সর্বনিম্ন ভাড়া ১০০ টাকা নির্ধারণসহ ১৫ দফা দাবি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টা স্বেচ্ছায় কর্মবিরতি পালন করছেন বাইকাররা। তারা বলেন, চালকদের ওপর থেকে নানা ধরনের বাধ্যবাধকতার অবসান হলে রাইড শেয়ারিংকে যাত্রীবান্ধব করা যাবে।

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‌ঢাকা রাইডেশেয়ারিং ড্রাইভারস ইউনিয়নের উদ্যোগে এই কর্মবিরতি ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছে চালকরা।

সংগঠনের সভাপতি রাজেশ খান বলেন, যাত্রীদের অভিযোগ আমরা বেশি ভাড়া নেই। কিন্তু যানজট ও অন্যান্য অজুহাতে যে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয় সেই টাকা আমরা পাই না। তা পায় অ্যাপস কোম্পানি। অ্যাপসের বিভিন্ন অযৌক্তিক নীতিমালার কারণে আমরা কম টাকা পাই। যা আমাদের ন্যায্য ভাড়ার চেয়ে কম।

তিনি বলেন, কিছুদিন যাবত উবার কোম্পানি আমাদের একটি ম্যাসেজ দিয়ে আসছে নতুন চুক্তিনামার জন্য যা সম্পূর্ণ ইংরেজি ভাষায়। আমাদের অনেকের বুঝতে অসুবিধা হয়। ফলে না বুঝে অনেকেই এটাতে সম্মতি দেই। রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা ২০১৭ এর অনুচ্ছেদ ‘চ’ এর ৭ ধারায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ রাইড শেয়ারিং সম্পর্কিত অ্যাপগুলোর ওয়েবসাইট এবং মোবাইল উভয় ভাষা ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষাও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় শহরে যাত্রীদের নিরবিচ্ছিন্ন সেবা দিচ্ছে রাইড শেয়ারিং শ্রমজীবী চালকগণ। ২০২১ সালে উবার রাইড শেয়ারে ভোক্তাদের কাছ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা আয় করেছে। কিন্তু রাইড শেয়ারিং সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো চালক ও যাত্রীদের যুক্তিসঙ্গত প্রাপ্য নিশ্চিত করছে না। উবার ও অন্যান্য সব কোম্পানি রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা ২০১৭ ভঙ্গ করে চলছে। 

অ্যাপ বেইজড ড্রাইভারস ফেডারেশন অব বাংলাদেশের দাবিগুলো হলো

১. মোটরযানের মালিক ও চালকদের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি করতে হবে। চুক্তিপত্রে সব পক্ষের অধিকার ও দায় দায়িত্বের বিষয় লিখিত ও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। 

২. উবারসহ সব রাইড শেয়ারিং সেবা দেওয়া কোম্পানিগুলোকে ড্রাইভারদের শ্রমিক হিসেবে মর্যাদা ও অধিকার দিতে হবে।

৩. রাইড শেয়ারিং অ্যাপসের ওয়েবসাইট ও মোবাইলের সব চুক্তিপত্র ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যা আইনে বাধ্যবাধকতা আছে।

৪. প্রতিষ্ঠান ও চালকদের মধ্যে চলমান সমস্যার সমাধান না হলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে।

৫. আইডি বন্ধের এক মাস পূর্বে লিখিত নোটিশের মাধ্যমে চালক বা গাড়ি মালিককে জানাতে হবে। অভিযোগ প্রমাণ ব্যতীত কোনো আইডি বন্ধ করা যাবে না। ইতিপূর্বে বন্ধ সব আইডি খুলে দিতে হবে ।

৬. রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক চালক ও যাত্রী উভয়ের ঝুঁকি বীমা নিশ্চিত করতে হবে। 

৭. সব রাইড শেয়ারিং করা চালকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ২৪ ঘণ্টা ড্রাইভার সাপোর্ট নম্বর খোলা রাখতে হবে। যাত্রী ও ড্রাইভারদের মাঝে দ্বন্দ সৃষ্টি হলে সমঝোতার ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. মিনিট, কিলোমিটার, বেইজ হিসেব করে পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে। বাইকের ক্ষেত্রে প্রতি ট্রিপে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা, সিএনজি ১৫০ টাকা কারের ক্ষেত্রে ২০০ টাকা নিশ্চিত করতে হবে।

৯. ১০ শতাংশের বেশি কমিশন নেওয়া বন্ধ করতে হবে। 

১০. রাইড শেয়ারিংয়ে থাকাকালে কোনো চালক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার দায়ভার অবশ্যই কোম্পানিকে নিতে হবে। পূর্বে রাইডে থাকাকালীন খুন হওয়া ব্যক্তি এবং ভবিষ্যতে এ রকম ঘটনা ঘটলে তার পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

১১. সালিসি আইন বাদ দিয়ে বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় আইন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আই.এল.ও) আইন শ্রম মন্ত্রণালয় এবং বিআরটিএর আইন কার্যকর করতে হবে।

১২. যাত্রীদের কাছ থেকে বুকিংয়ের নামে ১০ টাকা বুকিং ফি নেওয়া বন্ধ করতে হবে।

১৩. নতুন নিয়ম চালু করে চালকদের কাছ থেকে ট্যাক্স নেওয়া বন্ধ করতে হবে।

১৪. রাইড নেওয়া অবস্থায় যাত্রী কোনো ধরনের মাদকদ্রব্য নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পরলে চালকগণ দায়ী থাকবে না। 

১৫. ঢাকা চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ সব বিভাগীয় শহরগুলোতে পর্যাপ্ত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা এবং বেআইনিভাবে পুলিশি হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হালিম তালুকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিনসহ রাইড শেয়ারিংয়ের চালকরা।

আইবি/এমএ