অভিযানে জব্দ করা আগ্নেয়াস্ত্র/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর চাম্বলের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় একটি অস্ত্র তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়ে দেশীয় তৈরি ৮টি ওয়ান শুটার গান, ২টি টু-টু পিস্তল এবং অস্ত্র তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।  

এ সময় অস্ত্র তৈরির মূল কারিগর জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব অস্ত্র মাদক কারবারি, জলদস্যু ও মহাসড়কে ডাকাত চক্রের সদস্যরা ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকায় কিনতেন। 

বুধবার ( ৩১ আগস্ট) দুপুরে র‍্যাব চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ।

তিনি বলেন, অভিযানে অস্ত্র তৈরির মূল কারিগর জাকির হোসেন আগে কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। তার কয়েকজন সহযোগী ছিলেন। তারা অভিযানের সংবাদ পেয়ে পালিয়ে গেছেন। তাদের আটকের চেষ্টা হচ্ছে।  

আরও পড়ুন : বাস ভাড়া কিলোমিটারে ৫ পয়সা কমানোর প্রস্তাব

তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি অস্ত্র তৈরি ও বিক্রি করা পর্যন্ত তিনটি গ্রুপ কাজ করে। সেখানে একটি গ্রুপ হচ্ছে অস্ত্রের কারিগর। কারিগরদের মূল হোতা জাকির হোসেন। তাকে অস্ত্র তৈরির কাজ দেয় দালালরা। আরেকটি গ্রুপ অস্ত্রের ক্রেতা নিয়ে আসে।

র‍্যাব-৭ অধিনায়ক বলেন, একসঙ্গে ৫ থেকে ১০টি অস্ত্রের অর্ডার নেন জাকির। এসব অস্ত্র তৈরি করতে ৫ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে। এসব অস্ত্র তৈরি করতে তাদের দেড় থেকে ২ হাজার টাকা খরচ হয়। এগুলো তারা দালালদের কাছে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। পরবর্তীতে তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা এসব অস্ত্র কিনে নেন। আর অস্ত্র ব্যবসায়ীরা তা বিভিন্ন ক্রেতাদের কাছ থেকে ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। এর মধ্যে ওয়ান শুটার গান, পয়েন্ট টু টু রাইফেল রয়েছে। প্রকারভেদে অস্ত্রের দামের পার্থক্য রয়েছে। ছোট ওয়ান শুটার গানের মতো অস্ত্র প্রস্তুত করতে ৫-৬ দিন সময় লাগে। 

আরও পড়ুন : এনআইডি স্বরাষ্ট্রে চলে গেলে নির্ভরশীলতা বাধাগ্রস্ত হবে : সিইসি

তিনি বলেন, জাকির ১ বছর ধরে এ পেশার সঙ্গে জড়িত। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সকলের দৃষ্টি এড়াতে মাঝেমধ্যে লোক দেখানো কৃষি কাজ করতেন। প্রতিটি অস্ত্রের জন্য এক হাজার টাকা করে পেতেন। অর্ডার পেলে প্রতিমাসে ২০-২৫টি অস্ত্র তৈরি করতে পারেন জাকির। 

তিনি আরও বলেন, এসব অস্ত্রের তিন ধরনের ক্রেতা রয়েছে। মাদক কারবারিরা এসব অস্ত্র ক্রয় করে। বাঁশখালী একটি জলদস্যু প্রবণ এলাকা। এখানকার জলদস্যুরাও এসব অস্ত্রের বড় ক্রেতা। এছাড়া মহাসড়কে যারা ডাকাতি করে তারাও এসব অস্ত্রের ক্রেতা। দালাল ও ব্যবসায়ী গ্রুপের সদস্যদের আটক করতে পারলে এ চক্রের বাকি পরিকল্পনা জানা যাবে। 

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা মূল কারিগরকে গ্রেপ্তার করেছি। দালাল ও ব্যবসায়ী গ্রুপকে ধরতে পারলে বলতে পারব অস্ত্রগুলো অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা হয় কি- না। আমাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করেছি। বাঁশখালী ও অন্যান্য অঞ্চলে অস্ত্রের কারখানা আছে কিনা সে বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। উদ্ধার করা সব অস্ত্রই সচল। এসব অস্ত্র দেশীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি।  

অস্ত্র তৈরির কারিগর জাকির

র‌্যাব অধিনায়ক বলেন, জাকির তার আরেক সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে অস্ত্র তৈরি করতেন। প্রকারভেদে একটি অস্ত্র তৈরি করতে তাদের ৫-১৫ দিন সময় লাগত। অস্ত্র তৈরির কাঁচামাল তারা স্থানীয় বিভিন্ন ওয়ার্কশপ থেকে সংগ্রহ করে ভাড়া করা বাড়িতে এনে কাজ করতেন। প্রধান কাঁচামাল হিসেবে বিভিন্ন সাইজের পাইপ ও লোহার টুকরা তারা ক্রয় করতেন। পরবর্তীতে তাদের দক্ষতার মাধ্যমে অস্ত্রের সব যন্ত্রাংশ এই কারখানাতেই প্রস্তুত করতে সক্ষম ছিল। 

কেএম/এসকেডি