জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ওয়াটারসেড মুমেন্ট: ট্রান্সফরমেটিভ সলিউশান টু ইন্টারলুকিং চ্যালেঞ্জেস। এবারের অধিবেশনে বিশ্ব নেতাদের বক্তব্যে যে বিষয়গুলো উঠে আসতে পারে সেসব বিষয় সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

ড. মোমেন বলেন, করোনা মহামারি ও বিশ্বে চলমান বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে খাদ্য ও জ্বালানি সংকট তৈরি হয়েছে। জালানির মূল্য বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন দেশে ব্যাপক মূল্যস্ফীতি হয়েছে। নতুন এ সংকটের ফলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হবে। 

মোমেন বলেন, এসব কারণে জাতিসংঘের এই সাধারণ অধিবেশনে করোনা মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা সংকটের পাশাপাশি খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা, বহুপাক্ষিকতাবাদ, টেকসই আবাসন, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল অবকাঠামো গঠনের বিষয়সমূহ আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল গুরুত্বপূর্ণ এসব ইস্যুতে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কিত অগ্রাধিকার বিষয়গুলো তুলে ধরবেন।

নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও জাতিসংঘে সাধারণ বিতর্ক পর্ব চলাকালীন বেশ কিছু উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশ নেবে বাংলাদেশ।

নিউইয়র্কে ‘ট্রান্সফরমিং ইজুকেশান সামিট’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের সভা আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। এতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ দুটি সেশনে শেখ হাসিনার সভাপতিত্ব করার কথা ছিল। কিন্তু ওই দিন ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কারণে এতে অংশ নিতে পারবেন না তিনি।

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ‘ট্রান্সফরমিং ইজুকেশান সামিট’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের সভায় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশান শীর্ষক স্পটলাইন সেশনে অংশগ্রহণ এবং লিডারশিপ রাউন্ড টেবিলে সভাপতিত্ব করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু ১৯ সেপ্টেম্বর লন্ডনে ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যে প্রধানমন্ত্রী অংশগ্রহণ করবেন তাই তিনি উচ্চ পর্যায়ের এ সভায় অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। শিক্ষামন্ত্রী ওই সামিটে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিত্ব করবেন।

আগামী ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্ল্যাটফর্ম অব ওয়েমেন লিডারসের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। মোমেন বলেন, এ সভায় প্রধানমন্ত্রী সংকট মোকাবিলায় তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীদের উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে তার নেতৃত্বের সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরতে পারেন।

গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপের সভা অনুষ্ঠিত হবে ২১ সেপ্টেম্বর এবং ওই গ্রুপে ছয়জন চ্যাম্পিয়নের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যতম। এ সভায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী তার সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করবেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

২১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ এবং জাতিসংঘ আবাসন সংস্থা যৌথভাবে সাইড ইভেন্টটি আয়োজন করছে। প্রধানমন্ত্রী টেকসই আবাসন বিষয়ক সাইড ইভেন্টটিতে অংশগ্রহণ করবেন এবং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বাস্তবায়িত আশ্রয়ণ প্রকল্পের সফলতা ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন।

২২ সেপ্টেম্বর অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেসিসটেন্স বিষয়ক একটি উচ্চপর্যায়ের সভায় প্রধানমন্ত্রী কো-চেয়ার হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন ।

রোহিঙ্গা সমস্যা এবং টেকসই আবাসন বিষয়ে পৃথক দুটি সাইড ইভেন্ট আয়োজন করবে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্ট ২২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী ওই সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ওআইসি সেক্রেটারিয়েট, কানাডা, সৌদি আরব, তুর্কি, গাম্বিয়া, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া রোহিঙ্গা বিষয়ক সাইড ইভেন্ট কো-স্পন্সর করবে। জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার, জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত, এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক রোহিঙ্গা বিষয়ে ব্রিফ করবেন।

প্রতিবারের ন্যায় এবারও প্রধানমন্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের আয়োজনে একটি গোল টেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন।

সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রীর একাধিক বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর যত দ্বিপাক্ষিক বৈঠক     

নিউইয়র্কে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ড. মোমেন জানান, কসভোর প্রেসিডেন্ট, ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট, স্লোভেনিয়ার প্রেসিডেন্ট, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের নির্বাহী পরিচালকের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। পৃথক বৈঠকগুলোতে প্রধানমন্ত্রী পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

এনআই/এসকেডি