দেশে জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় রাশিয়া থেকে তেল আমদানির বিষয়ে আলোচনা করতে কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।

গত সপ্তাহে বাংলাদেশের কাছে পরিশোধিত তেল বিক্রির প্রস্তাব পাঠায় রাশিয়ার তেল উৎপাদন ও বিপণন কোম্পানি রজনেফ্ট। তাদের প্রস্তাব যাচাই করে দেখার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয় রজনেফ্ট’র প্রতিনিধিরা ঢাকায় আসারও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ওই প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করতে কমিটি কাজ করবে। 

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

বর্তমানে প্রতি ব্যারেল ডিজেল আমদানি করতে ১২৫ ডলারের মতো খরচ পড়ছে। অপরিশোধিত ক্রুড অয়েল আনতেও ৯০ ডলার খরচ পড়ছে। 

পেট্রোলিয়াম করপোরেশন সূত্র বলছে, প্রতি টন রাশান ডিজেল ৪২৫ ইউএস ডলারে সরবরাহ করবে রজনেফ্ট। সে হিসেবে প্রতি ব্যারেলের (১৫৯ লিটার) মূল্য দাঁড়ায় ৫৭ দশমিক ৪৩ ডলার। ডলার ১১০ টাকা হিসেবে ধরলে প্রতি লিটারের আমদানি খরচ ৪০ টাকার নিচে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দাম কম হলেও বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে রাশান ডিজেল কেনাটা বেশ ঝূঁকিপূর্ণ। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর আমেরিকাসহ ইউরোপের নানা রকম নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। যদিও ভারতসহ অনেক দেশ সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে।

২০২১ সালের এপ্রিল-মে মাসে রাশিয়া থেকে মাত্র ৪৪ কোটি ১০ লাখ ডলারের তেল কিনেছিল ভারত। আর ২০২২-এ শুধু মে মাসেই ১৯০ কোটি ডলারের তেল কিনেছে। আগের বছরে চাহিদার মোট দুই শতাংশ রাশিয়া থেকে আসত। এবার এপ্রিল-মে মাসে চাহিদার ১০ শতাংশ তেল রাশিয়া থেকে আমদানি করেছে তারা। সময় যতো যাচ্ছে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির পরিমাণও বাড়ছে ভারতের।

রাশিয়া থেকে সরাসরি ডিজেল আমদানি করতে গেলে পশ্চিমা বলয়ের বিরাগভাজন হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। সে কারণে অনেকদিন ধরেই রাশান তেল আমদানির বিষয়ে আলোচিত হলেও সবই ছিল অনানুষ্ঠানিক।

গত ১৬ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানির বিষয়টি পর্যালোচনার করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারত পারলে আমরা কেন পারব না? রুবলের (রুশ মুদ্রা) সঙ্গে টাকা বিনিময়ের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধের করা যায় কি না, সেই বিষয়ে উপায় খুঁজে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশনার পর নড়েচড়ে বসেছেন সংশ্লিষ্টরা। বিপিসির সূত্র বলছে, তাদের কাছে একাধিক প্রস্তাব এসেছে। এরমধ্যে একটি প্রস্তাব এসেছে যারা চট্টগ্রাম বন্দরের কাস্টমস পয়েন্টে ৪২৫ ডলারে ডিজেল পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। সবগুলো নিয়ে কাজ করছে সরকার।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের বড় ধরনের ঝাঁকুনির শিকার হয়েছে। এরই মধ্যে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বসিয়ে রাখা হয়েছে। তারপরও পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে, রেকর্ড পরিমাণে দাম বাড়ানো হয়েছে সব ধরনের জ্বালানির দাম। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত জ্বালানি তেল ডিজেল লিটার প্রতি ৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করা হয়েছে। বিপিসি দাবি করেছে তারপরও লিটারে ৬ টাকা করে লোকসান দিতে হচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ডিজেলের চাহিদা ছিল ৪৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫৮৫ মে. টন। যা মোট জ্বালানি চাহিদার ৭২.৯৮ শতাংশ।

আরএম/জেডএস