রাজধানীর অভিজাত পাড়া বনানীর ১১ নম্বর সড়কের পাশে লেকঘেঁষা বিলাসবহুল ভবন। ৭৭ নম্বর ওই বাড়ির ৯ম তলার বাসায় ঢুকতেই দেখা মেলে কারুকাজ করা অনেক শিল্পকর্ম। পুরো বাসার ইনটেরিয়র ডিজাইন দারুণ রুচিশীল ও নান্দনিক। এমন একটি বাসাতেই কিনা রাতের আঁধারে বসে মাদকের আসর। যেখানে যাতায়াত অভিজাত পরিবারের সন্তানদের।

বাসাটির মালিকের নাম সেলিম সাত্তার। তিনি সুইজারল্যান্ড ও বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক। জিএমজি গ্রুপভুক্ত সামাহ রেজর ব্লেডস ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক তিনি। বিদেশি নতুন নতুন মাদকের কালেকশন দেশে নিয়ে আসতেন সেলিম সাত্তার। আর উচ্চবিত্তদের নিয়ে নিজের বাসাতেই বসাতেন মাদকের আসর। পুরো বাসাটি বিলাসবহুল বারের ন্যায় সাজানো।

রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিলাসবহুল ওই ফ্লাটে অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। অভিযানে বিপুল পরিমাণ ফরেন লিকার, এমডিএমএ, কোকেন, এলএসডি, ক্যানাবিস চকলেট, কুশ ও সিনথেটিক গাঁজা জব্দ করা হয়। আটক করা হয় ফ্ল্যাটের মালিক সাত্তারকে।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে অভিযান শেষে ঘটনাস্থলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রোর(উত্তর) উপ-পরিচালক রাশেদুজ্জামান বলেন, এখানে মাদকের আসর বসত। হতো মাদকের বেচাকেনাও। ফ্ল্যাটের মালিক বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

সেলিম সাত্তারের ফ্ল্যাটটিতে শতাধিক শিল্পমূর্তি আছে। সেগুলো প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা স্থানীয় একজন স্বর্ণালঙ্কার কারিগরকে ডেকে ছিলাম। তিনি প্রাথমিকভাবে দেখে জানিয়েছেন, এসব মূর্তি কস্টি পাথরের নয়, পোড়া কাদায় তৈরি মূর্তি। বিষয়টি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে জানানো হবে। 

কত দিন ধরে এখানে মাদকের কারবার বা বার পরিচালনা চলছে- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সম্প্রতি এ বিষয়ে তথ্য পেয়েছি। জানা মাত্রই অভিযান পরিচালনা করলাম। আপনারা দেখতে পেয়েছেন কী পরিমাণ মাদকদ্রব্য এখানে জব্দ করা হয়েছে।

রাশেদুজ্জামান বলেন, সেলিম সাত্তার একজন দ্বৈত নাগরিক। বিদেশে তার অবাধ যাতায়াত ছিল। জব্দ সব মাদকই বিদেশি। তিনি নিজে দেশের বাইরে যাতায়াত করেন, কিংবা অন্যভাবেও আনতে পারেন। কার মাধ্যমে কীভাবে এসব বিদেশি মাদক তিনি এখানে মজুদ, সেবন ও বিক্রি করছেন তা জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত করে দেখা হবে। 

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার মাদক সেবন কিংবা বিক্রি কোনোটারই বৈধ লাইসেন্স নেই। এখানে বার পরিচালনারও অনুমোদন নেই। 

ফ্লাটটিতে সেলিম সাত্তারের সঙ্গে তার স্ত্রী সায়মা মোস্তফা শশিও থাকেন। তাদের দেখভালের জন্য দুজন কাজের লোকও আছে। মাদক কারবারে স্ত্রীর যোগসাজশ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান উপ-পরিচালক রাশেদুজ্জামান। তিনি জানান, আটক হওয়া সেলিম সাত্তারের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

অভিযানে অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাসায় মাদক ছাড়াও যৌন উত্তেজক বিপুল পরিমাণ ট্যাবলেট পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এখানে মাদক বিক্রি ও সেবনের পাশাপাশি অসামাজিক কার্যকলাপ চলত।

জেইউ/জেএস