মোখলেস মিয়ার বয়স ৪৫ বছর। ঢাকায় রিকশা চালান প্রায় ১৩ বছর হলো। থাকেন মালিবাগের একটি গ্যারেজে। সেখানে অন্য রিকশা চালকদের সঙ্গে রাতের খাবার খান। দিনের বেলা খেতে হয় হোটেলে। আগে দুপুরে ডিম-ভাত খেতে যে টাকা লাগত এখন লাগছে তার প্রায় দ্বিগুণ।

মোখলেস মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে ভাত, ডিম, ডাল খেলে ৩৫ টাকায় হয়ে যেত। এখন শুধু ডিম-ভাত খেতেই লাগে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। সঙ্গে যদি ভাজি ও ডাল নিই তাহলে খরচ পড়ে যায় ৭০/৭৫ টাকা। মাছ-মাংসের কথা তো বাদই দিলাম।

দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ায় দিনের প্রয়োজনীয় খাবার খাওয়া নিয়েই সংকটে পড়ে গেছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। রিকশাচালক মোখলেস মিয়া তেমনই একজন।

মোখলেস মিয়া ছাড়াও রিকশাচালকসহ নিম্ন আয়ের আরও কিছু মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে ঢাকা পোস্ট। তারা জানিয়েছেন, কর্মসূত্রে যাদের প্রতিদিন বাইরে খেতে হয় তাদের খরচ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ফলে মাস শেষে খরচের হিসাব মেলাতে পারেন না অনেকে।

রাজধানীর পল্টন মোড়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় আছেন রিকশাচালক শাজাহান আলী। তিনি বলেন, রিকশা চালানোর কারণে প্রতিদিন সকাল-দুপুর বাইরে খেতে হয়। এখন হোটেলে খাওয়া খরচ খুব বেড়ে গেছে। মাছ বা মাংস খাওয়ার কথা ভাবাই যায় না। নিয়মিত গরিবের হোটেলে খাই, তবুও সকালে একটা পরটার দামই লাগে ১০ টাকা। দুপুরে আগে ৩ প্লেট ভাত খাইতাম, এখন দুই প্লেট খাই।

রাজধানীর ভাটারা এলাকায় একটি হোটেলের মালিক আব্দুস সোবহানের সঙ্গে আলাপ হয় খাবারের দাম বৃদ্ধি নিয়ে। তিনি বলেন, বাজারে এমন কিছু নেই যার দাম বাড়েনি। প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়তি। তাই আমরাও ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য খাবারের দাম বাড়িয়েছি। আপনি গিয়ে দেখেন ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা কেজি, ডিম ১৫০ টাকা ডজন। আমরা কী করব, দাম তো বাড়াতেই হবে।

রাজধানীর বাড্ডায় গরিবের হোটেল নামে পরিচিত হোটেলের মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, গরিবের হোটেল আর গরিবের নেই। আগে একজন রিকশাচালক হোটেলে এসে ৩০ টাকার মধ্যে দুপুরের খাবার খেতে পারত। এখন আর পারছে না। অনেকে এখন ভাত না খেয়ে সিঙ্গারা খায়, খরচ কমানোর জন্য।

রফিকুল ইসলামের হোটেলে ব্রয়লার মুরগির তরকারি কিছুদিন আগে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এখন ৫০ টাকা। পাঙ্গাস, কই, তেলাপিয়া মাছ আগে বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা, এখন ৫০ টাকা। ডিমের তরকারি আগে ছিল ২০ টাকা, এখন ৩০ টাকা। ডাল আগে ৫ টাকা বাটি ছিল, এখন ১০ টাকা। করলা ভাজি ৩০ টাকা। অন্য ভাজি ও সবজি আগে ছিল ১৫ টাকা এখন ২৫ টাকা। সব ধরনের ভর্তা ১০ টাকা, তবে আগের চেয়ে পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সকালে পরোটা-রুটি প্রতি পিস ১০ টাকা।

রাজধানীর মহাখালীতে তুলনামূলক একটি ভালো মানের খাবারের হোটেলের ম্যানেজার সাব্বির আহমেদ হিরা জানান দাম বাড়ার কারণে তাদের ক্রেতা আগের চেয়ে কমে গেছে। হোটেলে এসে মানুষ আগের চেয়ে কম খাচ্ছেন।

এ বিষয়ে হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন বলেন, হোটেল পরিচালনার জন্য সব ধরনের কাঁচা মালের দাম আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে, যে কারণে বাধ্য হয়ে সবাই হোটেলের খাবারের দাম বাড়িয়েছে। তবে দাম বাড়িয়ে কিন্তু হোটেল মালিকরা লাভ করতে পারছে না, তাদের বরং লস হয়েছে। কারণ হোটেলে খাবারের দাম বাড়ার কারণে ক্রেতা অনেকাংশেই কমে গেছে। আগের চেয়ে মানুষ হোটেলে খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। 

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সার্বিক বিষয় নিয়ে নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, রিকশাচালক, সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক, বাসের হেলপার, নির্মাণ শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষজন খুব কষ্টে আছে। তারা হয় হোটেলে গিয়ে কম খাচ্ছে, নয়তো খাচ্ছেই না। এমনকি ডিম বা ভর্তা দিয়ে ভাত খেতেও তাদের কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সরকারের উচিত নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য এই মুহূর্তে নতুন করে রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করা। প্রতিটি ওয়ার্ডে কম টাকায় খাবারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

এএসএস/জেএস