হঠাৎ ইউটার্ন, লার্নার লাইসেন্সেই বাইকে রেজিস্ট্রেশন আরও তিন মাস
অদক্ষ চালককে সড়কে মোটরসাইকেল চালাতে নিরুৎসাহিত করা, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো এবং দুর্ঘটনা রোধে মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন করার জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সেখান থেকে কিছুটা পিছিয়ে এসেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
আজ ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। তবে হঠাৎ করেই ১৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে পাল্টে যায় সেই সিদ্ধান্ত। আপাতত চালকের লার্নার কার্ড থাকলেই মোটরসাইকেলের রেজিষ্ট্রশন ইস্যু করবে বিআরটিএ, এমন সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার্স ও ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মতিউর রহমান ঢাকা পোস্টকে ১৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বলেন, একটি চিঠি দিয়েছে বিআরটিএ। সেখানে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশনে আরও তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বর মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে।
• আরও পড়ুন : ড্রাইভিং লাইসেন্স করবেন যেভাবে
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ জুন বিআরটিএতে এক সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় চালকের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে মোটরসাইকেলের নতুন কোনো রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে না। তবে বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার্স ও ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অনুরোধ করেছিল, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে অন্তত কয়েক মাস সময় লাগবে। হুট করে যদি এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তবে মোটরসাইকেল শিল্প হুমকির মুখে পড়বে। তাই সেই সময় এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে ৩ মাস সময় বেঁধে দেয় বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ।
তবে এখন জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার্স ও ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীর কাছে অনুরোধ জানায়, মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন করার জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে আরও সময় প্রয়োজন। ওই অনুরোধের প্রেক্ষিতেই আবারও এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বিআরটিএতে। সেখান থেকেই এমন নতুন সিদ্ধান্ত আসে। আর নতুন সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানানো হয়েছে, ১৪ সেপ্টেম্বর বিআরটিএর পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) শীতাংশু শেখর বিশ্বাস স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) থেকে মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রদানের সময় সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকার বিষয়টি রেজিস্টারিং অথরিটি কর্তৃক নিশ্চিত করার বিষয়ে পত্র পাঠানো হয়। কিন্তু বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতীত শুধু ‘লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স’ গ্রহণে মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশনের সময়সীমা আগামী ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো।
চিঠিতে আরও বলা হয়, আগামী ১৫ ডিসেম্বর মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রদানের সময় সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকার বিষয়টি রেজিস্টারিং অথরিটি কর্তৃক নিশ্চিত করতে হবে। তখন চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া মোটরসাইকেল বিক্রি না করার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানাচ্ছে বিআরটিএ।
• আরও পড়ুন : অনুমোদন দিলেও মোটরসাইকেল চালনায় বিআরটিএর নিরুৎসাহ!
বিক্রেতাদের শঙ্কা ছিল মোটরসাইকেল বিক্রি কমবে
মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন করার জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স বাধ্যতামূলক- এমন সিদ্ধান্ত জানানোর পর থেকে ক্রেতা এবং মোটরসাইকেল বিক্রয় সংশ্লিষ্টদের মনে অনেকটা কালো মেঘ জমেছিল। কারণ হঠাৎ করেই এমন সিদ্ধান্তে মোটরসাইকেল বিক্রি কমে যাবে বলে আশঙ্কা ছিল মোটরসাইকেল বিক্রির সঙ্গে জড়িতদের।
মোটরসাইকেল কিনতে আগ্রহী কিন্তু বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই এমন এক ক্রেতা আশিকুর রহমান ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, অফিসে যাতায়াত সুবিধার্থে এই একটি মোটরসাইকেল কেনার কথা ছিল। কিন্তু শোরুমে গিয়ে জানতে পারি ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে বিআরটিএ রেজিস্ট্রেশন দেবে না। তাই ৫ দিনের মধ্যে রেজিষ্ট্রেশন পাওয়া যাবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় থাকায় আর মোটরসাইকেল কেনা হয়নি। আপাতত লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন করেছি।
মোহাম্মদপুরের একটি মোটরসাইকেল শোরুমের বিক্রেতা ওবায়দুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিষয়টার জন্য গত সপ্তাহ থেকে এখন পর্যন্ত অনেক ক্রেতাই ফিরে গেছেন। যদি সিদ্ধান্ত এমনই থাকে তবে বাজারে মোটরসাইকেল বিক্রি কমে যাবে। কারণ, আমাদের দেশে কতজন মানুষই বা মোটরসাইকেল কেনার আগে ড্রাইভিং লাইসেন্স করে থাকে?
এমএইচএন/এনএফ