অপরিকল্পিত বিদ্যুৎ-রান্নার সংযোগ
হাজারীবাগে আগুনে পুড়ে ছাই বস্তির ১৮০ ঘর
রাজধানীর হাজারীবাগের বটতলা বাজার এলাকার বস্তিতে লাগা আগুনে পুড়ে গেছে ১৮০টি ঘর। বুধবার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা ১৬ মিনিটের দিকে সেখানে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। সংবাদ পাওয়ার ৩ মিনিটের মাথায় সেখানে পৌঁছে হাজারীবাগ ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট।
সর্বশেষ ফায়ার সার্ভিসের মোট ১০টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত সাড়ে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও সম্পূর্ণ পুড়ে যায় ১৮০টি ঘর।
বিজ্ঞাপন
আগুন নিয়ন্ত্রণের পর ফায়ার সার্ভিস বলছে, অন্যান্য বস্তির মতোই এখানেও একই সমস্যা দেখা গেছে। অপরিকল্পিতভাবে গড়া বস্তিতে দুই শতাধিক ভবনে অপরিকল্পিতভাবেই সংযোগ দেওয়া হয়েছিল বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন।
আগুন নিয়ন্ত্রণের পর ঘটনাস্থলে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা জানান ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেনেন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান।
তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন, এখানে বস্তির মতো একটি জায়গায় আগুন জ্বলেছে। আমরা প্রথম সংবাদ পাওয়ার তিন মিনিটের মাথায় নিকটবর্তী হাজারীবাগ স্টেশনের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।
তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের জায়গা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। চারদিকে বেশ কিছু পাকা ভবন, মাঝখানে অনেকগুলো ছোট ছোট ঘর-বাড়ি, যেখানে মানুষজন বসবাস করছিল। প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যে জানতে পেরেছি, আনুমানিক ১৮০টি ছোট ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে, যেগুলো মানুষদের ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। সর্বমোট ১০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। যেহেতু ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছিল সেজন্য দ্রুত আগুন নেভানো সম্ভব হয় বলে দাবি করেন তিনি। রাত ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণ ঘোষণা করা হয়।
হতাহত কেউ আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আমরা হতাহতের খবর পাইনি। তবে একটি টিম এখানে অপারেশন শেষ হওয়ার পরও অবস্থান করবে। হতাহতের খোঁজ, কোনো ডেড বডি, আগুনে পুড়ে যাওয়া কোনো ব্যক্তি যদি থেকে যায় তা তল্লাশি করবে। যেহেতু আগুন দ্রুত নির্বাপণ করতে সক্ষম হয়েছি, আশা করছি এরকম কিছু ঘটবে না।
অগ্নিকাণ্ডের ভবন সম্পর্কে তিনি বলেন, বস্তি এলাকায় কিছু কমন সমস্যা থাকে সেগুলো এখানেও ছিল। যেমন অপরিকল্পিতভাবে রান্না বন্দোবস্ত, অপরিকল্পিতভাবে বৈদ্যুতিক সংযোগ। বৈদ্যুতিক তার বিভিন্ন স্থানে কেটে কেটে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এখানে রান্নার জন্য সব ধরনের বন্দোবস্ত ছিল। যেমন- লাকড়ির চুলা, আবার গ্যাসের চুলা।
আমরা সব সময় বলে থাকি বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ঘর নির্মাণ করতে। কিন্তু সাধারণত বস্তিতে এ ধরনের কোনো নিয়ম মানা হয় না। যে কারণে বস্তিতে মানুষের নিরাপত্তা থাকে না। এখানেই ১৮০ বা ২০০টি ঘরে বসবাস করা মানুষগুলো অনিরাপদ ছিল। এ ধরনের পরিবেশে কখনো সেফটি থাকে না। এ ধরনের পরিবেশে আগুন লাগলে সাধারণত প্রাণহানি ঘটে বা অনেক মানুষের মৃত্যু হয় ব্যক্তিগত সম্পত্তি সরঞ্জাম বিনষ্ট হয়, বলেন তিনি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রথম যে দুটি ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট ঘটনাস্থলে আসে তাতে পানি ছিল না- এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিল্ডিং কোড অনুযায়ী এলাকার ভেতরে বা ভবনে পানি সরবরাহের বন্দোবস্ত থাকতে হবে। এটা যারা ব্যবহারকারী বা ভবনের মালিক তারাই বন্দোবস্ত করবেন, অথবা কাছেই জলাধার থাকতে হবে। যাতে আমরা দ্রুত ব্যবহার করতে পারি।
জেইউ/ওএফ