বিদেশে ছিলাম বলে বেঁচে গিয়েছিলাম, সেই বাঁচাটা যে কী কষ্টের!
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে সব চেয়ে কলঙ্কময় একটি দিন। ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিয়েছিল বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের ঠিকানা। বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্র যিনি সৃষ্টি করেছিলেন, যিনি বাংলাদেশের শোষিত-বঞ্চিত, দুঃখী মানুষের জীবনে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন, শোষণ-বঞ্চনা থেকে এ দেশের মানুষকে মুক্তি দিয়ে একটি উন্নত জীবন দিতে চেয়েছিলেন, নিজের জীবনকে তিনি উৎসর্গ করেছিলেন, সেই মহান নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
আসন্ন জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আজ (সোমবার) কৃষক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন অনুষ্ঠানে।
বিজ্ঞাপন
• আরও পড়ুন : আওয়ামী লীগের আগে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা কী করেছে?
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ১৫ আগস্ট একই সাথে হত্যা করা হয় আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে, যিনি জীবনের সব চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে সারা জীবন স্বামীর পাশে থেকে তাকে প্রেরণা দিয়েছেন। সংসারের সকল দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন, আমার বাবার অবর্তমানে সংগঠন পরিচালনা করেছেন, আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনা করেছেন। তাকেও ঘাতকের দল নির্মমভাবে হত্যা করে। আমার ছোট তিন ভাই... ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, মুক্তিযোদ্ধা, কামালের নববধূ সুলতানা কামাল। আরেক ভাই মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, শেখ জামালের স্ত্রী পারভীন জামান রোজি... ছোট্ট রাসেল ১০ বছরের, তাকেও নির্মমভাবে হত্যা করে। আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ আগস্ট আমি আর রেহানা বিদেশে ছিলাম। তাই হয়তো ঘাতকের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলাম। সেই বাঁচাটা যে কী কষ্টের বাঁচা। বিদেশের মাটিতে রেফুজি হিসেবেই থাকতে হয়েছিল। নিজেদের নাম পরিচয়টাও দিতে পারিনি, সেটা নিরাপত্তার কারণে। যে দেশে ছিলাম তাদেরই অনুরোধে। নামই গোপন করতে হয়েছিল।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের বিজয়। একজন মানুষ তার জীবনের সব কিছু ত্যাগ করে একটি জাতির জন্য কতো আত্মত্যাগ করতে পারে। আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কলকাতায় পড়াশোনা করেছেন। আমার দাদা তার পড়াশোনার খরচ দিয়েছেন। সেখানে থেকে রাজনীতি করেছেন। হয়তো তিনি বড় চাকরি করতে পারতেন। কিন্তু সেদিকে এতটুকু তার মন ছিল না। মন ছিল বাংলাদেশের মানুষের প্রতি।
• আরও পড়ুন : তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ কর্মশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে সরকার
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন আমরা পাই, আবার দেশে খাদ্য ঘাটতি। দেশে খাদ্য ঘাটতি রেখে বাঙালি জাতিকে ভিক্ষুক হিসেবে বিশ্ব পরিচয় করানো এবং ভিক্ষা চেয়ে নিয়ে আসা! আসলেই ভিক্ষা চাওয়া না, এটাও একটা ব্যবসা। খাদ্য কিনবে, ব্যবসা করবে এবং কমিশন খাবে। এটাই ছিল বিএনপি। অস্ত্র, চোরাকারবারির সাথে তারা সম্পূর্ণ জড়িত। এটাতো বিএনপির এক নেতার বক্তব্যে আছে। গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে ওই সমস্ত কাজ করানো হতো। ১০ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়েছে, একটা চালান ধরা পড়েছে। এরকম কত চালান এদেশে এসেছে এবং গেছে!
ধানমন্ডি প্রান্তে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ্র চন্দ। কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ।
এইউএ/এনএফ