নতুন শুরুর দ্বারপ্রান্তে চট্টগ্রাম
• এক্সপ্রেসওয়ের ৮ কিলোমিটার খুলে দেওয়া হবে ফেব্রুয়ারির মধ্যে
• চলাচলে টোল দিতে হবে যানবাহনকে
• কাজ শেষ হয়েছে ৭০ শতাংশ
• বিভিন্ন সময়ে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে
• আরও এক বছর সময় চায় সিডিএ
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের মধ্যে। সে সময় তো গেছেই, তারপর আরও দু’বছর শেষ হতে চলেছে, এখনও এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। তবে আশার কথা হলো আসছে ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই এক্সপ্রেসওয়ের আংশিক খুলে দেওয়া হবে চট্টগ্রামবাসীর জন্য।
চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহৎ এই উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৭০ শতাংশ। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা থেকে নিমতলা পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
বিজ্ঞাপন
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন চলাচল শুরু হলে তার জন্য টোল দিতে হবে বলেও জানিয়েছে সিডিএ। তবে টোলের হার এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।
সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস ঢাকা পোস্টকে বলেন, চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ ৭০ শতাংশের মতো শেষ হয়েছে। পতেঙ্গা থেকে নিমতলা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ৮ কিলোমিটার অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে খুলে দেওয়া হবে। এই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।
• আরও পড়ুন : পাঁচ হাজার কোটি টাকায় বর্ষার অভিশাপ থেকে মুক্তির আশায় চট্টগ্রাম
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল চালু করা হবে এ বছরের শেষের দিকে। টানেল চালু হওয়ার জন্য বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থার দিকে নজর দিয়েছি। যাতে টানেল দিয়ে পতেঙ্গা হয়ে যারা শহরের দিকে আসবে, তারা যেন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে আগ্রাবাদ এলাকায় চলে আসতে পারে। পতেঙ্গা থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে নিমতলীতে এসে নামতে পারবে। ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে খুব সহজেই টানেল হয়ে চট্টগ্রামের বন্দর এলাকায় আসা যাবে। টানেল ঘিরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ৮ কিলোমিটার দ্রুত চালুর লক্ষ্য নিয়েছি। টানেল চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পতেঙ্গা এলাকায় গাড়ির চাপ বাড়বে। এতে যানজট হতে পারে। যাতে পতেঙ্গা এলাকায় যানজট না হয় সেজন্য আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ৮ কিলোমিটার চালুর কথা চিন্তা করছি।
চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ৩০০টিরও বেশি পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজও এগিয়ে চলছে। টানেল চালুর সঙ্গে সঙ্গে যেন এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যানবাহন চলতে পারে সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। তবে দেওয়ানহাট থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ এখনও শুরু করা যায়নি। রেললাইনের ওপর দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আসার নকশা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
এই অংশের কাজ চলছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, রেলওয়ে থেকে অনুমতি পাওয়া যায়নি। রেল থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর এই অংশের নকশা চূড়ান্ত করা হবে।
সিডিএ সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি যখন অনুমোদন পায়, তখন তিন বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০২০ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য ধরা হয়। নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত চার লেনের এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে ১৬ কিলোমিটার। ২০১৮ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হলেও ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী এর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। এরপর বিভিন্ন সময় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে তা ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। তবে সিডিএর পক্ষ থেকে আবেদনের প্রেক্ষিতে কাজের সময় আরও একবছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।
এছাড়া সিডিএ ১ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে ৪ হাজার ৭৬৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেয় মন্ত্রণালয়ে। এক লাফে দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিরূপণে একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে কমিটি গঠন করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। কমিটি ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রকল্প ব্যয় ৪ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা প্রস্তাব করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। তা এখনও পাস হয়নি।
• আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে মেট্রোরেল প্রকল্পের সমীক্ষায় লাগবে ১৮ মাস
চট্টগ্রাম বন্দরের আপত্তি, জমি অধিগ্রহণের অপেক্ষা, ট্রাফিক বিভাগের অনুমতি না পাওয়া, লালখান বাজার অংশের নকশা আপত্তিসহ নানা কারণে প্রকল্পের মেয়াদ ও খরচ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস ঢাকা পোস্টকে আরও বলেন, কাজ শুরুর পর বিভিন্ন সংস্থার আপত্তির মুখে প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ করা সম্ভব হয়নি। আপত্তির কারণে নকশাও বদল করাসহ অনেক সমস্যা ছিল। ফলে সময় ও ব্যয় দুটোই বাড়ছে। এক বছর বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।
সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার জন্য র্যাম্প ও লুপ থাকবে ১৬টি। টোল আদায় করা হলে স্বল্প দূরত্বের যানবাহন এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে উৎসাহী হবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. মাহমুদ ওমর ইমাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে টোল নেওয়া হলে দুই জায়গায় যানজটের সৃষ্টি হবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওঠার মুখে রাস্তায় প্রথম যানজট হবে। আরেকটা যানজট হবে ফ্লাইওভারের ওপরে। যেখানে টোল নেওয়া হবে সেখানেও যানজটের সৃষ্টি হবে। যানজট নিরসনের যে উদ্দেশ্যে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে, তা সফল হবে না।
তিনি আরও বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে তো অনেক ওঠানামার পয়েন্ট থাকবে। ফলে যেসব ওঠানামার পয়েন্ট থাকবে সবগুলোতেই টোল প্লাজা বসাতে হবে। এর ফলে মূল রাস্তা ও ফ্লাইওভারের ওপর যানজট সৃষ্টি হবে।
• আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে হবে মেট্রোরেল, কোইকার সহায়তায় সম্ভাব্যতা যাচাই
টোলের বিষয়ে কাজী হাসান বিন শামস বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পুরোটা শেষ হওয়ার পরে যানবাহন থেকে টোল আদায় করা হবে। আর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের রক্ষণাবেক্ষণ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ করবে। টোল আদায়সহ রক্ষণাবেক্ষণর কাজটি সিডিএ করবে। এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়ার পর চট্টগ্রাম নগরীর যানজট থাকবেই না বলা যায়।
এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণের পর বিদ্যুৎ বিলসহ রক্ষণাবেক্ষণে প্রতি মাসে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা খরচ হবে। টোল আদায় করা না হলে এ টাকা কোথা থেকে আসবে? নির্মাণকাজ শেষ করে পুরোপুরি চালুর আগে কীভাবে, কত টাকা টোল আদায় করা হবে, তা নির্ধারণ করা হবে।
কেএম/এনএফ