চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতিদিন ২৪৯ টন প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জ্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে সংগৃহীত হয় ১০৯ টন আর ১৪০ টন অসংগৃহীত থাকে। চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতার তীব্র আকার ধারণের প্রধান কারণ অব্যবস্থাপনায় পড়ে থাকা প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জ্য।  

শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জ্যের কারণে পরিবেশ দূষণ ও বিরূপ প্রভাব এবং রাস্তা নির্মাণে বিকল্প ব্যবহার শীর্ষক এক গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের দুই শিক্ষার্থী পিয়াল বড়ুয়া ও আল আমিন। এটি তত্ত্বাবধান করেছেন চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. স্বপন কুমার পালিত। গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন। 

গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে পিয়াল বড়ুয়া বলেন, চট্টগ্রাম শহরে প্রতিদিন তিন হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ হিসাবে ২৪৯ টন হচ্ছে প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য। এসব বর্জ্যের মধ্যে আবার ৩৫.৬১ ভাগ পুনরায় ব্যবহারযোগ্য। ২৪৯ টন প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্যের মধ্যে সংগ্রহ করা হয় ১০৯ টন। আর বাকি পলিথিন - প্লাস্টিক অসংগৃহীত থেকে যায়। ২০৫১ সালের মধ্যে প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্যের পরিমাণ বেড়ে ৪২৮ টনে দাঁড়াবে।

আরও পড়ুন : বাবুলের কথায় ৩ লাখ টাকায় কিলিং মিশনে নামেন ৬ জন

প্লাস্টিক-পলিথিনের ফলে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা, বায়ু দূষণ, মাটি দূষণ, কর্ণফুলী নদীতে প্লাস্টিক-পলিথিনের স্তর পড়ে যাচ্ছে। এছাড়া প্লাস্টিক-পলিথিন কীভাবে মানব স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে তাও সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে।

এ সময় বলা হয়, পানযোগ্য পানি ও নিশ্বাসের সঙ্গে মাইক্রো প্লাস্টিক আমাদের দেহে প্রবেশ করছে। প্লাস্টিক-পলিথিনে কেমিক্যাল অ্যাডিটিভস থাকে যা ক্যান্সার, বন্ধ্যাত্ব এবং অটিজমের মতো ব্যাধিগুলোর সঙ্গে যুক্ত। এসব বর্জ্য পরিবেশে এসে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার (প্যাথোজেন) মতো অণুজীবকে আকর্ষণ করে যা পরবর্তীতে প্যাথোজেন ধারণকারী মাইক্রো-প্লাস্টিকগুলো আমাদের শরীরে প্রবেশ করে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।

কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ, পুনর্ব্যবহার, পাটের ব্যাগ-কাগজের ঠোঙার ব্যবহার বাড়ানো, জনসচেতনতা তৈরি, প্লাস্টিক-পলিথিনের বিকল্প হিসেবে নিষ্পত্তিযোগ্য পণ্যের উৎস খোঁজা ও প্লাস্টিক দ্রব্য ফেরতে পুরস্কার দেওয়া হলে এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব বলে গবেষণায় উঠে আসে।

এ সময়  চুয়েটের সাবেক উপাচার্য ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কর্ণফুলী চট্টগ্রামের প্রাণ। কর্ণফুলীকে বাঁচাতে হলে সবার আগে পলিথিনের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। এজন্য সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন।

চট্টগ্রামের নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আলীউর রহমান বলেন, পুরো চট্টগ্রাম মহানগরীর পলিথিন বর্জ্য কর্ণফুলী নদীতে মিশছে। এতে নদীর তলদেশে পলিথিনের বড় স্তর জমেছে। প্লাস্টিক সহজে রিসাইকেল করা গেলেও পলিথিন সহজে রিসাইকেল করা যায় না। এসব পলিথিন নদী থেকে সাগর পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। এতে মাছের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে কর্ণফুলী নদীতে মাছের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। 

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার পালিত, বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম, চট্টগ্রাম চেপ্টারের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দাশ, পরিবেশ সংগঠক মনোজ কুমার দেব প্রমুখ।

কেএম/এসকেডি