ওমানে থাকা মায়ের যোগসাজশে দেশে ছেলের মানবপাচারের ব্যবসা
জনশক্তি রপ্তানির নামে প্রতারণা, টাকা হাতিয়ে নেওয়া ও ভুয়া ভিসা আসল হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টায় রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রের মূলহোতাসহ দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩ এর একটি দল।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) বিকেলে র্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার (অপস ও ইন্ট শাখা) পুলিশ সুপার বীণা রানী দাস এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, কতিপয় ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান চালিয়ে র্যাব-৩ জানতে পারে, মতিঝিল এলাকায় একটি মানবপাচার ও প্রতারক চক্র মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রপ্তানির প্রলোভন দেখিয়ে ভুয়া ভিসা ও টিকিট সরবরাহ করে বিদেশ গমনে ইচ্ছুক বেকার তরুণ-তরণীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদেরকে সর্বস্বান্ত করছে।
বীণা রানী দাস বলেন, পরে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এর একটি দল গতরাতে রাজধানীর পল্টন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মানবপাচার চক্রের মূলহোতা জাবেদ হোসেন রকি (৩৩) ও তার অন্যতম সহযোগী মো. আবির ওরফে শুভকে (২৭) গ্রেপ্তার করে।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ১টি সিপিইউ, ৫টি পাসপোর্ট, ২০টি খালি স্ট্যাম্প, ১০টি ট্রেনিং সার্টিফিকেট, ভুয়া ওমান কনস্যুলেটর ও দূতাবাসের সিল ২টি, ১টি মোবাইল ফোন, ১ বক্স ভিজিটিং কার্ড, ভুয়া ভিসার ফটোকপি প্রায় শতাধিক, ৫০টি কোভিড-১৯ এর ভুয়া রিপোর্ট এবং ৩টি চেকের পাতা উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য জাবেদ হোসেনকে তার মা সেলিনা বেগম দেশের বাইরে থেকে প্রতারণায় সহযোগিতা করে আসছেন।
এছাড়া চক্রের অন্যতম সহযোগী মো. আবির (২৭) ২০১৮ সালে এয়ারপোর্ট ক্লিনার হিসেবে ওমান যান। ২০১৯ সালে দেশে ফিরে খালাত ভাই জাবেদের সঙ্গে মানবপাচারকে পেশা হিসেবে বেছে নেন।
জানা যায়, ২০০৪ সাল থেকে ওমানের একটি রিক্রুটিং এজেন্সিতে কর্মী হিসেবে কাজ করছেন জাবেদ। তার মা ২০১৮ সাল থেকে ওমানে অবস্থান করে চক্রটিকে সহযোগিতা করে আসছেন। তাদের জনশক্তি রপ্তানির কোন লাইসেন্স নেই। কিন্তু তারা দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রপ্তানির নামে অবৈধভাবে মধ্যপ্রাচ্যে লোক পাঠিয়ে আসছে।
পরে মধ্যপ্রাচ্যে উচ্চ বেতনে লোক পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক বেকার তরুণ-তরুণীদের কাছ থেকে ৩ হতে ৪ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে ভুয়া ভিসা এবং ভুয়া টিকিট ভুক্তভোগীদের হাতে ধরিয়ে দেয় চক্রটি। ভুক্তভোগীরা ভিসা এবং টিকিট নিয়ে বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের ভিসা এবং টিকিট জাল হওয়ায় বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়।
চক্রের মূলহোতা জাবেদ হোসেন ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তার বাবা দীর্ঘদিন বাবুর্চি হিসেবে দুবাই কাজ করেন। বর্তমানে তিনি মতিঝিল এলাকায় একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর চালান। ২০১২ সালে জাবেদ হোটেলের ওয়েটার ভিসায় দুবাই গিয়ে সেখানে ৪ বছর অবস্থান করেন। দেশে ফেরার পর ২০১৮ সাল থেকে ওমানে থাকা মায়ের সহযোগিতায় প্রতারণা এবং মানবপাচারকে তার পেশা হিসেবে বেছে নেন।
বীণা রানী দাস বলেন, তার ট্রাভেল এজেন্সির কোন লাইসেন্স নেই। কিন্তু তিনি জাবেদ ট্রাভেল এজেন্সি নামে তার অফিস পরিচালনা করে আসছেন। গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য তিনি বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করে নারী কর্মীদের মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে পাঠান। গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জনের পর পুরুষ কর্মীদের বিদেশ পাঠানোর জন্য পাসপোর্ট ও টাকা সংগ্রহ করে প্রতারণামূলকভাবে জনপ্রতি ৩ হতে ৪ লাখ টাকা করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন।
তিনি বলেন, জাবেদের দেওয়া ভুয়া ভিসা, নকল টিকিট ও নকল বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স নিয়ে ভুক্তভোগীরা বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের ফিরিয়ে দেন। তখন তিনি পুনরায় নতুন ভিসা ইস্যু কিংবা টাকা ফেরতের নামে কালক্ষেপণ ও কাউকে ব্যাংক চেক দেন। যদিও সেই চেকের বিপরীতে একাউন্টে কোন টাকা ছিল না। এভাবেই নানা কৌশলে বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের হয়রানি, প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ করেন। তার নামে মানবপাচার ও প্রতারণার দুইটি মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
জেইউ/আইএসএইচ