চা-শ্রমিকদের মজুরি ৩০০ টাকা নির্ধারণের দাবি
চা-শ্রমিকদের দ্বিবার্ষিক চুক্তি সম্পাদনে সময়ক্ষেপণের অপকৌশল বন্ধ করে দৈনিক নগদ মজুরি ন্যূনতম ৩০০ টাকা নির্ধারণসহ ন্যায্য দাবিগুলো মেনে নেওয়া এবং আন্দোলনরত অনাহারক্লিষ্ট চা-শ্রমিকদের কাছ থেকে ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ রাখার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট।
শুক্রবার (২৬ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট।
বিজ্ঞাপন
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, চা-শ্রমিকদের দৈনিক নগদ মজুরি ৩০০ টাকা নির্ধারণসহ সাত দফা দাবিতে চা-শ্রমিকরা গত ১৫ দিন ধরে কর্মবিরতি পালন করছে। শ্রমিকরা মজুরিবিহীন রেশনবিহীন অবস্থায় অর্ধাহার-অনাহারে দিনযাপন করেও ন্যূনতম মানসম্পন্ন মজুরির দাবি উত্থাপন করছে, সেই সময় রাষ্ট্রের জমি ইজারা নিয়ে মালিক বনে যাওয়া ইজারাদাররা সোনারগাঁ হোটেলে বসে হাজার টাকা দামের চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে চা-শ্রমিকদের দৈনিক ৪২২ টাকা মজুরি দেওয়ার মিথ্যা গল্প শোনাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল মহাসড়ক অবরোধ চা-শ্রমিকদের
তিনি বলেন, বাগান মালিকরা একর প্রতি বাৎসরিক ৩০০ টাকা খাজনা পরিশোধ করে সেই ক্ষেত্রে প্রতি চা-শ্রমিকের জন্য অর্ধ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত ঘরের জন্য কীভাবে দৈনিক ৭৬ টাকা ব্যয়ের হিসাব করা যায়? রেশন বলতে নিম্নমানের যে চাল বা আটা দেওয়া হয় তার জন্য দেখানো হিসাব প্রকৃত ব্যয়ের চেয়ে অনেক বেশি। আবাসন, রেশন, নামমাত্র চিকিৎসা সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা বাবদ ব্যয় কোনোভাবেই ৮০ থেকে ১০০ টাকার বেশি নয়। বাগান মালিকদের ভাষ্য অনুসারে শ্রমিকদের আন্দোলনের ফলে দৈনিক ২০ কোটি টাকার চা পাতা নষ্ট হচ্ছে। অর্থাৎ চা শ্রমিকরা প্রতিদিন ২০ কোটি টাকার উৎপাদন করে তার বিপরীতে ১ লাখ ৪ হাজার স্থায়ী আর ৩৬ হাজার অস্থায়ীসহ মোট ১ লাখ ৪০ হাজার শ্রমিকের মজুরির জন্য ব্যয় করে মাত্র ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ৩০০ টাকা হারে নগদ মজুরি আর অন্যান্য সুবিধাসহ মজুরি বাবদ দৈনিক ৪০০ টাকা ব্যয় করলেও মজুরি বাবদ দৈনিক মোট ব্যয় হবে ৫ কোটি ৬০ লাভ টাকা। আর উদ্বৃত্ত থাকবে ১৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। তাই যৌক্তিক মুনাফার বিচারে চা-শ্রমিকদের ৩০০ টাকা মজুরির দাবি মানতে কালক্ষেপণ আধুনিক দাস ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার অপকৌশল মাত্র।
উপস্থিত নেতারা আন্দোলনরত চা-শ্রমিকদের কাছ থেকে ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, চা-শ্রমিকরা সন্তানদের লেখাপড়া করানোর খরচ চালাতে গিয়ে কিংবা চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে সুদের জালে জড়িয়ে অমানবিক কষ্টের মধ্যে পড়েন। দেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় পানীয় উৎপাদনকারী এই শ্রমিকদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য রাষ্ট্রকে সুদবিহীন দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বা বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। চা-বাগান মালিকদের নামমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র নয়, হেলথকার্ডের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রশাসনের যেসব কর্তা ব্যক্তিরা আন্দোলনের পেছনে বহিরাগতদের উসকানি খুঁজছেন তাদের উদ্দেশে তারা বলেন, রাষ্ট্রের কর্মচারী হিসেবে ব্যক্তি মালিকের তোষণ নয়, বরং সংবিধান অনুসারে বৈষম্যহীন ভাবে প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা আপনাদের দায়িত্ব ছিল। তাই ষড়যন্ত্র, উসকানি ইত্যাদি শব্দমালা দিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার অপচেষ্টার পরিবর্তে চা-শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মচারীদের মানবিক ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান নেতারা।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুলের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সহ সম্পাদক ইমাম হোসেন খোকন, অর্থ সম্পাদক জুলফিকার আলী, কেন্দ্রীয় সদস্য আফজাল হোসেন। সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ প্রমুখ।
আইবি/এসএসএইচ