চট্টগ্রামের পটিয়ায় মাকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ছেলে মাইনুলকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যরা। এসময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

নিহত জেসমিন আক্তার পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র এবং জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা শামসুল আলম মাস্টারের স্ত্রী। মাইনুল তাদের বড় ছেলে।

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) র‌্যাবের চান্দগাঁও কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৭-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই উচ্ছৃঙ্খল জীবন-যাপন করতো মাইনুল। নেশায় আসক্ত ছিল, নিয়মিত গাঁজা-ইয়াবা সেবন করত। এসব কারণে তাকে নিয়ে মা-বাবা চিন্তায় থাকতেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে চারটি মামলা রয়েছে। ২০১৩ সালে প্রথম মামলা হয়। এসব থেকে ছেলেকে বাঁচাতে ২০১৭ সালে অষ্ট্রেলিয়ায় পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু দুই বছর পর সে দেশে চলে আসে। এরপর আবারও উচ্ছৃঙ্খল চলাফেরা শুরু করে সে। মাইনুলের প্রতি তার বাবাও সন্তুষ্ট ছিলেন না। জীবদ্দশায় তার বাবাও তাকে কোনো সম্পত্তি লিখে দিয়ে যাননি। মাইনুল এইচএসসি পাসের পর আর লেখাপড়া করেননি।  

র‌্যাব-৭-এর অধিনায়ক বলেন, গত ১৩ জুলাই শামসুল আলম মাস্টার বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি রেখে যান। শামসুল আলমের ছোট ছেলে এবং মেয়ে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। গত ঈদুল ফিতরের সময় তারা দেশে আসেন।

তিনি জানান, শামসুল আলমের দুই ছেলে ও মেয়ে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। বড় ছেলের উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব ছিল। মা জেসমিন মেয়ের সঙ্গে  অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার কথা ছিল। মাঈনুল অভিযোগ করে আসছিল, মা তার দুই ছেলেকে বঞ্চিত করে মেয়েকে সব সম্পত্তি দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে পারিবারিকভাবে একাধিক বৈঠকও হয়। সম্পত্তি নিয়ে মা ও ছেলের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকত। মাইনুলের সন্দেহ ছিল মা সব সম্পত্তি বিক্রি করে বিদেশে পাড়ি দিতে চাচ্ছেন।

১৬ তারিখ মা-বোন ব্যাংকে যায়। তখন মাইনুল ধারণা করে তারা ব্যাংকে গিয়ে সব টাকা-পয়সা নিয়ে আসছে। এই দিন দুপুরে মাইনুল বাসায় এসে মা ও বোনের সঙ্গে তর্ক করে। এরই একপর্যায়ে মাইনুল তার কোমর থেকে পিস্তল বের করে প্রথমে বোনের দিকে গুলি করে। সেটি বোনের শরীরে লাগেনি। দ্বিতীয় গুলিটি মায়ের শরীরে লাগে। গুলিটি মায়ের চোখের নিচে লাগে। এতেই মা জেসমিনের মৃত্যু হয়।

তিনি বলেন, মাকে গুলি করে হত্যার পরও কোনো অনুশোচনা নেই মাইনুলের। সে খুবই ঠান্ডা মাথায় ছিল। এই ঘটনা ঘটানোর পর অস্ত্র নিয়ে সে চন্দনাইশের দোহাজারী চলে যায়। সেখান এক বড় ভাইকে ধরে একটি ফ্যাক্টরিতে রাত যাপন করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ এড়ানোর জন্য মোবাইল ফোন পানিতে ফেলে দেয় সে।

গতকাল বুধবার বিকেলের দিকে বাসে করে ঢাকায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে মাইনুল। সে টিকিট ছাড়া বাসে উঠেছিল। বাসে করে পালিয়ে যাওয়ার পথে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ থেকে মাইনুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মাইনুলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সাতকানিয়ার রসুলপুর এলাকা থেকে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়। অস্ত্রটি মাইনুল তার বাবার অফিস থেকে পেয়েছে বলে আমাদের জানিয়েছে। লাইসেন্স আছে কি না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
 
র‌্যাব কর্মকর্তা ইউসুফ বলেন, আমাদের কাছে মনে হয়েছে পুরো ঘটনাটি ঘটেছে পারিবারিক অবক্ষয় থেকে। পরিবার থেকে যদি মাইনুলকে ছোটবেলা থেকে নজরদারিতে রাখা হতো, শাসনের মধ্যে রাখা হতো তাহলে মাইনুল এমন উচ্ছৃঙ্খল হতো না। হয়তো বা এমন পথে পা বাড়াত না। তাকে দেখেই মনে হয় সে নেশাগ্রস্ত। আজকের মাইনুল একদিনে তৈরি হয়নি। পরিবারের নজরদারির না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে সে এমন হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আমরা অনুরোধ জানাতে চাই, আপনার সন্তানের প্রতি নজর রাখুন।

গত মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে মাইনুলের গুলিতে তার মা জেসমিন আক্তার (৫০) নিহত হন। তাদের নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

মঙ্গলবার রাতে মাইনুলের বোন শায়লা শারমিন নিপা বাদী হয়ে পটিয়া থানায় ভাই মাইনুলকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

কেএম/এসএম