অনিয়ম ঘোচাতে জনবল চাইল ঢামেক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের নাকচ
জরুরিভিত্তিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ওয়ার্ড বয়সহ জনবল নিয়োগের চাহিদা নাকচ করে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। জনবল পেলে হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও রোগীদের নানা ধরনের সেবায় আমূল পরিবর্তন করা যেত বলে জানায় ঢামেক।
বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ে ৮৮ জনের চাহিদাপত্র দিয়েছিলাম। তাদেরকে ডেইলি লেবার (দৈনিক শ্রমিক) হিসেবে আমরা নিতে চাচ্ছিলাম। যারা পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ওয়ার্ড বয় হিসেবে কাজ করবেন। কিন্তু সেটা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।’
বিজ্ঞাপন
নাজমুল হক বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেলে অনেকগুলো চক্র রয়েছে। বাইরে থেকে আসা সংঘবদ্ধ চক্রগুলো সেবার নামে রোগীদের ফাঁদে ফেলে তাদের থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়। তারা স্ট্রেচার, ট্রলিতে করে রোগীদের এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে আনা-নেওয়াসহ নানাভাবে সহযোগিতার কথা বলে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা করে নিয়ে নেয়। আমরা সাধ্যমতো সেগুলো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। তবে অনেক সময় আমাদের কিছু করার থাকে না।’
হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এই অবস্থার পেছনে অন্যতম কারণ দীর্ঘদিন ধরে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ বন্ধ থাকা ও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ দেওয়া। পাশাপাশি বাড়তি সুবিধা আদায়ে রোগী ও স্বজনদের ইচ্ছাও দুর্নীতিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপস্থিত রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেখানকার ট্রলিতে রোগী আনা-নেওয়া, সিট পাওয়া, লাইনে না দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্যাথলজি টেস্ট করার ক্ষেত্রে রোগীদের অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়।
সজিব মিয়া নামের এক রোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা পোস্ট-কে বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে এলেই বাড়তি টাকা দিতে হয়। বাড়তি টাকা না দিলে কাজ হয় না। তাই বাধ্য হয়ে দেই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্ট-কে বলেন, ‘হাসপাতালের তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ৪০ ভাগ পোস্ট ফাঁকা। প্রতিদিন জরুরি বিভাগে অসংখ্য রোগী আসেন। কিন্তু এত রোগী অ্যাটেন্ড করার জনবল নেই। তখন আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কিছু লোক রাখতেই হয়। এক্ষেত্রে হাসপাতালের আশপাশের কিছু মানুষ হুইল চেয়ারে রোগী আনা-নেওয়া করেন। এরা রাজনৈতিকভাবে বেশ শক্তিশালী। এরা কখনও হাসপাতালের হুইল চেয়ার ব্যবহার করেন না। তারা সবসময় নিজস্ব চেয়ার ব্যবহার করে ও রোগীদের থেকে ইচ্ছেমতো জোর করে অর্থ আদায় করেন।’
ঢামেক পরিচালক বলেন, ‘অনেক সময় জরুরি ও সংকটাপন্ন কিছু রোগীকে এদিক সেদিক আনা-নেওয়া করতে হয়। এই কাজে আমাদের পর্যাপ্ত জনবল থাকলে বাইরে থেকে এসে রোগীদের থেকে এভাবে টাকা পয়সা নিতে পারত না। এজন্যই আমরা কিছু জনবল নিয়োগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সমস্যা দূর করতে চেয়েছিলাম। এসব জনবল পেলে রোগীদের আনা-নেওয়া থেকে শুরু করে হাসপাতালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় তাদের কাজে লাগাতে পারতাম।’
এসব কাজের জন্য পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাজের মানুষ পাওয়া গেলে যন্ত্রপাতির অভাব হয় না। আমাদের ট্রলি-স্ট্রেচার রয়েছে, লাগলে আরও কেনার ব্যবস্থা করা যাবে। কিন্তু এগুলো পরিচালনায় জরুরিভিত্তিতে জনবল প্রয়োজন। এতে করে চক্রগুলোকেও পুরোপুরিভাবে বিনাশ করে দেওয়া যেত।’
তিনি বলেন, ‘বছরের পর বছর বেশ কিছু চক্র ঢাকা মেডিকেলে কাজ করছে। তাদের অধিকাংশই আশেপাশের এলাকার। এখানে তারা একটা ইনকাম সোর্স বানিয়ে ফেলেছে। সকালে এসে তিন-চার ঘণ্টা কাজ করে ৫০০, এক হাজার টাকা নিয়ে চলে যায়। রোগীদের কথা চিন্তা করে আমরা চাইলেও তাদের দমন করতে পারছি না। পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে আমরা রোগীদের সেবা দিতে পারছি না।’
নাজমুল হক আরও বলেন, ‘হাসপাতালে ভালো সেবা দিতে গেলে প্রচুর জনবল দরকার। তাহলে ভালো সেবা দেওয়া সম্ভব।’ আর এতে করেই বাইরে থেকে যারা এসে রোগীদের জিম্মি করে টাকা নিয়ে যায়, তাদের দমন করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
টিআই/ওএফ/এফআর