সরকারি কর্মচারীদের ফৌজদারি অপরাধ
গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতির আইনে অপরাধ থেকে দায়মুক্তির কথা নেই
ফৌজদারি মামলায় সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার বিধান করা হয়েছে তাদের অহেতুক হয়রানি থেকে রক্ষা করার জন্য। এখানে অপরাধ থেকে দায়মুক্তির কথা বলা হয়নি। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন আজ জাতীয় সংসদে এ কথা বলেন।
সোমবার (২৯ আগস্ট) সংসদে ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইন সংশোধনে আনা একটি বিল উত্থাপনের সময় একটি আপত্তির জবাব দিতে গিয়ে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
এসময় প্রতিমন্ত্রী জানান, গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতি সংক্রান্ত আলোচিত বিধানটিকে ‘বেআইনি’ বলে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করবে সরকার।
সরকারি চাকরি (সংশোধন) বিল-২০২২ সংসদে তোলার বিষয়ে স্পিকারের অনুমতি চাইলে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ আপত্তি জানান। তিনি বলেন, এই আইনটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সম্প্রতি উচ্চ আদালতের একটি রায় হয়েছে। তাই এই আইনটি অকার্যকর। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া সংবিধানের সঙ্গে যায় না।
যারা অপরাধ করবে তাদের কি আইনের আওতায় আনা হবে না? এমন প্রশ্ন রেখে হারুন বলেন, আগে এই আইনে যেসব অসংগতি আছে সেগুলো দূর করতে হবে।
জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, আইনে কারও ব্যক্তিগত অপরাধের দায়মুক্তি নেই। সরকারি কর্মচারীরা যাতে অহেতুক হয়রানির শিকার না হন সেজন্য ভারতসহ বিভিন্ন দেশের আইনে এই বিধানটি আছে। সিআরপিসির ১৯৭ ধারাতেও এটি আছে। এ বিষয়ে আমরা লিভ টু আপিল করব।
গত ২৫ আগস্ট হাইকোর্ট একটি রায়ে ফৌজদারি মামলায় সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার বিধান ‘বেআইনি’ ঘোষণা করে।
রায়ে আদালত বলেছে, ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইনের ওই ধারা ‘সংবিধান পরিপন্থী এবং মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী’।
২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ এর গেজেট জারি হয়। এরপর ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সরকারের এক গেজেটে ১ অক্টোবর থেকে এ আইন কার্যকর হয়।
আইনের ৪১ (১) ধারায় বলা হয়, ‘কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সহিত সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হইবার পূর্বে, তাহাকে গ্রেপ্তার করিতে হইলে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করিতে হইবে।’
নানা মহলের সমালোচনার মধ্যে আইনের এ ধারা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর জনস্বার্থে হাইকোর্টে আবেদন করে পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)।
প্রাথমিক শুনানির পর ওই বছরের ২১ অক্টোবর রুল জারি করে হাইকোর্ট। সরকারি চাকরি আইন- ২০১৮-এর ৪১(১) ধারা কেন বেআইনি ও বাতিল করা হবে না এবং এ ধারা সংবিধানের ২৬(১) ও ২৬(২), ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে।
এসআর/এসকেডি