শ্বশুর কিংবা বাবার কাছ থেকে দান, ভুয়া পোল্ট্রি ও মৎস্য প্রকল্পে বিনিয়োগ দেখিয়ে অবৈধ আয়কে বৈধ করার অপচেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হয়নি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম টুকুর।

এমনকি অবৈধ সম্পদ স্ত্রীর নামে দেখিয়েও পার পাওয়া যায়নি। বরং সাতক্ষীরা সদরের কাটিয়া দাশপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মদিনাতুন্নেছা ও তার স্বামী আমিনুল ইসলাম টুকু উভয়েই মামলার আসামি হতে যাচ্ছেন। 

সম্পদের তথ্য গোপনসহ প্রায় কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগে এরইমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে মামলা অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

সম্প্রতি অনুমোদন দেওয়া মামলাটি শিগগিরই দুদকের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা মো. আলতাফ হোসেন বাদী হয়ে দায়ের করতে যাচ্ছেন। দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, আসামি মদিনাতুন্নেছা সহকারী শিক্ষক হিসেবে ২০১০ সালের ১৯ অক্টোবর সাতক্ষীরা সদরের কাটিয়া দাশপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। আর তার স্বামী মো. আমিনুল ইসলাম টুকু মাউশিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত।

আমিনুল ইসলাম টুকু সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-১) হিসেবে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে কর্মরত থেকে ঘুষ গ্রহণসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হয়েছেন, এমন অভিযোগ অনুসন্ধানে তার স্ত্রী মদিনাতুন্নেছার নামে ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি সম্পদ বিবরণী নোটিশ দেয় দুদক। এরপর ওই বছরের ২৯ মার্চ সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন মদিনাতুন্নেছা। তার দাখিল করা সম্পদ বিরবণীতে নিজ নামে মোট ১ কোটি ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৮৮২ টাকার স্থাবর ও ১ লাখ ৫০ হাজার ৫৭২ টাকার অস্থাবর সম্পদের বিবরণী দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে এক কোটি ৬ লাখ ৪৭ হাজার ৪৫৪ টাকার সম্পদের তথ্য দাখিল করেন মদিনাতুন্নেছা।

কিন্তু সম্পদ বিবরণী যাচাইয়ের সময় তার নামে মোট ১ কোটি ৩৮ লাখ ৭৪ হাজার ৫৭ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। এখানে তার নামে ৩২ লাখ ২৬ হাজার ৬০৩ টাকার বেশি সম্পদ অর্জনের তথ্য পায় দুদক।

অবৈধ সম্পদের বিবরণে বলা হয়েছে, আসামি মদিনাতুন্নেছা তার বাবা আব্দুল মান্নান সরদার ২০০১ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ১৩ লাখ ৪৬ হাজার ৮০৫ টাকা কাঠামারী মৎস্য প্রকল্পে জমি লিজ দিয়ে নিয়েছেন বলে দেখিয়েছেন। কিন্ত এর সমর্থনে সাতক্ষীরার 
মৎস্য প্রকল্পের কর্মকর্তার নামে যে ক্যাশ ভাউচারটি সংযুক্ত করেছেন তা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।

তাছাড়া ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে তিনি বাবার ওয়ারিশ হিসেবে জমি লিজের ১৫ লাখ টাকা এবং ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ১৫ লাখ ৭৮ হাজারসহ মোট ৩০ লাখ ৭৮ হাজার টাকা দেখিয়েছেন, তাও জাল কাগজে তৈরি বলে দুদকের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।

এছাড়া মদিনাতুন্নেছা সম্পদ বিবরণীতে ২০২০-২০২১ এবং ২০২১-২০২২ করবর্ষে পোল্ট্রি ফার্মের আয় হিসেবে সাড়ে ৩৯ লাখ টাকা দেখালেও আয়কর রিটার্নে দেখানো হয়নি। অনুসন্ধানে বৈধ উৎসও পাওয়া যায়নি। এভাবে অনুসন্ধানের সময় পাওয়া রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় ৭০ লাখ ৮০ হাজার ৩৩৭ টাকার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

সম্পদ বিবরণী যাচাইয়ের সময় দুদকের কাছে প্রমাণিত হয়েছে, আসামি মদিনাতুন্নেছা স্বামী আমিনুল ইসলাম টুকুর অবৈধ উপায়ে অর্জিত আয়কে বৈধ করার চেষ্টা করেছেন। এই অবস্থায় স্ত্রী মদিনাতুন্নেছাকে প্রধান আসামি ও স্বামী আমিনুল ইসলাম টুকুকে সহযোগী আসামি করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২), ২৭(১) এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলা দায়ের করতে যাচ্ছে দুদক।

আরএম/জেডএস