মুখ ঢেকে দুদক ছাড়লেন তারা
মিসর থেকে বোয়িংয়ের দুটি উড়োজাহাজ লিজ সংক্রান্ত ১১শ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এক জিএমসহ তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তারা হলেন— বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ম্যানেজার (প্লানিং) মোহাম্মদ আজাদ রহমান, প্রিন্সিপাল সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার জি এম ইকবাল ও লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্সের জিএম আজরা নাসরিন রহমান।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন উপ-পরিচালক আনোয়ারুল হক ও সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মিডিয়াকর্মীদের কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি তারা। বরং ক্যামেরা এড়াতে হাতের ব্যাগ বা ফাইল দিয়ে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। অনেক প্রশ্ন থাকলেও কোনো জবাব দেয়নি তারা।
এ বিষয়ে দুদকের অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদে বিমানের লিজ সংক্রান্ত অনেক প্রশ্নেরই জবাব দিতে পারেননি তারা। চার ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদে অনেকটা নার্ভাস ছিল তাদের মুখ। অধিকাংশই তার দুদকের নানা প্রশ্নে বিপরীতে চুপ থেকেছেন বলে জানা গেছে। এমনকি দায় এড়াতে বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিয়ে দায় অন্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন।
গত ২ অক্টোবর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এক পরিচালক ও তিন জিএমসহ আট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে সংস্থাটি। ১২ অক্টোবর আরও পাঁচ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে। এর আগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ আর এম কায়সার জামানসহ অর্ধ ডজন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।
অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার (মিসর) থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর নামে দুটি উড়োজাহাজ লিজ নেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। কিন্তু বছর না যেতেই ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লাইট পরিচালনার পর একটি উড়োজাহাজের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। উড়োজাহাজটি সচল রাখার জন্য ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। পরে ওই ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায়। সেই ইঞ্জিন মেরামত করতে পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে। এতসব প্রক্রিয়ায় ইজিপ্ট এয়ার ও মেরামতকারী কোম্পানিকে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিমানের গচ্চা দিতে হয়েছে ১১শ কোটি টাকা।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তদন্তে বেরিয়ে আসে এসব তথ্য। এ ব্যাপারে অধিকতর তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিষয়টি দুদকে পাঠানোর সুপারিশ করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বিষয়টি দুদকে আসার পর অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর দুই সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। ওই টিম গত ২৮ মে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নথিপত্র চেয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে চিঠি পাঠায়।
মিসর থেকে বোয়িংয়ের দুটি উড়োজাহাজ লিজ সংক্রান্ত ১১শ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান কার্যালয়ে গত ১ জুন অভিযান পরিচালনা করেছিল দুদক। দুদক উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে ওই অভিযান চালানো হয়। মাঝে বদলিজনিত কারণে দুদক টিম পুনর্গঠন করা হয়।
আরএম/ওএফ