‘চিকিৎসক খুঁজে পাচ্ছেন না রোগী, রোগী পাচ্ছেন না চিকিৎসক’
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীরা প্রতিদিনই ভিড় করছেন ঢাকা মেডিকেল (ঢামেক) কলেজ হাসপাতালে। সম্প্রতি এ সংখ্যাটা অনেক বেড়েছে। তবে, রোগী বাড়লেও প্রস্তুতি পর্যাপ্ত থাকায় সেবা দিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক। যদিও রোগী ও তাদের স্বজনরা বলছেন ভিন্ন কথা।
শনিবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে ঢামেক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড থাকলেও সেখানে রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। সাধারণ রোগীর সঙ্গেই রাখা হচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের। এছাড়া রোগীদের বেডে নেই মশারির ব্যবস্থা। ফলে সাধারণ রোগীদেরও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। রোগীর প্রয়োজনে চিকিৎসকের সাড়া পেতেও লাগছে দীর্ঘ সময়। রয়েছে শয্যা সংকট। এ অবস্থায় হাসপাতালের করিডোরে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক রোগী।
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ঢামেক হাসপাতালে ১৫৭ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গতকাল শুক্রবার ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন কাওসার চৌধুরী। কাওসার চৌধুরীর বোন-জামাই নুরুজ্জামান বলেন, আমার শ্যালক তিনদিন আগে প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে ফরিদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করা হয়। বর্তমানে তিনি ঢামেকের ৭০১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। তার রক্তের প্লাটিলেটের পরিমাণ ছয় হাজারে নেমেছে।
‘এখানে ডেঙ্গু ওয়ার্ড লেখা থাকলেও ডেঙ্গু রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। অন্য রোগীদের সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে। তাদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। এখানে চিকিৎসক খুঁজে পাচ্ছেন না রোগী, রোগী পাচ্ছেন না চিকিৎসক’— এমন অবস্থা বিরাজ করছে।
রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকা থেকে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢামেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন আব্দুর রহমান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি গত ৩ অক্টোবর জ্বর নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হই। পরে পরীক্ষায় ধরা পড়ে আমার ডেঙ্গু হয়েছে। এখন অনেক ভালো আছি। তার অভিযোগ, এখানে সব রোগী একসঙ্গে রাখায় ডাক্তারদের রোগী খুঁজে পেতে সমস্যা হচ্ছে।
মোহাম্মদপুর থেকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৮০২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন রোজিনা বেগম। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, এখানে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। মেডিসিনের বিভিন্ন রোগীকে একসঙ্গে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নার্স ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তাদের আলাদা চিকিৎসা দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি করা হচ্ছে না। এখানে ডেঙ্গু রোগী খুঁজে পেতে আমাদের অনেক সমস্যা হয়। কারণ, এখানে মেডিসিনের রোগীর সংখ্যা বেশি। রোগীরা সিট পান না। বিভিন্ন বারান্দার করিডোরের ফ্লোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা।
‘এখানে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড থাকলেও সেখানে ডেঙ্গু রোগী নেই। আমাদের এখানে এত চাপ ছিল না। হঠাৎ ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে। সাধ্য মতো আমরা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার আগে আমাদের এখানে ডেঙ্গু রোগীদের আলাদা ওয়ার্ড ছিল। ওই সময় মেডিসিন বিভাগকে কোভিড ইউনিট করা হয়। এরপর বেশ কয়েক মাস করোনা পরিস্থিতি নিম্নমুখী হওয়ায় সেখানে আবার মেডিসিন বিভাগ চালু করা হয়েছে।
‘আমাদের মেডিসিন ওয়ার্ডের ৬০১, ৬০২, ৭০১, ৭০২, ৮০১ ও ৮০২-তে ডেঙ্গু রোগীদের ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আগে অনেক কম ছিল। এক সপ্তাহ হলো ডেঙ্গু রোগীদের চাপ বেড়েছে। মেডিসিন বিভাগ চালু হওয়ার পর আলাদাভাবে ডেঙ্গু ওয়ার্ড থাকলেও সেখানে সবাইকে একসঙ্গে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ডেঙ্গুর চাপ তো সবসময় থাকে না, হঠাৎ করে এটি বেড়ে গেছে।’
ডেঙ্গু রোগীদের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। আগে যেখানে ১০০ জন বা তার বেশি রোগী ভর্তি থাকত, সেখানে এখন ১৫৭ রোগী ভর্তি আছেন।
‘ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মূল কাজ হলো রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া। সেটার জন্য আমরা প্রস্তুত। কোনো সমস্যা নেই। আপনারা জানেন, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর— এ তিন মাস ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি থাকে।’
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের জন্য আলাদা কোনো ওয়ার্ড আছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের এখানে তেমন ব্যবস্থা এখনও করা হয়নি। প্রটোকল মেনে যে চিকিৎসা তাদের দেওয়া দরকার, আমরা সেটা দিয়ে যাচ্ছি।
এসএএ/এসকেডি/এমএআর/