নামের মিলে ৬ মাস কারাভোগের পর মুক্তি পেলেন জাসেদুল
চট্টগ্রামে নামের মিল থাকায় অন্যজনের সাজা ভোগ করা জাসেদুল হক জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হয়ে কক্সবাজারের কারাগারে বন্দি ছিলেন তিনি৷ বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টার দিকে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর পাহাড়তলী থানার একটি মাদক মামলার বিচার শেষে জাসেদুল হক নামে এক আসামিকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানা করেন চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ। জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে। দণ্ডিত জাসেদুল কক্সবাজার জেলার রামু থানার রাজাকুল সিকদারপাড়ার ওবায়দুল হকের ছেলে।
বিজ্ঞাপন
এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় নামের মিল থাকায় রাজারকুল বাজার সিকদারপাড়া এলাকা থেকে রামু থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে জাসেদুলকে। কিন্তু গ্রেপ্তার জাসেদুল কারাগারে গিয়ে জেল সুপার নেছার আলমকে জানান, তিনি অপরাধী নন। সাজাপ্রাপ্ত আসামিও নন। নাম ও ঠিকানা মিল থাকার কারণে প্রকৃত আসামির বদলে জাসেদুল জেলা খাটার বিষয়টি কক্সবাজার কারাগার কর্তৃপক্ষকে জানান ২৮ জুন। এরপর ৩০ জুন কক্সবাজার কারাগারের জেল সুপার মো. নেছার আলম আদালতের নজরে আনেন।
অপরদিকে মূল আসামি জাসেদুল জামিনে গিয়ে পলাতক৷ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তারের পর তিনি পুলিশকে নিজের নাম ঠিকানা গোপন রেখে নিজেকে কক্সবাজারের জাসেদুল পরিচয় দেন।
এরপর গত ৩ জুলাই চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞার আদালতে জাসেদুলকে হাজির করা হয়। ওই দিন আদালত জেলখানার ছবি সম্বলিত রেজিস্টার খাতাসহ সব নথি পর্যালোচনা করে দেখেন বর্তমানে কারাগারে থাকা জাসেদুল হক প্রকৃত আসামি নন।
কিন্তু কারাগারে থাকা জাসেদুল হক প্রকৃত আসামি হিসেবে হাইকোর্টে আপিল করেন। আপিলে ৬ মাসের জামিন আদেশপ্রাপ্ত হন। পরবর্তী জাসেদুল হক কক্সবাজার কারাগারে মাধ্যমে প্রকৃত আসামি নন মর্মে আদালতকে জানান। আদালত তার আবেদন এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পর্যালোচনা করে মামলাটি হাইকোর্টে আপিল দায়ের থাকা আসামির মুক্তির বিষয়ে উচ্চ আদালতে নির্দেশনার কাগজপত্র হাইকোর্টে পাঠান।
চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী ওমর ফুয়াদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, জামিন আদেশের মূলে জাসেদুল হককে মুক্তির আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদেশের কপি বৃহস্পতিবার আমাদের কাছে আসে। পরে যাবতীয় কার্যক্রম শেষে দুপুর ২টার দিকে চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী থানার পশ্চিম নাসিরাবাদ হালিশহর রোডের সামনে ২০১১ সালে ১৫০ পিস ইয়াবাসহ জাসেদুল হক নামে প্রকৃত আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতবছরের ২২ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞার আদালতে মাদকের মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড, ১ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন জাসেদুল হককে। প্রকৃত আসামি কারাগারে থাকা জাসেদুল হকের নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করেন। কিন্তু জাসেদুল হক ২০১০ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় ছিলেন।
জাসেদুল হক কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমি ঘটনার সময় মালয়েশিয়ায় ছিলাম। আমাকে যখন পুলিশ গ্রেপ্তার করে তখন বলছি আমি অপরাধী নয়। তখন পুলিশ আমার কথা শুনেনি। আমি বিনাদোষে কারাগারে ছিলাম। যাতে আমার মতো কারাগারে কাউকে থাকতে না হয়, সেজন্য কারাগারে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত।
কেএম/এসকেডি