দুর্গাপূজার সময় ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়ার দাবি
দুর্গাপূজা চলাকালে ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য। তাদের এই দাবির ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়।
বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্সের মাল্টিপারপাস শেডে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আয়োজিত সমন্বয় সভায় এ দাবি জানানো হয়।
বিজ্ঞাপন
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য বলেন, গত বছর পূজার সময় কুমিল্লাসহ সারা দেশে যে ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে সরকার ও প্রশাসনের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য। আমাদের সম্প্রীতিকে নষ্ট করার জন্য। এরকম কাজ যারা করে তারা সংখ্যায় কিন্তু কম।
তিনি বলেন, কোনো পূজা মণ্ডপে ডিজে অনুষ্ঠান হবে না। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করব কিছু কিছু মণ্ডপে স্থায়ীভাবে পুলিশ দেওয়ার জন্য।
আরও পড়ুন: পূজায় ৩ দিনের ছুটিসহ চার দাবি হিন্দু মহাজোটের
আশীষ কুমার ভট্টাচার্য বলেন, পূজা উদযাপন পরিষদ সবসময় সতর্ক অবস্থায় আছে। আপনাদের মাধ্যমে অনুরোধ করব মোবাইলের ইন্টারনেটের গতিকে পূজা চলার চার-পাঁচ দিন স্লো করার জন্য। কারণ ফেসবুকে উল্টাপাল্টা লিখে অপপ্রচার চালানো হয়। ইন্টারনেট স্লো করলে গুজব থেকে বাংলাদেশ বাঁচবে। কারণ একটি গোষ্ঠী আছে উৎসবকে কেন্দ্র করে এরকম কার্যক্রমগুলো নেয়। সামনে নির্বাচন, একটি গোষ্ঠী সবসময় চাইবে সরকারের ধারাবাহিকতা ব্যাঘাত করার জন্য, প্রশাসনের সফলতা ব্যাহত করার চেষ্টা করবে তারা। তবে আমরা সচেতন আছি। যাতে পূজা ভালোভাবে করতে পারি।
অনুষ্ঠানে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। আর পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে ইন্টারনেট গতির স্লো করার বিষয়ে যে দাবি করা হয়েছে সে বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
এসময় পুলিশ কমিশনার বলেন, নিরাপত্তার জন্য সাদা পোশাকে পুলিশ নিয়োগের পাশাপাশি চার স্তরের নিরাপত্তা থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়াও পূজা উদযাপন উপলক্ষে সিএমপির পক্ষ থেকে বেশকিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনার মধ্যে আছে— পূজা মণ্ডপের প্রবেশমুখে পুরুষ ও নারীর জন্য পৃথকভাবে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও থার্মাল স্ক্যানার রাখতে হবে। পূজা মণ্ডপে মাস্ক ছাড়া প্রবেশ নিষেধ। মণ্ডপের চারদিকে বা ওপরের অংশ উন্মুক্ত রাখতে হবে। প্রতিমা প্যান্ডেলের আশপাশে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখতে হবে।
মণ্ডপের প্রবেশমুখে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা, সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও ভিডিও ফুটেজ রেকর্ড করার নির্দেশনা দিয়েছে সিএমপি। বলা হয়েছে, মণ্ডপের ভেতর একসঙ্গে ২০ জনের বেশি লোক অবস্থান করতে পারবে না। জরুরি সেবার ফোন ও মোবাইল নম্বর সংরক্ষণের নির্দেশনা দিয়ে সিএমপি বলেছে, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের জরুরি সেবার নম্বরগুলো দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে জেনারেটর প্রস্তুত রাখতে হবে। বিদ্যুতের ত্রুটিপূর্ণ সংযোগ দ্রুত মেরামত করতে হবে। সার্বক্ষণিক একজন ইলেকট্রিশিয়ান নিয়োগ করতে হবে। নিরাপদ স্থানে পূজামণ্ডপ স্থাপনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। মণ্ডপগুলোতে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা হিসেবে ফায়ার এক্সটিংগুইসার, পানি, বালি ইত্যাদি রাখতে হবে।
সিএমপি জানিয়েছে, যেকোনো ঘটনার সংবাদ দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিতে হবে। মাদক গ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পূজা মণ্ডপের আশপাশে মেলা বা জুয়ার আসর বসানো যাবে না। আতশবাজি-পটকা ফোটানো থেকে বিরত থাকতে হবে। ফেসবুকে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অথবা লোকমুখে যেকোনো ধরনের গুজব বা অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়ে নিকটস্থ থানায় অবহিত করতে হবে। আগামী ৫ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন করতে হবে। চট্টগ্রাম মহানগরী ২৬৯টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন করা হবে।
এসময় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) এম এ মাসুদ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আ স ম মাহতাব উদ্দিনসহ পুলিশের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, দুর্গাপূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা ও সরকারি অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
কেএম/এসএসএইচ