‘আজ এয়ারপোর্ট রোডে কী হয়েছে, এত জ্যাম কেন? মহাখালী থেকে সকাল ৯টায় বাসে উঠে খিলক্ষেত আসতে বেলা সাড়ে ১১টা! কী হয়েছে এই রোডে’— সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যানজট সংক্রান্ত এমন প্রশ্ন অনেকের ওয়ালে ওয়ালে ঘুরছে।

বিশেষ করে যারা চাকরিজীবী বা ফার্মগেট-মহাখালী হয়ে উত্তরার দিকে যাচ্ছেন কিংবা মালিবাগ-রামপুরা-বাড্ডা হয়ে এয়ারপোর্ট রোডের দিকে যাচ্ছেন তাদের এমন প্রশ্ন বেশি। কারণ, মঙ্গলবার সকাল থেকে প্রচণ্ড যানজটের কবলে পড়তে হয়েছে রাজধানীবাসীকে। ঘণ্টা পর ঘণ্টা যানজটে বসে থেকেও গন্তব্যে পৌঁছানো যাচ্ছে না। একদিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ে, অন্যদিকে প্রগতি সরণি রোডের এয়ারপোর্টমুখী সড়ক স্থবির হয়ে আছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের যানজটের প্রভাব পড়েছে মিরপুর ইসিবি চত্বর পর্যন্ত।

এদিকে, সকাল থেকে রাজধানীজুড়ে থেমে থেমে বৃষ্টি ভোগান্তির মাত্রা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সবমিলিয়ে ত্রাহি অবস্থা সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সড়কে চলাচলকারীদের। 

যানজটের কারণ খুঁজতে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে গাজীপুরের টঙ্গি-চেরাগআলী এলাকার সড়কের খানাখন্দগুলো বৃষ্টির পানি জমে তলিয়ে গেছে। দুর্ঘটনার শঙ্কায় যানবাহনগুলো ধীরগতিতে পার হচ্ছে। ওই অংশে সড়কের উন্নয়নকাজ মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় বন্ধ রয়েছে। ফলে ভোগান্তির ভাগিদার হতে হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

আরও পড়ুন : শিক্ষার্থী পরিবহনে ব্যক্তিগত গাড়ি কমানোর উদ্যোগ সরকারে

এদিকে, বিমানবন্দর সড়কে সিঙ্গেল লেনে গাড়ি চলাচল যানজট বাড়ার অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী আলিম উদ্দীন। তার মতে, বৃষ্টির কারণে রাস্তার পাশে পানি জমে গেছে। তার ওপর উন্নয়নকাজের জন্য ব্যস্ততম এ রাস্তায় গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এতে আমাদের দৈনিক বেশ কয়েক ঘণ্টা সড়কেই কাটাতে হচ্ছে, ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

যানজট নিরসনে অনেকটা অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তা।

ডিএমপির ট্রাফিক কর্মকর্তারা বলছেন, গাজীপুর সড়কের সমস্যার সমাধান না করা গেলে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের যানজট আরও তীব্র হবে। যার প্রভাব পড়বে পুরো রাজধানীজুড়ে।

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) নাবিদ কামাল শৈবাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, গাজীপুরমুখী পুরো সড়ক অনেকটা স্থবির হয়ে গেছে। ১০-১৫টা করে গাড়ি পাস করতে আমাদের আধা ঘণ্টারও বেশি সময় লাগছে। 

মূল সমস্যার কোথায়? জানতে চাইলে তিনি বলেন, খোঁজ নিয়ে আমরা জানতে পেরেছি গাজীপুরের চেরাগআলিতে গাড়ি চলাচল একরকম বন্ধ। আমরা সেখানকার ট্রাফিক পুলিশকে অনুরোধ জানিয়েছি বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নিতে।

আরও পড়ুন : ব্যক্তিগত গাড়ি বন্ধে শুরুতে চার স্কুলে বাস চালু করছে ডিএনসিসি

গাজীপুর জেলা ট্রাফিক বিভাগের এক পরিদর্শক সড়কে দায়িত্বপালন অবস্থায় ঢাকা পোস্টকে মোবাইল ফোনে বলেন, মামলার কারণে চেরাগআলী সড়কের নির্মাণকাজ বন্ধ। নির্মাণকাজের কারণে সেখানে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। গর্তগুলো বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। এ কারণে গাড়িগুলো দেখেশুনে পার হচ্ছে। আজকের বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। আবার সড়কের কিছু অংশ ভাঙা। ফলে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। গাড়ির চাপ সামলানোর মতো বিকল্প ব্যবস্থাও নেই সেখানে।

ডিএমপির গুলশান ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সমস্যা গাজীপুরে আর এর ভোগান্তি পড়েছে রাজধানীজুড়ে। মহাখালী থেকে ১০টি গাড়ি আমরা এক ঘণ্টায় পাস করাতে পারছি না। যতক্ষণ পর্যন্ত গাজীপুরে ১০টি গাড়ি না ঢুকছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এখান থেকে ১০টা গাড়ি ছাড়তেও পারছি না। পুরো সড়ক স্থবির। 

যোগাযোগ করা হলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগের সহকারী কমিশনার আহসানুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, চেরাগআলী মোড়ে খানাখন্দ, ভাঙা রাস্তা। সেখানে বৃষ্টিতে পানি জমে গেছে, খানাখন্দ ডুবে গেছে। সড়কের উভয় লেনে যানচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে রাজধানী থেকে ছেড়ে আসা গাড়ির চাপ সামলানো যাচ্ছে না। বিকল্প কোনো সড়কও নেই যে ডাইভারশন করে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখব। যে কারণে আমরা গাড়ি পাস করাতে পারছি না। 

তিনি বলেন, এখানে নির্মাণকাজ চলছিল। মামলার কারণে এখন তা বন্ধ। খানাখন্দগুলো পানিতে ডুবে গেছে। প্রচণ্ড যানজটের বিষয়টি সিটি কর্পোরেশন, ট্রাফিক বিভাগ, জেলা পুলিশ ও মেট্রোপলিটন পুলিশ সবাই অবগত। ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে যানচলাচল স্বাভাবিক রাখা এবং যানজট সমস্যা নিরসনের চেষ্টা চলছে। 

জেইউ/এসএম