ভাড়ায় বাড়বে জনদুর্ভোগ, সংকটে পড়বে পরিবহন খাত
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে আসবে মনে করছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, পরিবহন ব্যয় দ্বিগুণ হওয়ার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের বাইরে চলে যাবে। পরিবহন খাতে অস্থিরতা দেখা দেবে।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গে শনিবার (৬ আগস্ট) ঢাকা পোস্টের কাছে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে প্রায় ৫০ শতাংশের কাছাকাছির বাড়ানো ফলে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হবে। ফলে আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়বে। প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অনেক ছোট ছোট শিল্প-কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। এতে একদিকে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির মধ্যে দিয়ে জাতীয় অর্থনীতি ওপর চাপ আরও বাড়বে। অন্যদিকে বেকারত্ব সমস্যা আরও প্রকট হবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে সাধারণত তেলের দাম যে পরিমাণ বাড়ে তার থেকে কয়েকগুণ বেশি বাড়ে বাস ও অন্যান্য গণপরিবহন ভাড়া। পণ্য পরিবহন ভাড়াও ইচ্ছেমত বাড়িয়ে দেয় ট্রাক-কভার্ডভ্যান মালিকেরা।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সরকার ও পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা একচেটিয়াভাবে ভাড়া যে পরিমাণ বাড়ায় গণপরিবহনের তার কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া আদায় করে। সরকার নির্ধারিত ভাড়া গণপরিবহনে আদায় হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা বা বর্ধিত ভাড়া আদায় বন্ধে তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
এদিকে শনিবার এক বিবৃতিতে জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সংগঠনটি বলছে, আইএমএফের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও গণবিরোধী। অনতিবিলম্বে বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করে, পূর্বের মূল্য বহাল করতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার গত নভেম্বরে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম এক লাফে ১৫ টাকা বৃদ্ধি করেছিল। তখন দাম নির্ধারণ করা হয় ৮০ টাকা লিটার। ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর বাস ভাড়া বাড়ানো হয় প্রায় ২৭ শতাংশ, লঞ্চ ভাড়া বাড়ানো হয় ৩৫ শতাংশ যা তেলের দাম বাড়ানো হারের চেয়ে অনেক বেশি।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, বিশ্ববাজারে বর্তমানে তেলের বাজার নিম্নমুখী। এই সময়ে বাজার পর্যবেক্ষণ না করে, কেবল আইএমএফের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও গণবিরোধী। অনতিবিলম্বে বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করে, পূর্বের মূল্য বহাল রাখার দাবি জানান তিনি।
জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আজ বিকেল ৩টায় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধনের আয়োজন করেছে। প্রতিবাদ সভায় দেশের ভুক্তভোগী সকল নাগরিকদের অংশগ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা থেকে ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রোলের পুনর্নির্ধারিত দাম কার্যকর হয়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা মূল্য লিটারপ্রতি ডিজেল ও কেরোসিন ১১৪ টাকা, লিটারপ্রতি অকটেন ১৩৫ টাকা ও লিটারপ্রতি পেট্রোল ১৩০ টাকা করা হয়। এতদিন কেরোসিন ও ডিজেল প্রতি লিটার ৮০ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা প্রতি লিটার ও পেট্রোল ৮৬ টাকা প্রতি লিটারে বিক্রি হচ্ছিল।
জেইউ/ওএফ