দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেছেন, ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনিরাপত্তার কাজে জার্মানি ও ইংল্যান্ড থেকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আরো ১১টি লেডার আনা হচ্ছে। ঢাকায় দুটি ও চট্টগ্রাম বিভাগে তিনটি রেখে বাকি প্রতি বিভাগে একটি করে লেডার দেওয়া হবে। এতে আমাদের সক্ষমতা আরও বাড়বে।

আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে শনিবার (১ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় মিরপুর-৯ সাগুপ্তা মোড় এলাকার স্বপ্ননগর আবাসিক এলাকায় আয়োজিত ‘ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ডে সচেতনতা বৃদ্ধির মহড়া’ অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।

মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রবীন্দ্রনাথ বর্মনের সভাপতিত্বে মহড়া শেষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১২২ বছরের মধ্যে ভয়াবহ বন্যা হয়ে গেলো সিলেটে। এই বন্যায় কিন্তু একটি লোকও মারা যায়নি। কারণ প্রধানমন্ত্রী নিজে সজাগ থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন. নির্দেশ দিয়েছেন পর্যাপ্ত টাকা, চাল, শুকনো খাবার সরবরাহের জন্য। তিনি সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন সব বোট নিয়ে সেখানে যেতে। কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশ, বিজিবি, পুলিশ, নৌ বাহিনী, আনসার ও ফায়ার সার্ভিসকে নির্দেশ দেন সেখানে তাদের বোট নিয়ে যাওয়ার জন্য।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘুমান না উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সারাক্ষণ দেশের মানুষের কথা চিন্তা করেন, অ্যালার্ট থাকেন। তিনি যেকোনো দুর্যোগের মুহূর্তে দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। তার কারণে আমরা দুর্যোগ মোকাবিলায় সফলতা অর্জন করতে পেরেছি।

পঞ্চগড়ের আউলিয়া ঘাটে নৌকা ডুবিতে ৭২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। সেখানে ফায়ার সার্ভিস আজও কাজ করছে। সেখানে পরিশ্রম করে, পানিতে ভিজে, রোদে পুড়ে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তাদের অবদানের স্বীকৃতি আমরা দিতে পারবো না, সম্ভব না, এটা আল্লাহ দেবেন, বলেন প্রতিমন্ত্রী।

মুন্সিগঞ্জে ফায়ার সার্ভিসের জন্য একাডেমি হচ্ছে উল্লেখ করে দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী বলেণ, এটা হয়ে গেলে ফায়ার সার্ভিসের দক্ষতা আরো বাড়বে। আমরা রাশিয়ার আদলে এই একাডেমি করতে চাইছি। আমদের একটা ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি চুক্তি করেছেন। চুক্তি অনুযায়ী ঢাকার তেজগাঁওয়ে ১০০ কাঠার প্লট দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে চীনের সহযোগিতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এর নির্মাণ কাজ শুরু করেছে।

তিনি বলেন, সেফটি ম্যানেজমেন্ট এর অংশ হিসেবে আমরা চার হাজারের ওপরে ফ্লাড সেন্টার করেছি, সাত হাজারের বেশি সাইক্লোন সেন্টার করেছি। আরও ফ্লাড ও সাইক্লোন সেন্টারে নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ‍দুর্যোগময় মুহূর্তে আমরা যাতে দ্রুত ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিতে পারি সেজন্য জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ গুদাম করেছি। এসব গুদাম করার আগে ত্রাণ যেতো ঢাকা থেকে। তাতে ২/৩ দিন লাগতো। এখন মাত্র ২ ঘণ্টা লাগে। 

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) লে. কর্নেল রেজাউল করিম বলেন, আগুন লাগার খবর পাওয়ার ৩০ সেকেন্ড থেকে এক মিনিটের মধ্যে ফার্স্ট কল টিম বের হয়ে যায়। প্রত্যেকটি থানা এলাকায় একটি করে ফায়ার স্টেশন করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আমাদের কাজের একটি বড় অংশ হচ্ছে মানুষকে অগ্নিপ্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরি করা। অগ্নিপ্রতিরোধক ইকুইপমেন্ট সবার বাসায় রাখা উচিত। ভবন নির্মাণে অবশ্যই উচিত মানসম্পন্ন বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করা। কারণ আগুনের বড় কারণ বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট।

সভাপতির বক্তব্যে অতিরিক্ত সচিব রবীন্দ্রনাথ বর্মন বলেন, জানমালের রক্ষার তাগিদেই আমাদের সচেতনতা ও প্রশিক্ষণ থাকা উচিত। কীভাবে অগ্নি প্রতিরোধ ও সহনীয় করবো তা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে হাতে কলমে শেখানো হচ্ছে। মানবসৃষ্ট দুর্যোগ থেকে বাঁচার জন্য নিজেদের কৌশল জানতে হবে। আতঙ্কিত না হয়ে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্যোগ মুহুর্তে কৌশলের সঠিক প্রয়োগ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সেলিম আহমেদ ও সংশ্লিষ্ট এলাকার কাউন্সিলর সাজ্জাদ হোসেনসহ স্থানীয় বাসিন্দা, ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জেইউ/জেডএস