও বিক্রি করেছে। তারা প্রত্যেক ৭-৮ বছর যাবত এ পেশায় জড়িত।

চক্রের মূল হোতা সেলিমের নামে টিকিট কালোবাজারির অভিযোগে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৭টি মামলা রয়েছে। এর আগে তিনি বিভিন্ন মেয়াদে জেলও খেটেছেন। অন্য আসামিদের বিরুদ্ধেও রয়েছে বেশ কয়েকটি মামলা।

জেইউ/এসকেডি