চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। একদফা সময় বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে এ প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে সোমবার (২৯ আগস্ট) পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৭৪ শতাংশ। 

আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, আগামী বছরের আগস্টের মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল চলাচল শুরু হবে বলে আশা করছি। সেইসঙ্গে শেষ পর্যায়ে রয়েছে কক্সবাজারের ঝিনুকের আদলে করা দেশের প্রথম আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনের কাজও।

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার আর দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। বর্তমানে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে বন-পাহাড় নদী দিয়ে এই রেলপথটি নির্মিত হচ্ছে।

দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প ২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। পরে এক দফা বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ করা হয় ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। প্রকল্পে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়েনি।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, আগামী বছরের জুনে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইনের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এরপর জুলাই বা আগস্টে চালু করা হবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ। দেশের অন্যান্য জায়গার রেলপথ থেকে এই রেলপথের বৈশিষ্ট্য আলদা। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার আর দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। বর্তমানে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে বন-পাহাড় নদী দিয়ে এই রেলপথটি নির্মিত হচ্ছে। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকল্পটি ‘ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। রেলপথটি নির্মিত হলে মিয়ানমার, চীনসহ ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের করিডোরে যুক্ত হবে বাংলাদেশ।

জানা যায়, প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে ১০০ কিলোমিটার রেলপথ। দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ৩৯টি বড় সেতু, ২২৩টি ছোট সেতু ও কালভার্ট, বিভিন্ন শ্রেণির ৯৬টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হচ্ছে। হাতি চলাচলের জন্য থাকবে আন্ডারপাস। নয়টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার।

২০১৮ সালের ১ জুলাই এ অংশের ভৌত কাজ শুরু হয়। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়েছে ৭৪ শতাংশ। বাকি কাজ ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে শেষ হতে পারে। ইতোমধ্যে কক্সবাজারের রামু, ঈদগাঁও, পেকুয়া ও চকরিয়া অংশে রেলট্র্যাক বসানোর কাজ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে।

রেলপথের কাজের অগ্রগতির বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজ ৭৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। রেলপথটির ব্রিজের কাজ প্রায় শেষ। এগুলোর ফিনিশিং কাজ চলছে। তবে কিছু কালভার্ট নির্মাণের কাজ বাকি আছে।

তিনি বলেন, ২০২৩ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ট্রেন চালু করার আশা করছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২৩ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার। ওই সময়ে কিছু বৃষ্টিপাত থাকে। তবে আশা করছি ২৩ সালের আগস্টের মধ্যে ট্রেন চলাচল শুরু করতে পারবো। 

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণে হাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর নির্বিঘ্নে চলাচল করার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এই রেলপথে হাতি চলাচলে একটি ৫০ মিটার দীর্ঘ ওভারপাস ও তিনটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। 

প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাহাড় কেটে সমতল করে একটি ওভারপাসটি করা হচ্ছে। যাতে হাতি ও অন্যান্য প্রাণী তাদের চলাচলের পথটি স্বাভাবিক ও স্বচ্ছন্দ মনে করে। ওভারপাসের কাজটি এখনও চলছে। আর ওভারপাসের নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন। এছাড়া নির্মাণ করা হয়েছে তিনটি আন্ডারপাস। আন্ডারপাস দিয়ে চলবে ট্রেন। তিনটি আন্ডারপাসের কাজ শেষ বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। 

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের ঝিলংঝা ইউনিয়নের চান্দেরপাড়া এলাকায় তৈরি হচ্ছে ঝিনুক আকৃতির আইকনিক ভবন। দেশের একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশন এটি। ২৯ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা রেলস্টেশন ভবনটি ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭ বর্গফুটের। ভবনটি হবে ছয়তালা। মূল ভবনের সামনে খোলা মাঠে তৈরি হবে ঝিনুকাকৃতির দৃষ্টিনন্দন একটি ফোয়ারা। যাত্রীরা ঝিনুক ফোয়ারা দিয়ে স্টেশনে প্রবেশ করবেন। তারপর চলন্ত সিঁড়ির মাধ্যমে পদচারী–সেতু হয়ে উঠবেন ট্রেনে। আবার ট্রেন থেকে নেমে ভিন্ন পথে বেরিয়ে যাত্রীরা পা বাড়াবেন সৈকতশহরে। এ জন্য তৈরি হচ্ছে গমন ও বহির্গমনের পৃথক দুটি সড়ক। থাকছে গাড়ি পার্কিংয়ের তিনটি বড় জায়গা। ভবনের উত্তরে ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থের তিনটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে। প্রতিটি প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য ৬৫০ মিটার ও প্রস্থ ১২ মিটার। এছাড়া এই স্টেশনটিতে পর্যটকেরা লাগেজ স্টেশনে রেখে সারা দিন সমুদ্রসৈকত বা দর্শনীয় স্থান ঘুরে রাতের ট্রেনে আবার ফিরতে পারবেন নিজ গন্তব্যে।

এছাড়া ভবনটিতে থাকবে টিকিট কাউন্টার, অভ্যর্থনাকক্ষ, তথ্যকেন্দ্র, মসজিদ, শিশুদের বিনোদনের জায়গা,পেসেঞ্জার লাউঞ্জ,  শপিং মল, রেস্তোরাঁ, তারকামানের হোটেল, রেস্তোরাঁ, কনফারেন্স হল ও কর্মকর্তাদের কার্যালয়।

রেল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বপ্নপূরণের পথে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজ। আইকনিক রেলস্টেশনির ছয়তলা ভবনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন ফিনিশিং কাজ চলছে। এখানে পর্যটকদের জন্য লকার সুবিধা, হোটেল, শপিংমলসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের মূল্য বাড়ার কারণে সবধরনের নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদকালও বাড়ানো হয়েছে। এতে করে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনা আছে কি না এই প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে না। আশাকরি বাড়বে না। ভবিষ্যতের কথা বলা কঠিন। 

কেএম/এসএম