ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ শহর রাজধানী ঢাকা। শহর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দিনে প্রায় ১০০টির বেশি ট্রেন চলাচল করে। ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের উপর দিয়ে রয়েছে রেললাইন। ট্রেন থেকে নিরাপদে রাখতে সেসবের বেশিরভাগ সড়কে থাকা যানবাহন ও জনগণকে নিরাপদে রাখতে রেলগেটের ব্যবস্থা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। 

রেলগেটগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকে গেটকিপার। কখন ট্রেন আসছে এবং যাচ্ছে সেই তথ্য গেটকিপারকে জানানোর জন্য রয়েছে টেলিফোন, শব্দ সিগন্যাল এবং আলোক নির্দেশক। তবে এসব সিগন্যালের মধ্যে শুধুমাত্র ‘ক্রিং ক্রিং’ শব্দের সিগন্যালটিই সচল আছে। দিনের পর দিন টেলিফোন এবং আলোক নির্দেশক অচল থাকলেও সে বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

সোমবার (১ আগস্ট) রাজধানীর নাখালপাড়া রেলগেট এবং মহাখালী রেলগেট পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, রেলগেটে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে থাকা গেট বেরিয়ারগুলো নষ্ট। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টেনে সেগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া টেলিফোন লাইনও নষ্ট। ট্রেন আসার সময় জানান দিতে আলোক নির্দেশকটিও নষ্ট দীর্ঘ দিন ধরে। যার ফলে শব্দ সিগন্যালই একমাত্র ভরসা গেট কিপারদের।

গেটকিপারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ট্রেন আসার দুই থেকে তিন মিনিট আগে থেকেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে শব্দ ও আলোক সিগন্যাল জ্বলে ওঠার কথা। আর জরুরি প্রয়োজনে টেলিফোন ব্যবহার করা হয়। সিগন্যাল বেজে উঠলেই গেট বেরিয়ার ফেলে যানবাহন চলাচল আটকে দেওয়ার নিয়ম আছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ থেকে। তবে গেট বেরিয়ার আগে ফেললে ওই পথের চলাচলকারীরা অস্থির হয়ে যান। যেন দুই মিনিট সময় তাদের সহ্য হয় না। অনেকে গালাগাল পর্যন্ত করেন। অনেক সময় স্থানীয়রা নিজ দায়িত্বে বেরিয়ার উঠিয়ে রেলক্রসিং পার হন। এতে ব্যাপক ঝুঁকি থাকে।

রেলগেটগুলো ঘুরেও এমন তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়। নাখালপাড়া রেলগেটে দেখা গেছে, ওই রেলগেটটির সড়ক পথ প্রায় ১৫ ফুটের। তবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের জন্য রাস্তাটি বড় করে প্রায় ২৫ ফুটের মতো করা হয়েছে। কিন্তু ওই গেট বেরিয়ারের দৈর্ঘ্য ১৫ ফুটই আছে। পরে আর বাড়ানো হয়নি। যার ফলে গেট বেরিয়ার ফেললেও অন্য পাশ দিয়ে সহসাই চলাচল করতে পারে যানবাহন ও পথচারীরা। এতে করে কিছুই করার থাকে না ওই রেলগেটে থাকা গেট কিপারের। বেশিরভাগ সময় বাঁশি বাজিয়ে এবং অনুরোধ করে থামাতে হয় যানবাহনগুলোকে।

আরও পড়ুন : সিগন্যাল-ব্যারিকেড দিয়েও আটকানো যায় না গাড়ি-মানুষজন

ওই রেলগেটে থাকা গেটকিপার সোহাগ শরীফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই গেটে কখন রেল আসবে বা যাবে তার জন্য শব্দ সিগন্যাল, আলোক নির্দেশক এবং টেলিফোনের ব্যবস্থা আছে। তবে টেলিফোন এবং আলোক নির্দেশক দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। শুধুমাত্র শব্দ সিগন্যালটাই কাজ করে। তবে কোনো কোনো সময় সেটিও কাজ করে না। যার ফলে বেশিরভাগ সময় রেললাইনের উপরই দাঁড়িয়ে ডিউটি করতে হয়। শব্দ বেজে উঠলেই রেললাইনে গিয়ে দেখতে হয় কোন দিক থেকে ট্রেন আসছে।

তিনি আরও বলেন, দূর থেকে ট্রেনের দেখা পেলেই আমরা রেলগেটের বেরিয়ার ফেলে দেই। বেরিয়ার নামানো থেকে ট্রেন যাওয়া পর্যন্ত দুই থেকে তিন মিনিটের বিষয়। তবে পথচারীরা এবং গাড়ি চালকরা এটিও মানতে চান না। স্থানীয়রা গেট বেরিয়ার উঠিয়েই যাতায়াত করেন। অনেকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল পর্যন্ত করেন। আমাদের সতর্ক করা ছাড়া আর নিরুপায় হয়ে বসে থাকা ছাড়া কিছুই করার থাকে না।

মহাখালী রেলগেট ঘুরে দেখা যায়, সেখানে চারটি সড়কের জন্য মোট ৮টি বেরিয়ার থাকার কথা। কিন্তু ৮টির মধ্যে ৫টি বেরিয়ার আছে। বাকিগুলো ভেঙে গেছে, যা ঠিক করা হয়নি এখনও। এই গেটেও শুধুমাত্র শব্দের সিগন্যাল ছাড়া আর কোন কিছুই সচল নেই।

আরও পড়ুন : নেই রেলগেট, ঝুঁকি নিয়ে পথচারীদের লাইন পারাপার

মহাখালী রেলগেটের একটি গেটের দায়িত্বে থাকা মো. মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই রেলগেটটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সব সময় সতর্ক থাকতে হয় কখন ট্রেন আসল এটি ভেবে। দিনে ১০০টির বেশি ট্রেন চলাচল করে এই পথ দিয়ে। এখানে শুধুমাত্র শব্দ সিগন্যালটি সচল আছে। আর বাকি সিগন্যালগুলো নষ্ট। বৃষ্টি হলে বা কোন ঝামেলা হলে এই সিগন্যালটিও কাজ করে না। যার ফলে অনেকটা আতঙ্কের মধ্যেই থাকতে হয়।

তিনি আরও বলেন, এই সিগন্যাল সবচেয়ে বেশি ঝামেলা করে বাস এবং মোটরসাইকেল। বাসগুলো অনেক সময় রেললাইনের উপর দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করায়। আর মোটরসাইকেল চালকরা গেট বেরিয়ার তুলেই চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। আমরা বললে অনেক সময় তারা বকাঝকা করে। তারপরে আমাদের চুপ থাকা ছাড়া কিছুই করার থাকে না।

এমএইচএন/আইএসএইচ