পূজার কেনাকাটায় জমজমাট শাঁখারীবাজার
দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই শারদীয় দুর্গোৎসবের আমেজে মেতে উঠেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এ উৎসব উপলক্ষে পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারে পড়েছে কেনাকাটায় ধুম। শাঁখারীবাজারের অলিগলিতে কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতা-বিক্রেতারা।
সরেজমিন শাঁখারীবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিমার সাজসজ্জা থেকে শুরু করে মুকুট, শাড়ি, অলঙ্কার, লেস, সিঁদুর, ফুলের মালা, প্রতীকী অস্ত্র ও ঘট কিনতে ব্যস্ত পূজারীরা। পূজা-অর্চনার জন্য যেসব উপকরণের প্রয়োজন হয় তার অধিকাংশই পাওয়া যায় শাঁখারীবাজারে। এসব উপকরণ কিনতে পূজারীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন ঐতিহ্যবাহী এ বাজারে।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, পূজার জন্য প্রায় ১০০ উপকরণের প্রয়োজন হয়। রাজধানীতে যেসব পূজার আয়োজন হয়ে থাকে সেসব পূজার জন্য এসব উপকরণের অধিকাংশই শাঁখারীবাজার থেকে সংগ্রহ করা যায়।
এদিকে পূজা উপলক্ষে ঢাকার আশপাশের বিক্রেতারাও বিভিন্ন উপকরণ পাইকারি দরে কিনে নিচ্ছেন এখান থেকে। এছাড়া সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের পরিবারসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে এসেও কেনাকাটা করছেন এখানে। ক্রেতারা জানান, প্রতিমার সাজসজ্জা থেকে শুরু করে পূজার সব উপকরণই মেলে শাঁখারীবাজারে।
পূজার কেনাকাটা করতে এসেছেন শিল্পী রাণী সরকার। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, পূজার বাকি আর পাঁচ দিন। তাই এখন থেকেই অল্প করে কেনাকাটা করতে এসেছি। আজ চন্দন কিনেছি, লেস-মালাও কিনব। তিলক চন্দন আর মালা মুকুটও কেনা হবে। ছেলেমেয়েদের জন্যও কিছু কেনাকাটা করেছি। দামের দিক থেকে মোটামুটি কম দামেই জিনিসপত্র পেয়েছি এখানে।
শাখাঁরীবাজারে কেনাকেটা করতে নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছেন অমিতোষ পাল। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘প্রতিমার মুকুট, পূজার শাড়ি, পূজার গহনা, প্রতিমার চুড়া, শাড়ি এগুলো কিনছি। আমরা মালাসহ পূজার যা যা লাগে সবই মোটামুটি কিনছি।
কল্পনা রানি সরকার নামে আরেক ক্রেতা জানান, দুর্গাপূজার আরাধনায় প্রায় ১০০ উপকরণ লাগে। প্রায় সব ধরনের উপকরণ এখানে পাওয়া যায়। দুর্গাপূজা শুরু হয় মহাষষ্ঠীর কল্পারম্ভ দিয়ে। এরপর আসে বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস। পরে শুরু হয় সপ্তমীর নবপত্রিকা স্নান ও মহাস্নান, অষ্টমী পূজা, সন্ধিপূজা, নবমী পূজা ও দশমী পূজা। প্রতিটা ধাপে ধাপে কিছু নতুন নতুন উপকরণ সংযোজন হয়। তাই দুর্গাপূজার ফর্দ বিশাল হয়ে থাকে।
শাঁখারীবাজারের সাজ ঘরের ম্যানেজার সুদিপ সরকার বলেন, মানুষের সামগ্রিক ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে পূজার খরচও বেড়েছে। এ কারণে মানুষও পূজার ব্যয় কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। এবার প্রতিমাকে অনেক মৃৎশিল্পীই মাটি আর রং ব্যবহার করে পূজার জন্য প্রস্তুত করেছেন। এ কারণে মা দুর্গাকে সাজানোর জন্য কাপড়সহ কিছু জিনিসের চাহিদা একটু কম।
শাখাঁরীবাজারে বাদ্যযন্ত্রের কারিগর নিতাই কুমার বলেন, ‘ঢাক-ঢোল নতুন বিক্রি হওয়ার চেয়ে পুরোনোগুলো ঠিক করতে বেশি আসছেন বাদকেরা। পূজা সামনে থাকায় কাজের চাপ অন্য মাসের চেয়ে বেড়েছে।'
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর দেশে দুর্গাপূজার সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১১৮টি। এবার এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ১৬৮টিতে। যা গত বছরের চেয়ে ৫০টি বেশি। ঢাকা মহানগরে পূজার সংখ্যা ২৪২টি, যা গত বছরের চেয়ে ৭টি বেশি।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, ২৫ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে মর্তলোকে আহ্বান জানানো হবে দেবী দুর্গাকে। ১ অক্টোবর ষষ্ঠীর মাধ্যমে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। ৫ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব।
জেডএস