সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী/ ছবি- সংগৃহীত

বিদেশে অর্থপাচারে জড়িত ‘স্বনামধন্য’ অনেকের তথ্য আছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ভারত সফর নিয়ে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচার এবং ডলার সংকট সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নজরদারিতে আনা হয়েছে বলেই জানা গেছে। আপনারা (সাংবাদিক) তো খুঁজে বের করেননি। অনেকের বিষয়ে এমন তথ্য আছে, যেগুলো লিখবেন কি না সন্দেহ আছে। অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তির ব্যাপারেও আছে। দুদক-বাংলাদেশ ব্যাংক এসব বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে। আপনারা তখন লিখবেন কি না সেটা দেখব।’

সুইস ব্যাংকের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে কিন্তু পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তদন্ত হচ্ছে। সুইস ব্যাংকে বহু আগে ই-মেইল পাঠিয়েছিলাম, তালিকা চেয়েছিলাম। কিন্তু কোনো তালিকা আসেনি।’

অর্থপাচার নিয়ে যে অভিযোগ আসে সেটা ‘সুনির্দিষ্ট নয়’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই বলে, কিন্তু সঠিক তথ্য কেউ দিতে পারে না। তবে, মানি লন্ডারিং বন্ধে নানা উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

ডলার সংকট ও রিজার্ভ কমা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডলার সংকট তো বাংলাদেশের একার নয়। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বেই এটা দেখা দিয়েছে। ডলার নিয়ে কিছু খেলা হচ্ছিল। সেটা মনিটরিং হয়েছে বলে স্বস্তি আনতে পেরেছি।’

এ সময় ভারত সফরের প্রাপ্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কী পেলাম সেটা আপেক্ষিক। এটা নির্ভর করছে আপনি কীভাবে দেখছেন তার ওপর।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর পাশে ওবায়দুল কাদের, মতিয়া চৌধূরী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী/  ছবি- সংগৃহীত

তিনি বলেন, কুশিয়ারার পানি বণ্টনে সমঝোতা নিয়ে অনেকে সমালোচনা করছেন। কতটুকু পানি আসল সেটা নিয়ে তাদের এই সমালোচনা। আমরা যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করলাম, এর ফলে পুরো সিলেট বিভাগ বিশেষ করে সিলেটের গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, কানাইঘাট, সিলেট সদর, জকিগঞ্জ উপজেলার ৫৩ হাজার ৮২০ হেক্টর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। সেচ প্রদানের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। এতগুলো জমি চাষের আওতায় এসে ফসল দেবে, সেই ফসল আমাদের দেশের মানুষেরই কাজে লাগবে। এটা নিয়েও যারা সমালোচনা করছে, তারা (বিএনপি) কী এনেছে?

জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা চাই সবাই নির্বাচনে আসুক। কিন্তু কেউ যদি না আসে তাহলে আমাদের কিছু করার নেই।

তিনি বলেন, এখন যারা তত্ত্বাবধায়ক বা ইত্যাদি ইত্যাদি বলে চিৎকার করছে, তারা ওয়ান ইলেভেনের কথা কি ভুলে গেছে? সেখান থেকে তো অন্তত সবাই মুক্তি পেয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত স্বাধীনভাবে কথা বলার যে অধিকার, চলার অধিকার, সমালোচনার অধিকার, প্রশংসা করার অধিকার, সবই তো পাচ্ছেন। কারো মুখ তো বন্ধ করে রাখছি না। বাধা দিচ্ছি না। মতপ্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি। সেটা তো স্বীকার করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন, গণভবন, ঢাকা/ ছবি- সংগৃহীত

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চৌদ্দ দল করেছি, জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করেছি। জাতীয় পার্টি আলাদা নির্বাচন করেছে, কিন্তু আমাদের সঙ্গে একটা সমঝোতা ছিল। নির্বাচনে যারা সবসময় আমাদের সঙ্গে ছিল, তারা থাকবে। আমাদের কোনো আপত্তি নেই। ভবিষ্যৎ নির্বাচনে কে কোথায় থাকবে সেটা সময়ই বলে দেবে।

গত ৫ সেপ্টেম্বর চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও একান্ত বৈঠক করেন তিনি। এতে নিরাপত্তা সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য সম্পর্ক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, মাদক চোরাচালান ও মানবপাচার রোধ সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর সফরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। স্মারক সই শেষে দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথ বিবৃতি দেন। সফর শেষ করে প্রধানমন্ত্রী গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে দেশে ফেরেন।

এসকেডি