অসংক্রামক রোগব্যাধি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা সীমিত। জীবনাচার ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং পরিবেশ দূষণ রোধের মাধ্যমে অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। 

শনিবার (১৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) উদ্যোগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘পরিবেশ বিপর্যয় ও অসংক্রামক রোগব্যাধি’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বাপার পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মসূচি কমিটির সদস্য এবং ডিএসকে হাসপাতালের পরিচালক ডা. মাহমুদুর রহমান বলেন, অসংক্রামক রোগব্যাধি বিশ্বব্যাপী দ্রুত বর্ধনশীল স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যার ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা ব্যয় সরকারি কোষাগার এবং ব্যক্তিগত ব্যয়ের ক্ষেত্রে বিশাল চাপ সৃষ্টি করছে। 

পারিপার্শ্বিক এবং গৃহস্থালির বায়ুদূষণ (অনুপযুক্ত চুলা ব্যবহার), পরোক্ষ ধূমপান, রাসায়নিক পদার্থ ও বিকিরণ ঝুঁকি, শব্দ দূষণ, পেশাগত ঝুঁকি, ভূমি ব্যবহার প্যাটার্ন, কর্মপরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি পরিবেশগত কারণসমূহ অসংক্রামক রোগ সৃষ্টি ও মৃত্যুর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, অসংক্রামক রোগের দ্রুত বিস্তার স্বাস্থ্য, সামাজিক ব্যবস্থা এবং উন্নয়নের পথে বড় চ্যালেঞ্জ। জলবায়ু পরিবর্তন সে প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করে। জলবায়ু পরিবর্তন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অসংক্রামক রোগের কারণ হতে পারে। অসংক্রামক রোগে বছরে প্রায় ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু ঘটে যা সারা বিশ্বে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশ, অসংক্রামক রোগে মৃত ১ দশমিক ৫ কোটি মানুষের বয়স ৩০ থেকে ৬৯ বছরের মধ্যে এবং মোট মৃত্যুর ৭৭ শতাংশ ঘটনাই ঘটছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। 

বাপার সহ-সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন আমরা শুরু করি সেই ২০০০ সালে, আর ২০২২ সালের পরিবেশের সংকট তার থেকে ১০০ থেকে ২০০ গুণ বেড়েছে। আমরা যখন কাজ শুরু করি তখন পরিবেশ খুব একটা সংকটে ছিল না বাংলাদেশে। আমরা যদি কাজ না করতাম তাহলে এটা আরও বহুগুণে বেড়ে যেতো।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাপার পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মসূচি কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক উপদেষ্টা ড. আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন। 

তিনি বলেন, টেকসই পরিবেশ, আর্থিক উন্নয়ন এবং সামাজিক সম্পৃক্তকরণ এই তিনটি বিষয়ই হলো এসডিজির মূল উপাদান। ফলে আমাদের সেটা খেয়াল রাখতে হবে, যাতে আমরা এই তিনটিকে একত্রে গ্রথিত করতে পারি। কারণ এগুলোর সঙ্গে অসংক্রামক রোগেরও সম্পর্ক আছে। সরকারের সামর্থ্য আছে, সেই সামর্থ্যকে ব্যবহার করে জনগণকে সরকার সচেতন করে তুলতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, হাঁটা শুধু অসংক্রামক রোগ নিবারণ কিংবা নিয়ন্ত্রণ করবে তা-ই নয়, আয়ুকে ও বাড়িয়ে দেবে। প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিট এবং সপ্তাহে ১৫০ মিনিট নিয়মিতভাবে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে শতকরা ৩০ ভাগ মানুষ জানে না যে তাদের বহুমূত্র বা উচ্চ রক্তচাপ আছে। বিভিন্ন রোগে প্রতিদিন প্রায় ২৬০০ মানুষ মারা যায় এ দেশে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সভাপতি অধ্যাপক এম আবু সাঈদ, পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ডা. মো. আফতাব উদ্দিন, বাপার যুগ্ম সম্পাদক এবং গ্রিন ভয়েসের সমন্বয়ক আলমগীর কবির, যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবির সুমন ও বাপার পরিবেশ স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মসূচি কমিটির সদস্য সচিব বিধান চন্দ্র পাল, নির্বাহী সদস্য ড. মাহবুব হোসেন প্রমুখ।

আইবি/এমএ