পাওনা ৪ হাজার কোটি টাকা
নুরজাহান গ্রুপের ৬ জনের পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ
নুরজাহান গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, এমডি ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতে দায়ের করা ১৫-২০টি মামলায় একাধিক ব্যাংকের পাওনা চার হাজার কোটি টাকারও বেশি। সাউথইস্ট ব্যাংকের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ গ্রুপের ছয়জনের পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এ ছাড়া তারা যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন, সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও আদালত নির্দেশ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ( ১৫ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে আসামিরা দেশত্যাগ করেছেন কি না, সে বিষয়ে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বিশেষ পুলিশ সুপারকে (ইমিগ্রেশন) নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম। তিনি বলেন, সাউথইস্ট ব্যাংকের পক্ষ থেকে নুরজাহান গ্রুপের ছয়জনের পাসপোর্ট জব্দ ও বিদেশগমন প্রতিরোধ করার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছিল। আদালত নুরজাহান গ্রুপের ছয়জনের পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া তারা যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন, তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
যে ছয়জনের পাসপোর্ট জব্দ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা হলেন— নুরজাহান গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান জাসমির সুপার অয়েল লিমিটেড ও তাসমিন প্রোপার্টিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ, জাসমির সুপার অয়েল লিমিটেডের পরিচালক ও নুরজাহান সুপার অয়েল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসমিন মনোয়ার প্রকাশ, জাসমির সুপার অয়েল লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও মেরিন ভেজিটেবল অয়েলস লিমিটেডের পরিচালক টিপু সুলতান, নুরজাহান সুপার অয়েল লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও জাসমির সুপার অয়েল লিমিটেডের পরিচালক জসিম উদ্দিন, জাসমির সুপার অয়েল লিমিটেডের পরিচালক ইফতেখার আল-জাবের ও মো. ফরহাদ মনোয়ার।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের চট্টগ্রামের জুবলী রোড শাখার পক্ষ থেকে অর্থঋণ আদালতে বুধবার একটি আবেদন করা হয়। আবেদনে বলা হয়, আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু হওয়ায় পর তারা পলাতক। এ ছাড়া তাদের বিদেশগমন প্রতিরোধ করার জন্য বা বিদেশ থেকে আগমনের সময় তাদের পাসপোর্ট জব্দ করে তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য বিশেষ পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ (বৃহস্পতিবার) চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান পাসপোর্ট জব্দের আদেশ দিয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বিচারক আজকের আদেশে বলেছেন, জহির আহমেদ, তাসমিন মনোয়ার প্রকাশ, টিপু সুলতান, জসিম উদ্দিন, ইফতেখার আল-জাবের ও মোহাম্মদ ফরহাদ মনোয়ারের বিরুদ্ধে গত ৮ সেপ্টেম্বর ৪৬৫ কোটি ৪৬ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭৫ টাকা খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করায় সাউথইস্ট ব্যাংকের আবেদনক্রমে পাঁচ মাসের দেওয়ানি আটকাদেশসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
এরপর ৯ সেপ্টেম্বর ২৫৩/২০২১ নম্বর জারি মামলায় ২৪২ কোটি ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ১৮১ টাকা খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করায় জহির আহমেদ রতনের বিরুদ্ধে ৫ মাসের দেওয়ানি আটকাদেশসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করা হয়।
এ ছাড়া জহির আহমেদ রতন, জসীম উদ্দিন ও তাসমিন মনোয়ারের বিরুদ্ধে ১২ সেপ্টেম্বর অর্থঋণ জারি-২৫২/২০২১ মামলায় ১২০ কোটি ৩১ লাখ ৪৯ হাজার ৬৯১ টাকা খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করায় পাঁচ মাসের দেওয়ানি আটকাদেশসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এরপর ১৩ সেপ্টেম্বর অর্থঋণ জারি-২৫১/২০২১ নম্বর মামলায় জহির আহমেদ রতন এবং টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে ২৬৭ কোটি ৯১ লাখ ৯০ হাজার ৪৫২ টাকা পরিশোধ না করায় পাঁচ মাসের দেওয়ানি আটকাদেশসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
তারা নুরজাহান গ্রুপ এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, এমডি ও পরিচালক। চারটি জারি মামলায় তাদের কাছে ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের মোট পাওনা এক হাজার ৯৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৬ হাজার ৭০১ দশমিক ২৪ টাকা। তারা উক্ত ডিক্রিকৃত টাকা পরিশোধে একক এবং যৌথভাবে আইনগতভাবে বাধ্য।
অর্থঋণ আদালত আজকের আদেশ বলেছেন, দায়িকদের বিরুদ্ধে এ আদালতে ১৫ থেকে ২০টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় ব্যাংকসমূহের দাবি (পাওনা) চার হাজার কোটি টাকার বেশি।
অর্থঋণ জারি ১৮/২০২০ মামলায় গত ৩ ফেব্রুয়ারি জহির আহমেদের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল ব্যাংকের আবেদনক্রমে পাঁচ মাসের দেওয়ানি আটকাদেশসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। জহির আহমেদের দেশত্যাগ ঠেকানোর জন্য শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শাহআমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিশেষ শাখার পুলিশ বরাবর আদেশের কপি পাঠানো হয়েছিল।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ১০ মাস অতিবাহিত হলেও জহির আহমেদকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়নি এবং তিনি কোনো পাওনাও পরিশোধ করেননি। তার বিরুদ্ধে চলমান মামলাসমূহেও কোনোরূপ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না।
আদালত বলেছেন, এ শীর্ষ ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আদায় না হওয়ায় এবং আইন আদালতের এখতিয়ারে না আসায় দেশের ব্যাংকিং খাতে আস্থাহীনতা এবং আমানতকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে। বছরের পর বছর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল না হওয়ায় আদালতে এসব মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সার্বিক বিবেচনায় ডিক্রিদারের (সাউথইস্ট ব্যাংকের) দরখাস্ত মঞ্জুর করা হলো।
জহির আহমেদরা যেন দেশত্যাগ করতে না পারে তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সকল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বরাবরে আদেশের কপি পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া তারা ইতোমধ্যেই দেশত্যাগ করেছেন কি না সে বিষয়ে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখার বিশেষ পুলিশ সুপারকে (ইমিগ্রেশন) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
কেএম/আরএইচ