উচ্চস্বরে গান বাজাতে নিষেধ করায় রাজশাহী নগরীতে মুকুল আলী (৪৫) নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করার ঘটনায় প্রতিবেশী নাহিদ, তার বাবা বকুল আলী ও মা মোছা. আমেনাকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। শনিবার (১৩ আগস্ট) চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের উত্তর সলিমপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

রোববার (১৪ আগস্ট) সিপিসি-৩ চান্দগাঁও ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৭ অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ।

তিনি বলেন, ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মুকুল আলী ও বকুল আলী পরিবারের মধ্যে রেষারেষি ছিল। ১ আগস্ট মুকুল আলীকে হত্যার পর তারা রাজশাহীতেই আত্মগোপনে ছিল। তিন জন একসঙ্গে ৪ আগস্ট চট্টগ্রামে আসে। চট্টগ্রামে আসার পর সীতাকুণ্ডের সলিমপুরে বাসা নিয়ে বসবাস শুরু করে তারা। এরপর সেখানে রাজমিস্ত্রির কাজ করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অবস্থান নির্ণয় করা হয়। এরপর শনিবার (১৩ আগস্ট) সীতাকুণ্ড অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। রাজশাহী পুলিশের একটি দল তাদের নিতে এসেছে। তাদের কাছে আসামিদের হস্তান্তর করা হবে।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে ‘বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী অভিযানে’ ৭৬ হাজার টাকা জরিমানা

লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, আসামিরা পরিচয় গোপন করে বাসা ভাড়া নিয়েছিল। যে বাসা ভাড়া দিয়েছিল তার থেকে কোনো ধরনের আইডি কার্ড সংগ্রহ বা কোনো খোঁজ-খবর নেয়নি। তাই চট্টগ্রামবাসীকে অনুরোধ করব, বাসা ভাড়া বা চাকরি দেওয়ার আগে খোঁজ-খবর নিয়ে দেওয়ার জন্য। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, অপরাধীরা অপরাধ করে চট্টগ্রামে এসে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছে। এতে কিন্তু চট্টগ্রামের বদনাম হচ্ছে। এর থেকে বের হতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। বাসা ভাড়া দিলে আইডি কার্ড নিয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

র‍্যাব জানিয়েছে, ১ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে নিজ বাড়িতে উচ্চস্বরে সাউন্ড বক্সে গান বাজাচ্ছিলেন রাজশাহীর শাহমখদুম থানার হরিষার ডাইং এলাকার বকুলের ছেলে নাহিদ। এতে খুব অসুবিধা হয় প্রতিবেশী মুকুল আলীর অসুস্থ ও অন্তঃসত্ত্বা মেয়ের। বাধ্য হয়ে নাহিদের বাড়িতে গিয়ে উচ্চস্বরে গান বাজাতে নিষেধ করেন মুকুল আলী। নাহিদ তাৎক্ষণিক সাউন্ড বক্সের শব্দ কমিয়ে দিলেও মুকুল সেখান থেকে চলে আসার পর আবারও শব্দ বাড়িয়ে দেন।

মুকুল আলী ফের নাহিদের বাড়িতে গিয়ে উচ্চস্বরে গান বাজাতে নিষেধ করেন। এ নিয়ে নাহিদ, তার বাবা, মা ও বোনের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় মুকুলের। একপর্যায়ে লোহার রড দিয়ে মুকুলের মাথায় আঘাত করে নাহিদ ও তার পরিবারের সদস্যরা। তারা মুকুলের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছুরিকাঘাত করে গুরুত্বর জখম করে।

মুকুলের চিৎকার শুনে তাকে রক্ষায় এগিয়ে যান ছেলে শাহীন আলম ও জামাই আলমগীর। মারধর ও ছুরিকাঘাতে তারাও জখম হন। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে নেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে রাতে মারা যান মুকুল।

পরে এ নিয়ে মুকুল আলীর ছেলে মো. শামীম ইসলাম বাদী হয়ে রাজশাহীর শাহমখদুম থানায় আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা তিন-চার জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ সোমবার (২ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

কেএম/এসএসএইচ