ছিলেন মুরগি ফার্মের মালিক, পরিচয় দিতেন পুলিশ কর্মকর্তা
পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে প্রতারক বেলালকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব জানায়, বেলাল নিজের নামও লিখতে পারেন না, পড়াশুনা করেছেন দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। একসময় মুরগি ফার্মের মালিক ছিলেন তিনি। ২০২১ সালের মে মাসে প্রথম প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে র্যাব চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ।
তিনি বলেন, বুধবার রাত ১টার দিকে চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানার নাজিরহাট বাজার এলাকা থেকে সহযোগী মো. ওসমানসহ মো. বেলাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, ২০২১ সালে বেলালের মুরগি ফার্ম বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাংকে ঋণ ছিল অনেক। কোনোভাবেই ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারছিলেন না তিনি। এ সময় তার মাথায় প্রতারণার বুদ্ধি আসে। একপর্যায়ে ২০২১ সালের মে মাসে তিনি প্রথম প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করে। প্রথমে বেলাল তার বন্ধু-বান্ধব এবং পরিচিতজনকে বিভিন্ন পুলিশ অফিসার বা র্যাবের পরিচয় দিয়ে ভয় দেখাত। তারপর ২০২১ সালের মে মাসে সে একটি মুদি দোকানে সয়াবিন তেলের ডিলার সেজে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।
এরপর গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পুলিশ সেজে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের কাছে থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। এজন্য বেলাল নিজেকে ভূজপুর থানার এসআই পরিচয় দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের দফাদারের কাছ থেকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম্বার প্রার্থীদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে তাদের নির্বাচনে সহযোগিতা করার কথা বলে বিভিন্ন পরিমাণ টাকা আদায় করে। এটা করার পর তার প্রতারণার পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। এরপর সে বিভিন্ন ভিকটিমকে টার্গেট করে প্রতারণা করতে থাকে।
সম্প্রতি রাউজান থানা এলাকায় এক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এ ঘটনায় মৃতের বাবার কাছ থেকে ময়নাতদন্তের ঝামেলা এড়ানোর কথা বলে ৫ হাজার টাকা আদায় করে বেলাল।
তিনি বলেন, গত দেড় বছরে প্রতারণাই ছিল বেলালের একমাত্র আয়ের উৎস। সে গত দেড় বছরের ৫০-৬০ জনের কাছ থেকে বিভিন্ন পরিমাণের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
বেলালকে গ্রেপ্তারের বর্ণনা দিয়ে র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, সম্প্রতি হাটহাজারী ধলই ইউনিয়নে এক ছাত্রীকে উত্যক্ত করার জেরে মামলা ও ইউনিয়ন পরিষদে হামলার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে এই ঘটনাকে পুঁজি করে ইভটিজিংয়ের শিকার ছাত্রীর বাবাকে হাটহাজারী থানার এসআই পরিচয় দিয়ে ফোন করে বেলাল। একপর্যায়ে তার কাছে বকশিশ দাবি করে। দায়ের করা মামলার সহযোগিতার কথা বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সেজে ১০ হাজার টাকা নেয়। এরপর ওসি সেজে আবার ও ভিকটিমের কাছ থেকে টাকা নেয়। এরপর প্রতারক সার্কেল এএসপি সেজে ভিকটিমকে বিভিন্নভাবে ভয় ভীতি প্রদর্শন করে ৫০ হাজার টাকা দাবি করলে ভিকটিম তাকে ২৯ হাজার ৫৮০ টাকা বিকাশে প্রেরণ করে। এছাড়া বেলাল আবার নিজে এসপি সেজে ভিকটিমের বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়। এভাবে প্রতারক ভিকটিমের কাছ থেকে ৫৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।
একপর্যায়ে প্রতারক বেলাল পুনরায় র্যাবের অফিসার পরিচয় দিয়ে ভিকটিমকে ফোন দেয়। একপর্যায়ে জানায় মামলাটি বর্তমানে র্যাবের নিকট এসেছে। সে ওই মামলার বিষয়ে খোঁজ খবরের নাম করে তার নিকট পুনরায় টাকা দাবি করে। এবার বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে ভিকটিম খোরশেদুল আলম র্যাবকে বিষয়টি জানান।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি অনুসন্ধান করে ঘটনার সত্যতা পায় র্যাব। এরপর ফটিকছড়ি থানার নাজিরহাট বাজার এলাকা থেকে বেলাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার এড়াতে সে সাধারণ ফোন ব্যবহার করত। আর একটি ফোন সে এক সপ্তাহ ব্যবহার করেই দোকানে ফিরিয়ে দিত।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, বেলাল নিজে কোনো দিন কারো সঙ্গে দেখা করত না। টাকা নিত বিকাশে এবং বিকাশের দোকানেও যেত না। বিকাশের দোকানকে অন্য নম্বরে সেন্ড করতে বলত। এভাবে লোকচক্ষুর অন্তরালে দীর্ঘদিন ধরে সে লোকজনকে প্রতারিত করে আসছিল।
কেএম/এসকেডি