ফোন করলেও আসে না ওয়াসার পানির গাড়ি
গত দুই সপ্তাহ ধরে রাজধানীর বেশকিছু এলাকায় পানি নেই। পানি আসলেও সারাদিনে বড়জোর দুই-একবার। পানি কেনার জন্য বার বার ফোন করা হলেও ওয়াসার গাড়ির দেখা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
ওয়াসা বলছে, পানির স্তর নেমে যাওয়ায় ওয়াসার অধিকাংশ পাম্প পানি পাচ্ছে না। যার কারণে কিছু কিছু এলাকায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ওয়াসার মডস জোন ৮ এর আওতাভুক্ত কুমিল্লাপাড়া এলাকায় একটি পাঁচ তলা বাড়ির মালিক রুহুল আমিন। গত দুই সপ্তাহ ধরে তার বাড়িতে পানি নেই। এদিকে কিনে নেওয়া ওয়াসার পানিও ঠিকমতো পাচ্ছেন না তিনি।
এ বিষয়ে রুহুল আমিন বলেন, ওয়াসার অফিসে বারবার অভিযোগ জানানো হয়েছে, কিন্তু কোনো প্রতিকার নেই। তারা বলছে, পানির স্তর নেমে গেছে। তাই এই সমস্যা হচ্ছে। অন্যদিকে প্রতি গাড়ি ওয়াসার পানির দাম ৪০০ টাকা। সেখানে ৮০০ টাকা দিয়েও আমরা পানি পাচ্ছি না। ফোন করে অর্ডার দিলেও তারা পানি নিয়ে আসে না। যেখানে বেশি দাম পায়, তারা সেদিকে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর কুড়িল, বিশ্বরোড, ভাটারা নূরের চালা, উত্তর বাড্ডা, মধ্যে বাড্ডা, মেরুল ডিআইটি, কালাচাঁদপুর, মিরপুর, আগারগাঁও, রায়েরবাজার এলাকায় সবচেয়ে পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
দুই সপ্তাহ ধরে পানি পাচ্ছেন না গুলশান নূর মসজিদ এলাকার বাসিন্দারা। এই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মালেক মিয়া। তিনি বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে পানি নেই। বাড়ির মালিকরা ওয়াসার আঞ্চলিক অফিসে ফোন করলেও পানির গাড়ি আসে না। এক গাড়ি পানির দাম ৪০০ টাকা হলেও তারা প্রায় সময়ই ৮০০/১০০০ টাকা নেয়। সেটা দিতেও আমরা রাজি। কিন্তু তাতেও লাভ হয় না।
মেরুল ডিআইটি এলাকার বাসিন্দা সাজেদুর রহমান বলেন, পানি না থাকায় দুই দিন গোসল করা হয়নি। সবদিকেই পানির সংকট। দিনে একবার পানি আসে তাও অল্প সময়ের জন্য। আর তখনই সবকিছু করে নিতে হয়। কিন্তু পানি ছাড়া একটি পরিবার কিভাবে চলতে পারে? বার বার অভিযোগ জানিয়েও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না ওয়াসা। এদিকে গাড়ি ঠিকমতো কেনা পানিও সাপ্লাই দিতে পারছে না।
ওয়াসা মডস জোন ৮ এর গাড়িতে করে টাকার বিনিময়ে পানি সরবরাহ করার দায়িত্বে আছেন মনির হোসেন। তিনি বলেন, যখন যেখান থেকে কেনা পানির অর্ডার আসছে, আমরা সেখানেই গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু আমাদেরও তো গাড়ির, লোকবলের স্বল্পতা আছে। আর এখন প্রায় বাড়িতেই পানির সমস্যা। তাই কেনা পানিও ঠিকমতো সরবরাহ করতে পারছি না।
মনির বলেন, সংকটের এই অবস্থায় সব বাড়ি থেকেই কেনা পানির অর্ডার দিচ্ছে। যদিও এই সমস্যা সাময়িক। সময় দিলে আমরা পানি পৌঁছে দিতে পারব। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে এত সংখ্যক বাড়িতে পানি পৌঁছে দিতে পারছি না। এই কারণেই বিভিন্ন এলাকার মানুষ এ বিষয়ে অভিযোগ জানাচ্ছে।
ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায়, কিছু কিছু এলাকায় সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সমস্যা সমাধানে ৮০০টি পাম্পের মধ্যে ১০০টির বেশি পাম্পে বোরিং করা হচ্ছে। এই কাজ শেষ হলে পানির সংকট সমাধান হবে অনেকটা। এছাড়া গন্ধবপুর পানি শোধনাগার চালু হলে ভূগর্ভের পানির ওপর নির্ভরতা অনেকাংশেই কমে আসবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকটের কারণ হলো পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া। এবার বৃষ্টি কম হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের বেশ কয়েকটি পাম্প বিকল হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে কিছু কিছু এলাকায় পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
এই কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে আমাদের ৮০০টিরও বেশি পাম্প রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১০০টির বেশি পাম্পে বোরিং করানোর কাজ চলছে। এই কাজ শেষ হলে আশা করা যায় নির্দিষ্ট এলাকাগুলোতে পানির সংকট সমাধান হয়ে যাবে। এছাড়া আমরা আরও বেশকিছু নতুন করে পাম্প বসাতে চাচ্ছি। কিন্তু এর জন্য জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না।
ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা ওয়াসার দৈনিক পানির চাহিদা ২৬৫ কোটি লিটার। এর ৬৪ শতাংশ আসে ভূগর্ভের পানি থেকে। বর্তমানে পানির স্তর বেশ নিচে চলে যাওয়ায় প্রায় ১০০০ ফুট নিচ থেকে পানি তুলতে হচ্ছে। অন্যদিকে গন্ধবপুর পানি শোধনাগার চালু হলে ভূগর্ভের পানির ওপর নির্ভরতা প্রায় ৩০ শতাংশ কমে আসবে।
এএসএস/এমএইচএস