চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে এক ধাক্কায় ব্যয় বাড়ছে প্রায় ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে তিন বছরের এই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে সাত বছরে। মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার হতে শাহ-আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ প্রকল্পটি প্রথম সংশোধনের জন্য তোলা হচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পটি জুলাই ২০১৭ থেকে জুন ২০২০ সালে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া দুইবার মেয়াদ বৃদ্ধি করে জুলাই ২০১৭ থেকে জুন ২০২২ সাল পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু এসময়েও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে না পারায় প্রথম সংশোধন করতে চাইছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন হলে জুন ২০২৪ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হবে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

কর্মকর্তারা আরও জানান, ২০১৭ সালে প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় এর মূল ব্যয় ছিল ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। বর্তমানে প্রথম সংশোধনের মাধ্যমে ব্যয় ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। প্রথম সংশোধনের মাধ্যমে প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ছে ১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন : একনেকে উঠছে কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া চার লেন মহাসড়ক প্রকল্প

প্রকল্প সংশোধনের কারণে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় জানায়, কিছু নতুন অঙ্গ অন্তর্ভুক্তি; কিছু অঙ্গের পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস/বৃদ্ধি; এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অ্যালাইনমেন্টে পরিবর্তনের ফলে ফাউন্ডেশন, সাব-স্ট্রাকচার; সুপার-স্ট্রাকচারের ডিজাইন এ পরিবর্তন; অর্থায়নের ধরন পরিবর্তন এবং প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধির জন্য প্রকল্পটি সংশোধন করা হচ্ছে।

প্রকল্পের উদ্দেশ হচ্ছে— চট্টগ্রাম শহর এলাকা ও এর দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন; চট্টগ্রাম শহরের মধ্যে অবস্থিত চট্টগ্রাম এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (সিইপিজেড), কর্ণফুলী এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনের (কেইপিজেড) সঙ্গে সংযোগ স্থাপন; চট্টগ্রাম শহর কেন্দ্রে ভ্রমণ দূরত্ব ও ভ্রমণ সময় হ্রাস করা এবং বিদ্যমান যানজট নিরসন; বিমানবন্দরে যাতায়াতের পথ সুগম করা এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেলের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন।

প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে— ৫৯৬.১৮ কাঠা ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্রয়; ১৩ হাজার ৩৯ বর্গমিটার স্থাপনার ক্ষতিপূরণ; ২ লাখ ৮৩ হাজার ৭৫০ বর্গমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ; ৩ লাখ ৯১ হাজার ৬৭৭ বর্গমিটার রিকনস্ট্রাকশন অব রোড পেভমেন্ট; ২০ হাজার ২২৩ বর্গমিটার রোড মার্কিং; ৩ লাখ ৮ হাজার ৯৪৭ বর্গমিটার রোড মেইনটেনেন্স; ১ হাজার ৪৬টি বৈদ্যুতিক পোল স্থানান্তর; ৩ হাজার ৩৬৯টি এলইডি লাইট স্থাপন; ১০০টি সিসি টিভি ক্যামেরা (ক্যাবল এবং নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থাসহ); ১২টি টোল প্লাজা নির্মাণ; টিঅ্যান্ডটি পোল স্থানান্তর; ২ লাখ ৮৩ হাজার ৭৫০ বর্গমিটার প্লাম্বিং সিস্টেম (ফ্লাইওভার ও র‌্যাম্পসহ); ৬৬৬ মিটার আরসিসি ড্রেন; ৩ হাজার ৯২১ মিটার ব্রিক ড্রেন নির্মাণ; ২ লাখ ৪৯ হাজার ৩১৫ বর্গমিটার সৌন্দর্যবর্ধন (ল্যান্ডস্কেপিং); ৮ হাজার ৪৯১ ঘনমিটার মেডিয়ান নির্মাণ; এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কার্যক্রম মনিটরিং ভবন এবং ১৩টি ইলেকট্রিক্যাল কন্ট্রোল রুম নির্মাণ; গ্যাস লাইন স্থানান্তর এবং ওয়াসা লাইন স্থানান্তর করা।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সত্যজিত কর্মকার বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে চট্টগ্রাম ইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেডের সংযোগ স্থাপন হবে। এছাড়া শহর কেন্দ্রে ভ্রমণ দূরত্ব কমার পাশাপাশি যানজট নিরসন এবং বিমানবন্দর ও নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে যাতায়াত সহজ হবে। প্রকল্পটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপিতে ৪৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত আছে।

এসআর/এসএসএইচ