মহাখালী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের কাছ থেকে নিজেদের ইচ্ছে মতো ভাড়া নিচ্ছে কাউন্টারগুলো। ভাড়া বাড়ানো খবরে কোনো কোনো রুটে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া নেওয়া অভিযোগ রয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সরকার শনিবার রাতে দূরপাল্লার বাসের ভাড়া বাড়িয়েছে ২২ শতাংশ। মূলত এর পর থেকে ঢাকার বিভিন্ন বাস কাউন্টারে এ ‘নৈরাজ্য’ শুরু হয়েছে। 

যাত্রীদের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছে বাস মালিকরা। ফলে কাউন্টারে এসে টিকিট কাটতে গিয়ে অনেকটা অপ্রস্তুত হতে হচ্ছে যাত্রীদের।

রোববার (০৭ আগস্ট) সকালে মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ বাস কাউন্টার ফাঁকা। মাঝে-মধ্যে যে দু-চারজন যাত্রী আসছেন, তারাও কাউন্টারে টিকিটের দাম শুনে গন্তব্যে যাবেন কি যাবেন না তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েছেন। কারণ বাস মালিকরা রুট অনুসারে নতুন করে সর্বনিম্ন ৬০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বাড়িয়েছে। তবে কোনো কাউন্টারে নতুন ভাড়ার কোনো তালিকা চোখে পড়েনি।  

এই টার্মিনাল থেকে দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল পাটগ্রামের বুড়িমারী থেকে রাজশাহী, বগুড়া, ময়মনসিংহ এবং সিলেট রুটে একতা, এস আর ট্রাভেলস, রাজিব এন্টারপ্রইজ, এস আই এন্টারপ্রাইজ, এনা, আলম এশিয়া এবং সৌখিনসহ আরও বেশ কিছু পরিবহন চলাচল করে। এই পরিবহনগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহগামী এনা পরিবহন সর্বনিম্ন ৬০ টাকা ভাড়া বাড়িয়েছে। আর সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা টিকিটের দাম বাড়িয়েছে এস আর ট্রাভেলস।   

মহাখালী বাস টার্মিনালের কাউন্টারগুলো থেকে বলা হচ্ছে, তেলের দাম বাড়ায় বাস ভাড়া সমন্বয় করা হয়েছে। বাস মালিকরা যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন তারা সে দায়িত্ব পালন করছে।

মহাখালী থেকে বগুড়া হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী একতা পরিবহনের কাউন্টারে ৭০০ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকা। অর্থাৎ ১৫০ টাকা দাম বাড়ানো হয়েছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে একতা পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার বলেন, মহাখালী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দূরত্ব ৩২৮-৩৩০ কিলোমিটার। নতুন করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০ টাকা।

দূরত্ব অনুসারে ভাড়া সর্বোচ্চ ১৩২ টাকা বাড়ার কথা, দেড়শ টাকা ভাড়া বাড়ালেন কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ভাড়া বাড়াইনি। মালিক সমিতি যেভাবে বাড়িয়েছে, আমি সেভাবে টিকিট বিক্রি করছি।

একই পরিবহনের মহাখালী থেকে রাজশাহী রুটের ভাড়া নিচ্ছে ৭২০ টাকা। যা আগে ছিল ৬০০ টাকা। অর্থাৎ ১০০ টাকা বেড়েছে। আর নাটোরের ৫০০ টাকার ভাড়া নিচ্ছে ৬০০ টাকা।

একতা পরিবহনের চালক হাবিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, তেলের দাম বাড়ানোর কারণে বাসের ভাড়া সমন্বয় করা হয়েছে। এখন সব কিছুর দাম বাড়ছে। কীভাবে চলবো সেই চিন্তা ঘুম হয় না।

ঢাকা থেকে পাটগ্রাম হয়ে বুড়িমারী যায় এস আর ট্রাভেলস। এই পরিবহনটি ঢাকা থেকে বুড়িমারীর যাত্রীদের কাছ থেকে ২৫০ টাকা করে বেশি ভাড়া নিচ্ছে।

পরিবহনটির কাউন্টার মাস্টার অনিক চক্রবর্তী বলেন, শুক্রবার বুড়িমারীর টিকিটের মূল্য ছিল ৮৫০ টাকা। আজ থেকে এই টিকিট বিক্রি করছি ১১০০ টাকা। ২৫০ টাকা দাম বেড়েছে।

একই বাসে করে বগুড়ার যাবেন আহনাফ নামের এক যাত্রী। তিনি টিকিট কিনেছেন ৫৫০ টাকা দিয়ে। শুক্রবারও বিক্রি হয়েছে ৪৫০ টাকায়। অর্থাৎ দুদিনের ব্যবধানে টিকিট প্রতি ১০০ টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে তাকে।

বগুড়ার যাত্রী আহনাফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকার যা বাড়িয়েছে তার চেয়ে দ্বিগুণ বেশি নিচ্ছে বাস মালিকরা। আমাদের ফকির বানাচ্ছে। এটা মেনে নেওয়ার মতো না।
জামালপুরগামী রাজিব পরিবহন যাত্রী মনোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগের তুলায় ভাড়া ১০০ টাকা বেশি নিচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজিব পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার সুজন মিয়া বলেন, সরকার এবং মালিক সমিতি আলোচনার ভিত্তিতে বাসে ভাড়া বাড়িয়েছে।

সরকার নির্ধারিত তালিকা কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, তালিকা এখনও করা হয়নি। তবে আমাদের সমিতি থেকে ভাড়া বাড়নোর কথা বলা হয়েছে। সেই অনুয়ায়ী ভাড়া নিচ্ছি।

মহাখালী থেকে সিলেটের হবিগঞ্জের যাত্রী সামসুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১০০ টাকা বেড়েছে, আগের টিকিটির মূল্য ছিল ৩৫০টাকা। আজকে সেই টিকিট কিনেছি ৪৫০ টাকা দিয়ে।

তিনি বলেন, বাসের ভাড়া বাড়াটা খুব কষ্টজনক। মানুষের ইনকামের চেয়ে খরচ অনেক বেশি হয়ে গেছে। কিছুই বলা নেই।

তবে সিলেটগামী এনা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১০০ টাকা নয়, ৬০ টাকা বেড়েছে। এ ভাড়া তো আমরা বাড়াইনি, সরকার নির্ধারণ করেছে। আমাদের কিছু করার নেই।

কাউন্টারের সামনে অপেক্ষমান সিলেটগামী যাত্রী সুমন পাটোয়ারী বলেন, এনা ট্রান্সপোটে করে সিলেটে যাবো। আগে ভাড়া ছিল ৫৭০ টাকা। এখন নিচ্ছে ভাড়া ৬৮০ টাকা। ১১০ টাকা বেশি নিচ্ছে। ইচ্ছে না থাকা সত্বেও বেশি দাম দিয়ে যেতে হচ্ছে।

ময়মনসিংহগামী এনা পরিবহনের যাত্রী সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুদিন আগে ২৬০ টাকা টিকিট কেটে এসেছি। আজকে বলছে, ৩২০ টাকা। বাড়ি যেতে হবেই, তাই বাধ্য হয়ে ৬০ টাকা বেশি দিয়ে টিকিট কাটলাম।

সিরাজগঞ্জগামী এস আই এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার আজিজুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখনো তালিকা হাতে পাইনি। আগের ভাড়া ছিল ৩০০-৩২০ টাকা। এখন ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা নিচ্ছি।

উল্লেখ্য, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ৬ আগস্ট সারা দেশে বাস ও মিনিবাসের জন্য নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দূরপাল্লার পথে ভাড়া ২২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলরত গণপরিবহনে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ১৬ দশমিক ২২ শতাংশ। এর ফলে মহানগরে প্রতি কিলোমিটারে বাস ও মিনিবাসে ভাড়া ৩৫ পয়সা এবং দূরপাল্লায় বাসভাড়া বাড়ল ৪০ পয়সা। আজ থেকেই কার্যকর।

এর আগে গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ডিজেলের দাম প্রতি লিটার ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া পেট্রোলের দাম প্রতি লিটারে ৫১ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়ে ১৩০ টাকা, অকটেনের দাম ৫১ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেড়ে প্রতি লিটার ১৩৫ টাকা হয়েছে।

এমআই/এসএম