মালয়েশিয়া যেতে কর্মীদের প্রথম ফ্লাইট রাতে, যাবেন ৫৩ জন
নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া শুরু হচ্ছে। সোমবার (৮ আগস্ট) রাত ১১টা ৪০ মিনিটে এয়ার এশিয়ার একটি ফ্লাইটে প্রথম দফায় ৫৩ জন কর্মী দেশটিতে যাবেন। চলতি মাসে আরও কয়েক দফায় কর্মী যাবেন দেশটিতে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক মো. শহিদুল আলম ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আজ থেকে শুরু হচ্ছে কর্মী যাওয়া। শুরুতে ৫৩ জন কর্মী যাবেন। এমওইউ’র পর এটাই প্রথম ফ্লাইট। লাইনে আছে অনেকগুলো। প্রায় পাঁচ হাজারের মতো প্রসেসের মধ্যে আছে। এ মাসে আরও কয়েকটা ফ্লাইট যাবে। আগামী মাস থেকে পুরোদমে যাওয়া শুরু হবে। প্রতি মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার কর্মী যাবে।
বিজ্ঞাপন
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ রয়েছে। ওই সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ কমিটির বৈঠকে ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশের শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন>> জটিলতা কেটেছে, দুই হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক নিতে প্রস্তুত মালয়েশিয়া
পরে বন্ধ শ্রমবাজার খুলতে বিভিন্ন ধরনের কূটনৈতিক তৎপরতা চালায় ঢাকা। এর ফল হিসেবে ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার সঙ্গে কর্মী প্রেরণ নিয়ে চুক্তি করে বাংলাদেশ। চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরের শুরুতেই কর্মী যাওয়া শুরু হবে বলে আশা ছিল সরকারের। সে লক্ষ্যে দেশের দেড় হাজারের বেশি বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকাও পাঠানো হয় মালয়েশিয়ায়। কিন্তু দেশটি ২৫টি এজেন্সির তালিকা ঢাকাকে পাঠায়। ফলে ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সি তথা সিন্ডিকেট ইস্যুতে আবার শ্রমবাজার চালু নিয়ে দেখা দেয় নতুন জটিলতা।
পরে অবশ্য গত ২ জুন বিষয়টি সুরাহা করতে ঢাকায় বসে দুদেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক। বৈঠকের পর আশা করা হচ্ছিল কর্মী যাওয়া শুরু হবে। কিন্তু এরপরও কেটে যায় দুই মাসের বেশি সময়। তবুও তা চালু হয়নি।
গত ৬ জুলাই মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের সরকারি খরচের কথা জানান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। তিনি জানিয়েছিলেন, মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের জন্য ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই খরচ শুধু বাংলাদেশ অংশে।
গত বছরের ডিসেম্বরে করা মালয়েশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী, কর্মীর বেশিরভাগ খরচই নিয়োগকর্তা বহন করবেন। তবে বাংলাদেশে কর্মীর কিছু খরচ নিজেকেই বহন করতে হবে। এসব খরচের মধ্যে রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি নিয়োগ, মালয়েশিয়ায় আোয়ন, আবাসন, কর্মে নিয়োগ ও কর্মীর নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এছাড়া, নিয়োগকর্তা নিজ খরচে মালয়েশিয়ান রিক্রুটিং এজেন্ট নিযুক্ত করতে পারবেন। মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর বাংলাদেশিকর্মীর ইমিগ্রেশন ফি, ভিসা ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ইনস্যুরেন্স, করোনা পরীক্ষা, কোয়ারেন্টাইন সংক্রান্ত খরচসহ সব ব্যয় মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তা বহন করবেন। নিয়োগকর্তা কর্মীর মানসম্মত আবাসন, বিমাসহ চিকিৎসাও নিশ্চিত করবেন।
গত ১২ জুন থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী হিসেবে গমনেচ্ছুদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএমইটি। সংস্থাটি জানায়, জেলা কর্মসংস্থান অফিস কিংবা অনলাইনে ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপের মাধ্যমে এই নিবন্ধন করা যাচ্ছে।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে যেভাবে বাংলাদেশি কর্মীরা যাবেন- বিএমইটি ২৬ জুলাই তার একটি রূপরেখা প্রকাশ করে। এ রূপরেখা অনুযায়ী মালয়েশিয়ায় যাওয়ার ক্ষেত্রে কর্মীদের ১৩টি ধাপ অনুসরণ করতে হবে।
বিএমইটির তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ৭৫ হাজার ৯২৭ জন, ২০১৯ সালে ৫৪৫ জন, ২০২০ সালে ১২৫ জন এবং চলতি বছর মাত্র ১৪ বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় কর্মী হিসেবে গেছেন। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ১০ লাখ ৫৭ হাজার ২১৩ বাংলাদেশি কর্মী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
এনআই/জেডএস