বস্তা প্রতি চিনিতে বেড়েছে অন্তত ৪০০ টাকা
বাজারে চিনির দাম বেড়েছে আকাশছোঁয়া। সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তা প্রতি দাম বেড়েছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। এদিকে খোলা বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৯০ টাকা কেজি দরে। যা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) নির্ধারিত মূল্যের থেকে অন্তত ৮ টাকা বেশি।
চিনি দামের এমন ঊর্ধ্বগতি দেখে ক্রেতাদের পাশাপাশি অনেকটা অবাক হয়েছেন খোদ পাইকারি ব্যবসায়ীরাও।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের পাইকারি কৃষি মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চিনির দাম আগে কখনো এতটা বাড়েনি। এতে আমরা অবাক হয়েছি। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার জন্য যদি চিনির দাম বাড়ে, তবে কেজি প্রতি সেটি সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ পয়সা বাড়ার কথা। কিন্তু এত পরিমাণ চিনির দাম কিভাবে বাড়ে, আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না।
আরও পড়ুন চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে ১৫ মে পর্যন্ত শুল্ক ছাড়
মোহাম্মদপুর পাইকারি মার্কেটের মোহাম্মদ আলী এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা লুৎফর ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ২৪০ টাকা বস্তা। গত সপ্তাহে এটার দাম ছিল ৩ হাজার ৮০০ টাকা। সবাই বলে জ্বালানির জন্য দাম বেড়েছে, সেটা তো মানলাম। রাজশাহী থেকে এক ট্রাকের ভাড়া গত সপ্তাহ পর্যন্ত ছিল ১৫ হাজার টাকা। গতকাল ওই ট্রাক এনেছে ১৮ হাজার টাকায়। সেই হিসেবে চিনির প্রতি বস্তায় ১০ টাকা আর কেজি প্রতিতে ২০ পয়সা বাড়ার কথা। কিন্তু বস্তা প্রতি ৩০০-৪০০ টাকা কি করে বাড়ে। এটা মাথায় ধরছে না!
আরও পড়ুন কেজিতে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে চালের দাম
একই মার্কেটের খুচরা বিক্রেতা ওয়াসিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাজারে খোলা চিনির দাম ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে প্যাকেটজাত চিনি।
গতকাল (১২ অক্টোবর) ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ, টিসিবির নির্ধারিত বাজার দর অনুযায়ী দেখা গেছে, খোলা চিনির দাম ৮২ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির দাম ৯০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে এই চিনির দাম ছিল ৮০ ও ৮২ টাকা। এবং একমাস আগে এই চিনির দাম ছিল ৭৮ ও ৮২ টাকা। আর এক বছর আগে মূল্য ছিল ৭০ ও ৭৫ টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ১৮.৬২ শতাংশ এবং এক মাসে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৭.৫ শতাংশ।
এদিকে দেশের বাজারে চিনির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে রিফাইনারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। একই সঙ্গে আমদানি শুল্ক মওকুফ এবং ব্যাংক রেটে ডলার চেয়েছে সংগঠনটি। গত ১০ আগস্ট এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে দিয়েছেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম রহমান।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, চিনির রিফাইনারিগুলো বিলম্বে মূল্য পরিশোধের সুবিধা নিয়ে ঋণপত্র খোলার পর মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের বিপরীতে অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে বিপুল লোকসান হচ্ছে কোম্পানিগুলোর। অপরিশোধিত চিনি আমদানির জন্য যখন ঋণপত্র খোলা হয়, তখন ডলারের দাম ছিল ৮৩-৮৫ টাকা। কিন্তু এখন ওইসব এলসির মূল্য পরিশোধের সময় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আমাদের কাছ থেকে প্রতি ডলার ১১৫ টাকা হারে বিনিময়মূল্য আদায় করছে। এতে চিনি আমদানিতে ব্যয় হচ্ছে বাড়তি অর্থ।
চিঠিতে আরও বলা হয়, আগে টনপ্রতি চিনি আমদানিতে শুল্ক দিতে হতো ২২ হাজার থেকে ২৩ হাজার টাকা। ডলারের দাম বাড়ায় এখন শুল্ক দিতে হচ্ছে টনপ্রতি ২৮ হাজার থেকে ২৯ হাজার টাকা। এতে পরিশোধন শেষে প্রতিমণ চিনির মিলগেট দাম দাঁড়াচ্ছে ৩ হাজার ৭০৩ থেকে ৩ হাজার ৮৮৮ টাকা। কিন্তু চিনি বিক্রি করতে হচ্ছে ২ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার ৯২০ টাকায়। এ পরিস্থিতিতে চিনির দাম বাড়াতে না পারলে লোকসান বেড়ে কারখানাগুলো দেউলিয়ায় পরিণত হবে।
এমএইচএন/এমএ