কয়েকদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বাসিন্দারা বলছেন, দিনে কেবল দু-একবার পানি আসে, সারাদিন আর পানি থাকে না। 

রাজধানীর কুড়িল, বিশ্বরোড, ভাটারা নূরের চালা, উত্তর বাড্ডা, মধ্য বাড্ডা, মেরুল ডিআইটি, কালাচাঁদপুর, মিরপুর, আগারগাঁও, রায়েরবাজার এলাকায় পানির এ সমস্যা বেশি বলে জানা গেছে।

ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায়, কিছু কিছু এলাকায় পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে ঢাকায় ৮০০টির বেশি পাম্পের মধ্যে ১০০টির বেশি পাম্পে বোরিং (গভীরে পাইপ বসানো) করাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। 

ওয়াসা বলছে, বোরিং কাজ শেষ হলে পানির সমস্যার সমাধান হবে অনেকটাই। এ ছাড়া, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গন্ধবপুর পানি শোধনাগার চালু হলে ভূগর্ভের পানির ওপর নির্ভরতা অনেকাংশে কমে আসবে।

রাজধানীর বাড্ডার কুমিল্লা পাড়া এলাকায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পানি নেই। এ এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা লাল মিয়া বলেন, বেশ কদিন হয়ে গেল এ এলাকায় পানি নেই। প্রতিদিন দু-এক বার করে পানি আসে। তা দিয়েই সব কাজ করতে হয়। 

তিনি বলেন, পানির অভাবে গত দুই দিন ধরে গোসল করতে পারিনি। বালতি নিয়ে এ বাড়ি-ও বাড়ি ঘুরেও লোকজন কোথাও পানি পাচ্ছে না। রান্না, খাওয়া, গোসল- সবকিছুই ব্যাহত হচ্ছে। পানির অভাবে এলাকার লোকজন খুব সমস্যায় আছে।

ভাটারা এলাকার বাসিন্দা রাজু আহমেদ বলেন, সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আমরা ঠিকমতো পানি পাচ্ছি না। বারবার ওয়াসার আঞ্চলিক কার্যালয়ে অভিযোগ জানিয়েও এর প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। পানির সংকটের কারণে এ এলাকার প্রতিটি বাড়িতে মানুষ খুব কষ্টে আছে। 

তিনি বলেন, বাড়ির মালিকরা ওয়াসার গাড়ি থেকে অতিরিক্ত দামে পানি কিনে ব্যবহার করছেন। কিন্তু এ পানিও একবার আসে, তখন ভাড়াটিয়াদের জন্য একবার ছাড়া হয় পানি। ওই সময়ের মধ্যে আমাদের গোসল, বাথরুমসহ পানির সব কাজ করতে হয়।

ওয়াসার পানির সমস্যায় থাকা রাজধানীর অন্যান্য এলাকার বাসিন্দারাও পানি সংকটের এমন অভিযোগ জানিয়েছেন। তারাও বলছেন, পানির এমন সমস্যার বিষয়ে ওয়াসার বিভিন্ন আঞ্চলিক কার্যালয়সহ হটলাইনে অভিযোগ জানিয়ে কোনো প্রতিকার মেলেনি।

এ বিষয়ে ওয়াসার আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে আমরা বোরিং করে পাম্পগুলোতে আরও পাইপ বসাচ্ছি। এ কাজ শেষ হলে আশা করা যায়, পানির সংকট আর থাকবে না।

ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকটের কারণ হলো পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া। এ ছাড়া বৃষ্টিপাত কম হয়েছে, পাশাপাশি ওয়াসার বেশকটি পাম্প বিকল হয়ে আছে। সব মিলিয়ে কিছু কিছু এলাকায় পানির কিছুটা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। 

তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের ৮০০টিরও বেশি পাম্প রয়েছে। এর মধ্যে ১০০টির বেশি পাম্পে বোরিং করানোর কাজ হচ্ছে। এই কাজ শেষ হলে আশা করা যায় নির্দিষ্ট এলাকাগুলোতে পানির সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এ ছাড়া, আমরা বেশ কিছু নতুন পাম্প বসাতে চাচ্ছি। কিন্তু এর জন্য জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। জায়গা পেলে আমরা আরও কিছু পাম্প বসাব।

ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, তাদের দৈনিক পানির চাহিদা ২৬৫ কোটি লিটার। এর ৬৪ শতাংশ আসে ভূগর্ভের পানি থেকে। পানির স্তর বেশ নিচে চলে যাওয়ায় প্রায় এক হাজার ফুট নিচ থেকে পানি তুলতে হচ্ছে ঢাকা ওয়াসাকে। রূপগঞ্জের গন্ধবপুর পানি শোধনাগার চালু হলে ভূগর্ভের পানির ওপর নির্ভরতা প্রায় ৩০ শতাংশ কমে আসবে।

এএসএস/আরএইচ