জাতীয় প্রেসক্লাবে ছাত্রদলের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ঘিরে ওই এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের।  আজ (রোববার) বেলা সাড়ে ১১টার কিছু আগে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। ১০ থেকে ১৫ মিনিট তুমুল সংঘর্ষ চলার পর আরও কিছুক্ষণ থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। 

সংঘর্ষ চলাকালে বেশ কয়েকজনকে আহত হতে দেখা যায়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তেও দেখা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশও ব্যাপক টিয়ারশেল ছুড়েছে। 

সংঘর্ষে আহত এক পুলিশ সদস্যকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।  ছবি: হাসনাত নাইম

ঘটনাস্থল থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক হাসনাত নাইম জানিয়েছেন, ছাত্রদলের আজকের কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় ব্যাপক পুলিশের উপস্থিতি ছিল। প্রায় ২৫০ পুলিশ সদস্য অবস্থান নিয়েছিলেন প্রেসক্লাবের সামনে। অন্যদিকে সকাল ১০টার দিক থেকে প্রেসক্লাবের ভেতরে জমায়েত হতে শুরু করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। 

ছাত্রদলের এই কর্মসূচির পূর্ব অনুমতি ছিল না বলে জানিয়েছে পুলিশ। ছাত্রদলের নেতাদের সঙ্গে পুলিশ কথা বলতে প্রেসক্লাবের ভেতরে গেলেও সেখান থেকে কোনো সমাধান আসেনি। তখনও প্রেসক্লাবের প্রধান ফটক বন্ধ ছিল।

পুলিশের ধাওয়ায় বেসামাল ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা

এরপর বেলা ১১টার কিছু পর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রেসক্লাবের ভেতর থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে সড়কে অবস্থান নেন। তখন পুলিশ তাদের সড়ক থেকে উঠে যাওয়ার কথা বললেও তারা যেতে রাজি হননি। এরপরই পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করলে মূলত সংঘর্ষের সূত্রপাত।

ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা পুুলিশের কাছে সমাবেশের অনুমতির জন্য আবেদন করেছি, কিন্তু আপনারা জানেন তারা আমাদের অনুমতি দেয় না। আমরা তো আর মারামাারি করতে সেখানে যাইনি, পুলিশ আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শুরুর আগেই হামলা করেছে। 

ইট-পাটকেল ছুড়ে ও বাঁশ নিয়ে হামলা চালানো হয় পুলিশের ওপর

সংঘর্ষে ছাত্রদলের ৩০ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়ে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, আমি নিজেই আহত হয়েছি। এখন একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। আহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ছাত্রদলের ১০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। 

ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের পুলিশ সড়ক ছাড়তে বাধ্য করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত

পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ঢাকা শহরের যেকোনো জায়গায় অনুষ্ঠান করতে হলে ডিএমপি কমিশনারের অনুমতি নিয়ে করতে হয়। আজকে ছাত্রদল কর্মসূচি করার জন্য কোনো অনুমতি নেয়নি। তাদের আমরা সকালে জানিয়েছি আপনারা অনুমতি নিয়ে কর্মসূচি করেন। সেটা না করে প্রেসক্লাবের এক ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে এসে পুলিশের ওপর হামলা করে, প্রেসক্লাবের ভেতর থেকে ইট-পাটকেলও মারল। আমরা খেয়াল করেছি, প্রেসক্লাবের ভেতরে কোনো ইট নেই। তাহলে এত ইট আসলো কোত্থেকে? তার মানে এই যে, তারা ইট সংগ্রহ করেছে এবং পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পুলিশের উপর হামলা করেছে। এটার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে আইনগতভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের উদ্যোগের প্রতিবাদে আজকের এই কর্মসূচি ছিল ছাত্রদলের। এই প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়।  

পুলিশ বলছে কর্মসূচির জন্য অনুমতি ছিল না ছাত্রদলের, ছাত্রদল বলছে পুলিশ তাদের অনুমতি দেয় না

এদিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান আগামীতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। 

এইচএন/এএইচআর/এনএফ