রাজধানীর উত্তরার কিংফিশার নামে একটি বারে অভিযান চালিয়ে ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরা বিভাগ। তাদের মধ্যে বারটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তার করে পরিবারকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বারটির এক কর্মচারীর স্বজন। তিনি বলেন, সে তো মাত্র ১২ দিন আগে সেখানে জয়েন করেছে। তারা তো ওইখানে জব করত, তারা তো ক্রাইম করেনি। তাহলে তাদের হাতে কেন হাতকড়া?

বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরে গরীবে নেওয়াজ এভিনিউ রোডের এক বাসায় কথিত বারে অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরা বিভাগ। অভিযানে কথিত বারটি থেকে ৫০০ বোতল বিদেশি মদ ও ছয় হাজার ক্যান বিয়ার জব্দসহ ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শুক্রবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। সংবাদ সম্মেলনের পর গণমাধ্যমকর্মীরা গ্রেপ্তারদের ছবি ও ভিডিও নিতে গেলে এক নারী প্রতিবাদ করেন।

ওই নারী দাবি করেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে তার একজন স্বজন রয়েছেন। যিনি ১২ দিন আগে কথিত বারটিতে চাকরিতে জয়েন করেছিলেন।

আরও পড়ুন : রেস্টুরেন্টের আড়ালে ‘বার’, যাতায়াত ছিল নানা পেশার মানুষের

মিন্টু রোডের ডিবি অফিসের গেটের সামনে প্রতিবাদ জানিয়ে ওই নারী বলেন, যারা ওইখানে কাজ করত তাদের হাতে কেন হাতকড়া পরানো হলো। তারা তো সেখানে চাকরি করতে গিয়েছে, তারা তো কোনো ক্রাইম করেনি।

তিনি বলেন, মাত্র ১২ দিন আগে সে (ওই নারীর স্বজন) সেখানে জয়েন করেছিল। তাদের ভিডিও ও ছবি কেন মিডিয়ায় দেখানো হবে। এটা আইনের কোন ধারায় আছে। সে তো সেখানে চাকরি করতে গিয়েছিল। তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এভাবে তো তার জীবনটা রিস্কের (ঝুঁকি) মধ্যে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। তার পরিবারটাকেও ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে রাজধানীর উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের গরীবে নেওয়াজ এভিনিউ রোডের একটি একটি বাড়িতে শত শত ছেলে-মেয়ে গান বাজনার নামে ডিজে পার্টি এবং প্রচুর পরিমাণ মদ বিক্রি হচ্ছে বলে আমাদের কাছে গোপন তথ্য আসে। আগেও উত্তরার এমপি থেকে শুরু করে অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি আমাদের কাছে অভিযোগ করেন ওই বাড়িতে সবসময় একটি নৈরাজ্যকর পরিবেশ বিরাজ করে।

তিনি বলেন, এই তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ডিবি উত্তরার সব টিম ওই বাড়িতে যায় গতকাল রাত ৯টার দিকে। তারা সেখানে গিয়ে দেখেন ভয়াবহ অবস্থা। প্রথমে ভবনের সাত তলায় গিয়ে ডিবির দল দেখে, অনেক ছেলে-মেয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। পরে ভেতরে গিয়ে দেখে, সেখানে প্রচুর পরিমাণে বিদেশি মদ ও বিয়ার মজুত রয়েছে। ডিবির দলগুলো ৫ম তলা ও ৬ষ্ঠ তলায় গিয়েও একই অবস্থা দেখতে পায়।

পরে ডিবি এসব বিদেশি মদ ও বিয়ার একত্রিত করে কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চায় এগুলো তারা কীভাবে দেশে নিয়ে এসেছে। অভিযানে প্রায় ৫০০ দামি বিদেশি মদ ও প্রায় ৬ হাজার ক্যান বিয়ার জব্দ করা হয়। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্যই ডিবিকে জানাতে পারেনি। কাগজপত্রের জন্য ডিবি পুলিশ বাড়িটিতে রাত ৯টা থেকে প্রায় রাত ২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে। তারপরও কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। সে কারণে সেখান থেকে আমরা ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করি। তাদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় তাদের আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড আবেদন করা হবে।

ভবনটিতে এ কার্যক্রম কি ব্যানারে চলত— প্রশ্ন করা হলে ডিবি প্রধান বলেন, কিংফিশার রেস্টুরেন্টের নামে এই ভবনের এসব কার্যক্রম চলত।

কথিত এই বারের মালিক মুক্তার হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তার আরও বেশ কয়েকটি বার রয়েছে রাজধানী ও নারায়ণগঞ্জে। মুক্তার হোসেনের কাছে বারের কয়টি লাইসেন্স আছে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা গতকাল যেই ভবনটিতে অভিযান পরিচালনা করেছি সেখানের ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। ম্যানেজার আমাদের বলেছেন মুক্তার মিরপুর, গুলশান ও নারায়ণগঞ্জে পাঁচটি বার চালান। সেগুলো একই লাইসেন্সের কি না সেটা আমরা জানি না। তবে গতকাল আমরা উত্তরার যে ভবনে অভিযান পরিচালনা করেছি সেখানে কিংফিশার রেস্টুরেন্টের নামে এসব কার্যক্রম চলত।

ম্যানেজার আরও জানায়, মুক্তার ২০০৮ সালের দিকে বারিধারায় অবস্থিত এভিলিয়ন নামে একটি রেস্টুরেন্টে ওয়েটার হিসেবে কাজ করতেন। লেকভিউ নামে গুলশান-২ এলাকায় একটি রেস্টুরেন্টে ছিল সেখানেও সে কাজ করত ওয়েটার হিসেবে। সে ওয়েটার থেকে এখন শত কোটি টাকার মালিক। তার যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি-গাড়ি আছে। সেখানে তার স্ত্রী ও সন্তান বসবাস করে।

মামলায় প্রতিষ্ঠানটির কাকে কাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, মালিক ও ম্যানেজারসহ অনেকজনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ৩৫ জনের মধ্যে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কতজন রয়েছে— জানতে চাইলে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, এ বিষয়গুলো আমরা যাচাই-বাছাই করছি।

এই কর্মকাণ্ডে সঙ্গে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কোনো কোরিয়ান নাগরিক জড়িত কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা যাচাই-বাছাই করছি।

উত্তরার কথিত বারে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের যাতায়াত ছিল। তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে— এমন প্রশ্নে জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, কাদের যাতায়াত ছিল সে বিষয়ে আমরা তদন্ত করব।

এমএসি/এসএসএইচ