অনলাইনে শিশুদের যৌন হয়রানি বেড়েছে ৪ গুণ
অনলাইনে শিশুদের যৌন শোষণ, হয়রানি এবং নির্যাতনের হার বেড়েছে বলে উঠে এসেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক জরিপে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে চালানো এক জরিপের ভিত্তিতে এমন তথ্য দিচ্ছে আসক।
আসক বলছে, চলতি বছরে জানুয়ারিতে অনলাইনে ৩০ শতাংশ শিশু যৌন শোষণ, হয়রানি এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আগের বছর এই হার ছিল ৮.৩৯ শতাংশ। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে কোভিডের পর এ হার প্রায় ৪ গুণ বেড়েছে। আজ (রবিবার) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে আসকের শিশু অধিকার ইউনিটের সমন্বয়ক ওম্বিকা রায় বলেন, দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হয়েছে ঠিকই, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই আইনে অনলাইনে শিশুদের দ্বারা শিশু নির্যাতন বিষয়টিকে চিহ্নিত করে আলাদা কোনাে বিধান রাখা হয়নি, যার জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা বেড়েই চলেছে।
আসক জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আসকের শিশু অধিকার ইউনিট চারটি বিভাগের ৫টি জেলায় একটি সংক্ষিপ্ত জরিপ পরিচালনা করেছে। এতে ১০৮ জন তথ্যদাতার মধ্যে ৩০ শতাংশ শিশু জানিয়েছে, করােনাকালে তারা কোনো না কোনোভাবে ইন্টারনেটে নিপীড়ন বা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। নিপীড়িত শিশুদের ৫৬.২৫ শতাংশ কন্যা শিশু, ৪৩.৭৫ শতাংশ ছেলে শিশু।
করােনাকালে শিশুরা অনলাইনে যে ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিল- শিশুদের ব্যক্তিগত ও অসংবেদনশীল তথ্য ইন্টারনেটে প্রকাশ করা, অনলাইনে যৌন হয়রানি ও যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া, অশালীন প্রস্তাব দেওয়া, সাইবার বুলিং, ব্ল্যাকমেইলিং, পর্নোগ্রাফি এবং কোনো না কোনোভাবে অনলাইনে যৌনতা বিষয়ক ছবি বা তথ্য দেখতে পাওয়া ইত্যাদি।
আসক জানায়, করােনাকালে অনলাইনে নিপীড়নের শিকার শিশুদের মধ্যে ৮৮ শতাংশ জানিয়েছে তারা অপরিচিত ব্যক্তি কর্তৃক অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়েছে। মাত্র ৪১ শতাংশ শিশু এসব বিষয় তাদের অভিভাবক বা পরিবার-পরিজনকে অবহিত করেছে।
তথ্যদাতা ১০৮ জন শিশুর মধ্যে ৮৪ শতাংশ শিশু সােশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে। এদের সকলেই ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার ব্যবহার করে। পাশাপাশি ৩৮ শতাংশ শিশু ইমাে ব্যবহার করে এবং ১৬ শতাংশ শিশু হােয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে। যে শিশুরা সােশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে তাদের মধ্যে ৬৮ শতাংশ শিশু নিজস্ব আইডি ব্যবহার করে, অর্থাৎ তারা নিজস্ব নামে সােশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে।
অনলাইনে শিশুদের নিপীড়নের ঘটনাগুলো প্রতিরোধে বেশ কিছু সুপারিশও দিয়েছে আসক। এর মধ্যে আছে- শিশুদের মধ্যে নিরাপদ ইন্টারনেট বিষয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে সাইবার নিরাপত্তা, অনলাইনে শিশু যৌন নির্যাতনের ধরণগুলো চিহ্নিত করে সে সম্পর্কিত বিষয় পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্তিকরণ, সাইবার অপরাধ প্রতিরােধে অভিভাবকসহ সকল পর্যায়ের অংশীদারদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা, অভিভাবকদের তাদের শিশুদের নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপস ব্যবহারে উৎসাহী করতে সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগ নেওয়া ইত্যাদি।
এমএইচএন/এনএফ