সব ভালো কাজের কৃতিত্ব জনগণের, ব্যর্থতা আমার
সব ভালো কাজের ক্রেডিট সরকার ও জনগণের, আর ব্যর্থতাগুলো আমার বলে মন্তব্য করেছেন বিদায়ী আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ।
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) আইজিপি বেনজীর আহমেদ দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৩৪ বছরের পুলিশের কর্মজীবন শেষে অবসরে যাচ্ছেন। অবসরে যাওয়ার পূর্বে শেষ কর্মদিবসে নিজের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের নানা অর্জনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ মতবিনিময় করেন তিনি।
বেনজীর আহমেদ বলেন, ডিএমপি কমিশনার, র্যাব ডিজি ও পুলিশের আইজিপি হিসেবে পুলিশের শীর্ষ পদে দীর্ঘ ১২ বছর দায়িত্ব পালনকালে সকল ভালো কাজের ক্রেডিট সরকার ও জনগণের, আর ব্যর্থতাগুলো আমার।
চাকরির জীবনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব চ্যালেঞ্জই চ্যালেঞ্জ। যতক্ষণ না পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম না করতে পারব ততক্ষণ পর্যন্ত সেটাই নির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জ। আপনারা মনে করতে পারছেন কি-না ফরমালিনের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলাম। ম্যাজিস্ট্রেটদের সহযোগিতা নিয়ে শত শত টন ফরমালিন মেশানো মাছ-মাংস-ফল-সবজি ধ্বংস করে জাতিকে ফরমালিন মুক্ত খাবার উপহার দিয়েছি। ওই সময়ে দেশে বছরে প্রায় ৭০০ টন ফরমালিন আমদানি হতো। এখন আমদানি হয় কম-বেশি ১০০ টন।
তিনি বলেন, সুন্দরবনকে দস্যু মুক্ত করা আরেকটি চ্যালেঞ্জ ছিল। এই সমস্যা প্রায় ৪০০ বছরের, দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪০ বছর পর্যন্ত দস্যুরা সুন্দরবনে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। সুন্দরবনে যারা জীবিকা নির্বাহ করতেন তারা দস্যুদের কাছে জিম্মি ছিলেন। মৌসুমের সময় নিয়মিত অপহরণ হতো সাধারণ মানুষ। আমরা তিন ডজন ডাকাতকে আত্মসমর্পণ করিয়েছি।
বিদায়ী আইজিপি বলেন, এই ১২ বছরে যা কিছু ভালো হয়েছে তার ক্রেডিট সরকারের ও বাংলাদেশের মানুষের। ব্যর্থতা থাকলে সেগুলোর দায় ডেফিনিটলি আমার। কারণ সেসব ক্ষেত্রে হয়তো রাষ্ট্রের দায়িত্ব আমি ঠিকমতো প্রতিপালন করতে পারিনি।
দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটাকে সফলতা ব্যর্থতার মাপকাঠি হিসেবে না দেখি। আমি দেখতে চাই অর্জন কতটা হয়েছে, আর অর্জনের কি বাকি আছে? অর্জনের বিষয়টা হচ্ছে একটা প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া কখনো শেষ হওয়ার নয়।
বেনজীর আহমেদ বলেন, আমি দৌড়েছি, এখন আমার সহকর্মীর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর হলে তিনি দৌড়বেন। থিউরি অব পারফেকশন বলে পৃথিবীতে কোনো কিছুই পারফেক্ট না। মানুষের মানবিক সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের যা কিছু করতে হয় মানবিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে দিয়েই করতে হয়।
কক্সবাজারের কাউন্সিলর একরাম নিহত হওয়ার ঘটনার সময় র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন ড. বেনজীর আহমেদ। একরামের নিহত হওয়ার ঘটিনাটি তাকে অনুতপ্ত করে কি-না জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, এটি একটি লিগ্যাল বিষয়। যে পর্যন্ত বিষয়টি অন্যায্য বা অনৈতিক প্রমাণিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ বিষয়ে অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ নেই। বিষয়টি আমার ব্যক্তিগত ক্যাপাসিটিতে ঘটেনি, ঘটনাটি ঘটেছে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে, আমার ফিল্ড লেভেলের লোকজনের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, যেই ভদ্রলোক নিহত হয়েছেন তার সঙ্গে ওই মাঠ পর্যায়ে লোজনের ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ ছিল না। তাই বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে আমরা একটি বিষয় দেখি আমাদের কোনো সহকর্মী দায়িত্বের বাইরে গিয়েছে কি-না। কেউ যদি দায়িত্বের বাইরে গিয়ে কাজ করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। একরামের বিষয়েও একাধিক তদন্ত হয়েছে।
পুলিশের মধ্যে মানবাধিকার উন্নয়নের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশকে মানবাধিকার প্রশিক্ষণ দেবে বলে এ দেশের এনজিওগুলো শত শত কোটি টাকা নিয়ে এসেছে। এখন এ হিসেব বের করলে দেখা যাবে কয়েক হাজার কোটি টাকা হবে। এসব টাকা আমরা আনিনি, এনেছে এনজিওগুলো, পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। এনজিও কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, তবে যখনই তারা ডেকেছে পুলিশ গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে। পুলিশের মানবাধিকার প্রশিক্ষণ সব সময় দেওয়া হয়। এছাড়া সরকার থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে পুলিশের জবাবদিহিতা আছে।
অবসরে যাওয়ার পর কী করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজ পর্যন্ত দায়িত্বে আছি। আগামীকাল অবসর নেব। এর পরে অবসর নিয়ে ভাবব। অবসরের পর সমাজের অংশ হিসেবে মানুষের সঙ্গে বসবাস করব বাকি জীবন। মানুষের অনেক অবদান রয়েছে আমার প্রতি; আমি চেষ্টা করব জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাদের পাশে দাঁড়াতে।
অনেক বলে ড. বেনজীর আহমেদ চাকরি জীবন শেষে রাজনীতিতে আসবেন, তার বক্তব্য রাজনৈতিক নেতাদের মতো- এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, আমি তো এমন কথা কখনো বলেনি। অন্যের বক্তব্যের বিষয়ে আমি কোনো উত্তর দিতে আগ্রহী না।
বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে অনেক সময় মানুষ মারা যায়- এ বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আমাদের প্রাথমিক ও প্রধান লক্ষ্য থাকে মানুষের জীবন বাঁচানো। এর জন্য আমাদের হাতে অস্ত্র থাকে। তাছাড়া এসব ঘটনায় নির্বাহী ও বিভাগীয় তদন্ত হয়।
এমএসি/ওএফ